ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আহ! আমাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৬
আহ! আমাদের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ছবি: কাশেম হারুন- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বোম্বে সুইটসের সুস্বাদু পটেটো চিপস খেয়ে মূল্যবান প্যাকেটটা কোথায় ফেলবেন? জনপ্রিয় প্রাণ চানাচুর অথবা রুচি ডালভাজা খেয়ে নিশ্চই দামি প্যাকেটটা যেন-তেন জায়গায় ফেলতে চাইবেন না আপনি! একটু ভাল জায়গায়-ই তো ফেলতে হবে!

যেখানে স্বদেশিরা তো বটেই, বিদেশিরাও অনায়াসে দেখতে পাবেন। তাহলে আর দেরি কেন দৌড়ে চলে যান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে।

কর্তৃপক্ষ আপনার জন্য বিশাল ক্যানভাসের ব্যবস্থা করে রেখেছেন। টার্মিনাল-১, টার্মিনাল-২, ক্যানোপি-১, ক্যানোপি-২’র সামনে বিস্তৃত কারপার্কিং এরিয়ায় ফেলে আসুন।

দিনের পর দিন, সপ্তাহর পর সপ্তা, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এমনকি যুগের পর যুগ কেটে যাবে, আপনার মহামূল্যবান চিপসের প্যাকেট, চানাচুরের ঠোঙ্গা, ডাল ভাজার ফুডগ্রেড সিলভার মোড়ক সেখান থেকে সরবে না।
চাইলে পানির বোতল, ছেড়া স্যান্ডেল, নেটের ব্যাগ, পা-রুটির ঠোঙ্গা, পাটের রশি, পলিথিনে মোড়ানো পচা ডাল, বিরিয়ানীর প্যাকেট, কোকের বোতল, ভাঙা কার্টুন, ছেড়া বেডসিট, গাড়ির পুরনো টায়ার, পোড়া মবিল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের ছেড়া ফোমও রেখে আসতে পারেন দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর হয়রত শাহ জালালালে!

এতে আর কিছু না হোক, অন্তত সোনার বাংলা দেখতে আসা বিদেশি পযর্টকরা আমাদের খাদ্যাভাস, কোমল পানীয়’র ব্রান্ড, চানাচুর-ডালভাজার মোড়ক, স্যান্ডেলের ডিজাইন, বেডে সিটের কালার, ফখরুদ্দিন ও হাজির বিরিয়ানির প্যাকেট সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা পাবে। পাশাপাশি আমাদের রুচিজ্ঞান, সভ্যতা-ভব্যতা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সর্বপরি জাতি হিসেবে আমরা কতোটা ঊচ্চমার্গের- সে সম্পর্কে একটা ধারণা তারা পেয়ে যাবেন!
 
প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগে ঢাকার প্রধান প্রধান সড়ক, লেন, আলি-গলি সিটি করপোরেশনের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা এসে ঝাড়ু দিয়ে যান। পর মূহুর্তেই বর্জবাহী গাড়ি এসে ময়লাগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আসে। ফলে দেড় কোটি মানুষের এই ঢাকা শহরের সড়কগুলোতে খুব একটা ময়লা জমে না।

কিন্তু কোনো অদৃষ্টের ফ্যারে শহরের প্রধান প্রধান স্থাপনা, পার্ক, উদ্যান, ময়দান, খেলার মাঠ, ঐতিহাসিক স্থান-সব সময় থাকে আবর্জনার স্তুপে ঢাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এ স্থাপনার মধ্যে অন্যতম।

যে বিমান বন্দরের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য শত শত নিরাপত্তা কর্মী ও কর্মকর্তাদের এতোসব ততপরতা- দৌঁড়ঝাপ। যেখানে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান। বাঘা বাঘা কর্মকর্তাদের অবস্থান। রক্ষণাবেক্ষনে কোটি কোটি টাকা ব্যয়, সেখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য কি এক টাকাও বরাদ্দ নেই!

নাকি সবই আছে-কেবল ‘সরকারের মাল, দরিয়ায় ঢাল’ নীতির কারণে ‘অসচেতন’ মানুষের ফেলে যাওয়া পানির বোতল, ছেড়া স্যান্ডেল, নেটের ব্যাগ, পা-রুটির ঠোঙ্গা, পাটের রশি, পলিথিনে মোড়ানো পচা ডাল, বিরিয়ানীর প্যাকেট, কোকের বোতল, ভাঙা কার্টুন, ছেড়া বেডসিট, গাড়ির পুরনো টায়ার, পোড়া মবিল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের ছেড়া ফোম হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের বুক থেকে সরানো হচ্ছে না?

বিমান বন্দরের আগমন ও বহির্গমন পথে কয়েক যুগের পুরনো ময়লা জমে থাকবে, কর্তৃপক্ষ সেগুলো সরানোর কোনো উদ্যোগ নেবে না- এমনটি ভাবা যায়? অথবা দায়সারা গোছের কর্মসাধনের জন্য কোনো রকম একটু ঝাড়ু দিয়ে টার্মিনালের সামনেই স্তুপ আকারে রেখে দেওয়া হলো আবর্জনা। অত‍ঃপর ‍বৃষ্টির পানিতে ভেসে অথবা বাতাসে উড়ে ফের সেগুলো ছড়িয়ে পড়ল বিমান বন্দরের আঙ্গিনায়-দৃষ্টি কটু, বিশ্রী এ বিষয়টি কীভাবে মেনে নিচ্ছে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষ?
 
পাশাপাশি প্রিয়জনকে রিসিভ করতে এসে অথবা বিদায় দিতে গিয়ে যারা পানির বোতল, ছেড়া স্যান্ডেল, নেটের ব্যাগ, পা-রুটির ঠোঙ্গা, পাটের রশি, পলিথিনে মোড়ানো পচা ডাল, বিরিয়ানীর প্যাকেট, কোকের বোতল, ভাঙা কার্টুন, ছেড়া বেডসিট, গাড়ির পুরনো টায়ার, পোড়া মবিল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারের ছেড়া ফোম বিমান বন্দরে ফেলে আসছেন। নোংরা করছেন দেশের অন্যতম প্রধান স্থাপনাকে। বিদেশি মেহমানদের সামনে তুলে ধরছেন নিজেদের নোংরা মানসিকতাকে। তারাও কি দায় এড়াতে পারবেন?

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
এজেড/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।