ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘সময় নেই’ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের!

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৬
‘সময় নেই’ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের! ছবি: জিএম মুজিবুর-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বাংলামোটর মোড়,সকাল আটটা। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে চলাচলকারী গাড়িগুলো সাঁই সাঁই করে পার হচ্ছে মোড়টি।

এর মধ্যে চলন্ত গাড়ির সামনে দৌড়ে রাস্তা পার হলেন তানিয়া! রাস্তা পার হয়ে যেন-দম ছেড়ে বাঁচলেন। তবে একবারও ভাবলো না একটু অসর্তকতার কারণে হারাতে হতে পারে মূল্যবান জীবনটি।

শুধু তানিয়া নয়, সোমবার (০৭ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ব্যস্ততম মোড় বাংলামোটরে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন শত শত মানুষ।

দেখে মনে হচ্ছে, 'এতো ব্যস্ততা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের সময় নেই কারো'। এতে প্রায় সময়েই অব্যবহৃত থাকে বাংলামোটরের ফুটওভার ব্রিজটি।

বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অদক্ষ গাড়িচালক, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, অসতর্কভাবে রাস্তা পারাপার,ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অসচেতনতার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। এরপরও মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের সচেতনতা দেখা যায়নি। প্রতিনিয়ত জেনে বুঝে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে পুলিশ ভুমিকা পালন করলেও, প্রায় সময়ে নির্বিকার দেখা যায় তাদের।

ভিকারুন্নিসা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী অদ্রি। মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হচ্ছিলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর যখন ট্রাফিক সিগন্যাল পড়ছিলো না মাকে রেখেই চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হয় সে।

ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে অদ্রি বলে, স্কুলের যাবো, সময় নাই। প্রতিদিন আম্মু আমি এভাবেই পার হই,অভ্যাস হয়ে গেছে।
 

বাংলামোটর ফুটওভার ব্রিজের গোড়ায় নীল রঙের সাইনবোর্ডে লেখা 'দুর্ঘটনা এড়াতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করুন'। তবে রাস্তা পারাপার হওয়া খুব কম মানুষই এ নির্দেশনা মেনে চলছেন। ওভার ব্রিজ ফাঁকা রেখে দলে দলে ট্রাফিক পুলিশ সার্জেনের সামনেই রাস্তা পার হচ্ছেন মানুষ।

ফুটওভার ব্রিজ বব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে পার হলেন সরকারি কর্মকর্তা হাসিবুর রহমান। এগিয়ে গিয়ে এভাবে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে ওভাবে পার হওয়া উচিত হয়নি। ঝুঁকি রয়েছে। তবে সময় কম থাকায়, ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হলো। এভাবে স্বভাব খারাপ হয়ে গেছে - বলে হেসে দেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা হয় বাংলামোটরের ট্রাফিক জোনের প্রধান দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক গোলাম আম্বিয়ার সঙ্গে।

মানুষের সচেতনতার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, যার জীবন-সে সচেতন না হলে আমাদের কি করার আছে? উল্টো বলতে গেলে আমাদের সঙ্গে সিনক্রিয়েট করে। গাড়ি চালকের দোষ দেয়। এর আগে অনেক বার মোবাইল কোর্ট করে তাদের সচেতন করতে চেষ্টা করেছি। শাস্তি জরিমানাও করেছি, কিছু হয় না। আর জনবল সংকটের কারণে এসব চলমান রাখাও সম্ভব হয় না।

বাংলামোটরে গাড়ির গতি অনেক, এখানে ঝুঁকি নিলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এর জন্য জনসাধারণের সহযোগিতা ও সচেতনতা সবচেয়ে বেশি দরকার বলে জানান তিনি।

ট্রাফিক সার্জেন জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একটা সময় মানুষ অভিযোগ করতো-ফুটওভার ব্রিজে ময়লা -আবর্জনা, হাঁটাচলা করার পরিবেশ নেই। এখন ফুটওভার ব্রিজে কোনো ময়লা পাওয়া যাবে না। এরপর মানুষ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে না। আসলে, আমাদের আইনের কঠোরতার পাশাপাশি মানুষের অভ্যাসটাও পরিবর্তন করতে হবে।

** বাংলামোটরে বেপরোয়া গাড়ি, প্রতি মুর্হূতে দুর্ঘটনার শঙ্কা!

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬
এমসি/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।