ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জেলহত্যা দিবস

স্মৃতিচিহ্নগুলো যেন স্তব্ধ করে দেয়....!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
স্মৃতিচিহ্নগুলো যেন স্তব্ধ করে দেয়....! ছবি: শাকিল আহমেদ/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বুলেটের আঘাতে খানিকটা গভীর খাদ হয়ে গেছে কারাগারের রডগুলো। বোঝার জন্য গভীর খাদগুলো লাল রং করে দেওয়া হয়েছে।

সেই দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আছে তিন তরুণ।  

এক তরুণের প্রশ্ন, ‘এখানেই কি হত্যা করা হয়েছিলো তাদের?’। ‘হুম। দেখছিস না পাশেই তো লেখা রয়েছে ঘাতকদের বুলেটের চিহ্ন’ পাশের তরুণের উত্তর। তৃতীয়জন বলে উঠলো, ‘কি অপরাধ ছিলো তাদের যে এভাবে গুলি করেছিল?’
ঘটনাটি বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সকালে কারাগারের ভেতরে চার নেতা স্মৃতি জাদুঘরের। এর প্রথম কক্ষের গেটের রডগুলোতে এ চিহ্নগুলো  দেখে নিজেদের মধ্যে কথপোকথন করছিলেন কলেজ পড়ুয়া তিন তরুণ।  

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পর আজ তারা দেখতে এসেছেন কলঙ্কময় সেই দিনগুলির স্মৃতিচিহ্ন। যা দেখে তাদের মনে এমন প্রশ্নের উদয়। কিন্তু এ প্রশ্নের জবাব কি? কেনো হত্যা করা হয়েছিলো দেশের জন্য লড়াই করা এই চার নেতাদের? 

জবাব একটাই, ‘নীতির সঙ্গে আপোস করেননি তারা। দেশের জন্য রক্ত ঝরাতে প্রস্তুত ছিলেন তারা। আজ সেই ভয়াল ৩ নভেম্বর। বাঙালির ইতিহাসের কলঙ্কের একটি দিন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে দেশকে রক্ষার আপোসহীনতার অপরাধে বর্বরের মতো হত্যা করা হয়েছিল জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে।  

সাবেক ডিআইজির মুখে সে রাতের বর্ণনা
 

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে স্মৃতিচারণ এক অনুষ্ঠানে সেই রাতের বর্ণনা করলেন তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন) আবদুল আউয়ালের ছেলে কাজী হাবিবুল আওয়াল। জানালেন বাবার মুখে শোনা সেই ভয়ঙ্কর রাতের কথা।

‘ক্যাপ্টেন মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল সেনাসদস্য বাবার কাছে এসে এই চার জনকে খুঁজতে থাকেন। বলেছিলেন এই চারজন আছেন কিনা? বাবা উত্তর দিয়েছিলেন আছেন। কিন্তু কেনো তাদের খোঁজা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবার তাদের উত্তর ছিলো, ‘আমরা তাদের শ্যুট করবো’।

বাবার মুখে যখন এই কথা শুনছিলাম তখন শিউরে উঠেছিলাম, বললেন হাবিবুল আওয়াল।

তিনি আরও বলেন, সেনাসদস্যের কাছ থেকে এ কথা শোনার পর বাবা অনেক চেষ্টা করেছিলেন  উচ্চপদস্থদের সঙ্গে যোগাযোগ করার। কিন্তু পারেননি। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গে যোগাযোগ হলো বাবার। কিন্তু তিনি নাকি বলেছিলেন, “ওরা যখন শ্যুট করতেই চায় তখন আমাদের আর কিছু করার নেই। ” 

‘মোস্তাকের কাছ থেকে এমন কথা শোনার পর বাবা বুঝে গিয়েছিলেন এ হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বাবা বলেছিলেন প্রথম দলটি গুলি করে ফিরে যাবার পর আরেকটি দল এসে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। , যোগ করেন তিনি।
ঘটনার পরদিনই ৪ নভেম্বর ডিআইজি প্রিজন আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ক্যাপ্টেন মোসলেহ উদ্দিনের নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মামলা এগুতে দেওয়া হয়নি।

২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালত রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে পলাতক আসামি ক্যাপ্টেন মোসলেহ উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী শাহ ও দফাদার মো. আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সাবেক মন্ত্রী কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুরকে খালাস দেওয়া হয়। এরপর বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। চলতি বছর আপিল বিভাগের রায়ের মাধ্যমে এর বিচারকাজ শেষ হয়।

কারাগারের এ প্রদর্শনী চোখ খুলে দেবে নতুন প্রজন্মের
 

কেন্দ্রীয় কারাগারের ঠিকানা বদলের পর সেচ্ছাসেবক সংগঠন জার্নির উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আয়োজিত হয়েছে ৫দিনব্যাপী আলোকচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, কারা জাদুঘর প্রদর্শনীর। আয়োজনটি উন্মুক্ত করা হয়েছে জনসাধারণের জন্য। এ ধরনের উদ্যোগের ফলে নতুন প্রজন্ম জানছে ইতিহাস, দেখছে সেই মহান নেতাদের রেখে যাওয়া স্মৃতি। যা তাদেরকে দেশের দৃঢ় প্রত্যয়ী হতে সাহায্য করবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
জেডএফ/আরএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।