ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জন দুর্ভোগের সব উপাদান তো সড়কে!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০১৬
জন দুর্ভোগের সব উপাদান তো সড়কে! ছবি: দীপু মালাকার-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টা। ২৯ টয়েনবি সার্কুলার রোড, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল।

রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকার এ সড়কটির ফুটপাতে স্ট্যান্ডে দাঁড় করানো হলুদ সাইনবোর্ডে পরিষ্কার বাংলায় লেখা, ‘পার্কিং নিষেধ’’।
 
তো কী হয়েছে? ‘পার্কিং নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ডের গা ঘেঁষে সাদা রংয়ের একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ি চালক শহীদুল ইসলাম জানালা খুলে মনের আনন্দে বাতাস খাচ্ছেন। অথচ পাশের ভবনের বেজমেন্টে রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের সু-ব্যবস্থা।  
 
শুধু শহীদুল ইসলামের গাড়িটিই নয়, ২৯ টয়েনবি সার্কুলার রোড থেকে শাপলা চত্বর পর্যন্ত শত শত গাড়ি রাস্তার ওপর পার্কিং করা। যদিও রাজধানীর প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলের এ আধা কিলোমিটার সড়কের কিছু দূর পর পর অসংখ্য সাইনবোর্ড পার্কিং করা গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে আছে- যেগুলোতে স্পষ্ট বাংলায় লেখা ‘পার্কিং নিষেধ’।  
 
বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পযর্ন্ত-এ দুই ঘণ্টা সাধারণত অফিস ফেরত মানুষের ভিড় থাকে রাস্তায়। কিন্তু অর্ধদিবস কর্মঘণ্টা হওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) বিকেল ৪টার পর মতিঝিলে মানুষের ভিড় ছিল কম। খুব একটা যানজট ছিল না। রাস্তা ছিল মোটামুটি ফাঁকা।
 
তবে মতিঝিলের সব সড়কেই জনদুর্ভোগের অন্যতম অনুষঙ্গ চোখ এড়ায়নি। এ এলাকার সড়কগুলো প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে ছিল গাড়ির অবৈধ পার্কিং, এলোপাথাড়িভাবে রাখা রিকশার সারি, ভ্যান গাড়ির ওপর ফলের দোকান, ফুটপথে বিছানো রকমারি পোশাকের পসরা, রাস্তায় ডাবের স্তুপ, মূল সড়কে জড়ো করে রাখা পানি ও তেলের ড্রাম, সর্ব রোগের ওষুধে সাজানো কবিরাজীর অস্থায়ী ছাউনি ঘর!
 
ফলে যান চলাচল ও পথচারীর হাঁটার জন্য যে সড়ক ও ফুটপথ, তার ৫০ ভাগই বেদখল! জনদুর্ভোগের জন্য আর কী চাই?
 
দৈনিক বাংলা মোড় থেকে শাপলা চত্বরে যাওয়ার সময় ৭৯ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকায় রীতিমত ‘কারওয়ান বাজার’ এসে হাজির। সড়কের বড় অংশ জুড়ে বসেছে কাঁচাবাজার।
 
আলু, মরিচ, টমেটো, বেগুন, ফুল কপি, কাঁচা কলা, পটল, কচুর লতি, কচু, মিষ্টি কুমড়া, উস্তা, করলাসহ মৌসুমী শাক-সবজির বড় বড় দোকান সড়কের পাশ থেকে মাঝখান পযর্ন্ত গড়িয়ে পড়েছে।  
 
শুধু কী তাই? বড় বড় খাঁচা ভরে দেশি-বিদেশি মুরগি সড়কের একেবারে মাঝখানে নিয়ে রাখা হয়েছে। এক মহিলা তো চারটি আস্ত মুরগি সড়কের উপরই জবাই করে পরিষ্কারের জন্য বসে গেছেন। কাস্টমারের জন্য এই সেবাটুকু রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায় তিনি দিয়ে যাচ্ছেন কোনো বাধ-বিঘ্ন ছাড়াই!
 
শুক্রবার অর্থাৎ সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া বাকি ৬দিনই মতিঝিলের এই সড়কে কাঁচা বাজার বসে। মতিঝিলে জনদুর্ভোগ উৎপাদনে অস্থায়ী এই কাঁচা বাজারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে!
 
গণপরিবহনের চালকরাও কম যান না। বৃহস্পতিবার বিকেলে অপেক্ষাকৃত ফাঁকা রাস্তায় শৃ্ঙ্খলা মেনে চললে কোনো যানজট হতো না। কিন্তু অভ্যাসগত কারণে ফাঁকা রাস্তায়ও এলোমেলোভাবে গাড়ি রেখে কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি করছেন তারা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে যাত্রীদের অবিবেচনা প্রসূত আচরণ আধা ছুটির দিনেও যানজটের সৃষ্টি করছে।  
 
সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে ইত্তেফাক মোড় থেকে আসা একটি গাড়ি শাপলা চত্বরে আড়া-আড়িভাবে দাঁড়ায়। ফলে কিছুক্ষণের জন্য  এ স্থানে দেখা দেয় তীব্র যানজট!
 
মিরপুর যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় থাকা নুরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে সৃষ্ট যানজট যতটা না গাড়ির চাপে, তার চেয়েও বেশি গাড়ি চালকের খাম-খেয়ালিপনা ও নিয়ম না মানার অভ্যাসের কারণে।
 
সন্ধ্যা ৬টায় এক পসলা বৃষ্টি মতিঝিল এলাকায় জনদুর্ভোগ অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু এটি প্রাকৃতিক ও ক্ষণস্থায়ী। তবে মানুষ্যসৃষ্ট স্থায়ী জনদুর্ভোগ-ই মতিঝিলের গলার কাটা হিসেবে দেখছেন সবাই।  
 
বাংলাদেশ সময়: ২১০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৬
এজেড/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।