ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘সিটিং’ বাসে চলছে ‘চিটিং’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০১৬
‘সিটিং’ বাসে চলছে ‘চিটিং’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: “সারাদিন চলে লোকাল হয়ে, কেবল অফিস টাইমেই বাসগুলো হয়ে যায় সিটিং। কিন্তু সিটিং কেবল নামে, আসলে তারা যাত্রীদের সঙ্গে চিটিং (প্রতারণা) করে দাঁড়ানো যাত্রী নেয়, কিন্তু ভাড়া নেয় সিটিংয়েরই।

কেউ এর বিরুদ্ধে বলতে গেলে তাকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ”

যাত্রীকে জিম্মি করে রাজধানীর গণপরিবহনগুলোর এমন স্বেচ্ছাচারি আচরণের কথা এভাবেই বলছিলেন ওহিদুজ্জামান। তার সঙ্গে কথা হচ্ছিল মোহাম্মদপুর থেকে ধূপখোলা-লোহারপুল রুটে চলাচলকারী সিটিং সার্ভিস মালঞ্চ পরিবহনে।

ওহিদুজ্জামান একেবারে ক্ষোভ ঝেড়েই বলেন, মধ্যবিত্ত নগরবাসীকে একপ্রকার জিম্মি করে ব্যবসা করছেন পরিবহন মালিকরা। তারা বাসে ট্যাগ লাগাচ্ছেন সিটিং। কিন্তু চালক-হেলপারদের বলে দিচ্ছেন লোকালের মতো যাত্রী টানার জন্য। গাড়ি চলাচলে কোনো নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা করছেন না তারা। করবেন কেন? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরই তো এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। তারা যে সব ব্যক্তিগত বা সরকারি গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন।

ওহিদুজ্জামান মৎস্য ভবন এলাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। থাকেন মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায়। সেজন্য তাকে নিয়মিতই মালঞ্চ ও একইরুটে চলাচলকারী রংধনু পরিবহনে চলাচল করতে হয়।

তিনি মালঞ্চ সম্পর্কে বলেন, এই বাসে মোহাম্মদপুর থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত ২৫ টাকা ভাড়া রাখা হয়। কিন্তু প্রতিটি স্পটেই বাস থামে। অথচ বলা হয় সিটিং গাড়ি।  

তার সঙ্গে আলাপের সময়ই কয়েকজন যাত্রী হেলপারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। বাসে উঠে সিট না পেয়ে যাত্রীরা হেলপারের উদ্দেশে বলে ওঠেন, “ভাড়া কিন্তু লোকাল পাবি। একটাকাও বেশি দেবো না। ” কিছু দূর যাওয়ার পর হেলপার সুমন বলেন, “ভাই ভাল না লাগলে নেমে যান, তাও ভাড়া কম দিতে পারবেন না। ” 
ওহিদুজ্জামান অভিযোগ করেন, রাজধানীর প্রায় প্রতিটি রুটেরই চিত্র এমন। মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ থেকে ধুপখোলাগামী রংধনু পরিবহন নভেম্বরের আগেও ছিল লোকাল। এক নভেম্বর থেকে সিটিং সার্ভিস চালু করেছে। সিটিং সার্ভিস চালুর আগে শাহবাগ পর্যন্ত ভাড়া ছিল ১০ টাকা, মৎস্য ভবন পর্যন্ত ১৫ টাকা। এখন শাহবাগ পর্যন্ত ২০ টাকা, শাহবাগ পার হলেই ২৫ টাকা।  
 
তিনি বলেন, ভাড়া বেশি নিলেও আগের মতোই প্রতিটি স্পট থেকেই যাত্রী ওঠানামা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এছাড়া বাসের ভেতরে বসার সিটও ব্যবহার অনুপযোগী।  

এই বাসের নিয়মিত যাত্রী রায়হান বলেন, “আমার অফিস মৎস্য ভবন এলাকায় হওয়ায় শিয়া মসজিদ মোড় থেকে প্রতিদিন এই বাসে চলাচল করি। আগেও যেমন ঠাসাঠাসি করে যেতাম, এখনও তেমনি যেতে হয়। কিন্তু ভাড়া আগের চাইতে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। কী করার আছে আমাদের তো যেতে হবে। এই রুটে বিকল্প কোনো গাড়ি না থাকায় রংধনুতেই যেতে হবে। ”
 
ওহিদুজ্জামান ও রায়হানরা জানান, মতিঝিলগামী এমন আরও কিছু সিটিং সার্ভিস চালু আছে, যেমন ওয়েলকাম, স্বজন, ল্যামস পরিবহন। এসব গাড়ি সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে, শুধু সিটিংয়ের কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই।

তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসব অনিয়ম দেখার যেন কেউ নেই। প্রতিদিন নিরুপায় হয়ে জিম্মির মতো যাত্রীরা ছুটে চলছেন রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৬
এসএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।