ঢাকা, সোমবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খিলক্ষেতের কষ্ট- সময়-জীবন সবই নষ্ট

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৭, ২০১৬
খিলক্ষেতের কষ্ট- সময়-জীবন সবই নষ্ট ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: ঘড়ির কাঁটায় সকাল সাতটা ছুঁইছুঁই। দিনের আলো তখনও তেমন ফোটেনি।

কুয়াশাচ্ছন্ন নগরের চোখে তখনও ঘুমঘুম ভাব। সাগরে সৃষ্ট ‘নাডা’র কারণে পাঁচ দিনের দুর্যোগের দুর্ভোগ কেটে গেছে রোববার (০৬ নভেম্বর) রাতেই। কিন্তু রাজধানীর খিলক্ষেত, জোয়ার সাহারা, লেকসিটি কনকর্ড, নিকুঞ্জ, ডুমনিবাসীর প্রতিদিনের সকালের দুর্ভোগ আর কাটে না।
 
স্কুল, কলেজ বা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগামী শিক্ষার্থী, অফিসমুখী যাত্রী বা বিভিন্ন কাজে সাতসকালে ঘরছাড়া মানুষগুলোর গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষার নামই যেনো দুর্ভোগ। কেবল অপেক্ষা করলেই তো চলে না, তাতে ওঠার চেষ্টাও করতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এই ঝুঁকি নেওয়াটা তাই প্রায়ই দেখা যায় পারিবারিক দুর্যোগ হিসেবে। কেননা ঝুঁকি নিয়ে গাড়িতে উঠতে গিয়ে খিলক্ষেতে প্রায়ই দুর্ঘটনায় প্রাণ বা অঙ্গ হারানোর ঘটনা ঘটে।
 
সোমবার (০৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে সাতটা। খিলক্ষেত ওভারব্রিজের পূর্বপাশে তখন শতশত মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে বিভিন্ন রুটের বাসের জন্য। কিন্তু গাজীপুর বা আব্দুল্লাহপুর থেকে যে বাসগুলো ছেড়ে আসছে, এর প্রায় সবগুলোই যাত্রীতে ঠাসা। তাই দরজা বন্ধ। দু’-একটি লোকাল বাস যা দাঁড়াচ্ছে তাতেও পা রাখার জায়গা নেই। বয়সে তরুণ বা পুরুষ যাত্রীরা তবুও ভিড়ের মধ্যে নিজের শরীর চালান করার চেষ্টা করছেন, তবে সফল হচ্ছেন কমই। কিন্তু অসাহায়ত্ব ফুটে উঠছে নারী, শিশু ও বয়স্কদের মুখায়বে।   
 
সকাল আটটা। মমতাজ বেগম তার স্বামী শওকত আলীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ঘণ্টাখানেক ধরে। সঙ্গে একটি ছোট আকারের ট্রাভেল ব্যাগ। তাদের গন্তব্য মেহেরপুর। তাদের বড়ছেলে সেখানে সরকারি চাকরি করেন। গাবতলীগামী বাসের জন্য তাদের অপেক্ষা। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই দম্পত্তির তর আর সইছে না। রাতেই খবর পেয়েছেন ছেলের ঘর আলো করে প্রথম সন্তান এসেছে। নাতনির মুখ দেখতেই তাদের এ তাড়া। কিন্তু গাবতলীগামী বাসগুলো যে দাঁড়াচ্ছেই না এখানে। সব বাস আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা আর বিমানবন্দর থেকে যাত্রী বোঝাই করে আসছে। কিন্তু সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করার সামর্থ নেই তাদের।
 
সকাল সাড়ে আটটা। অফিসগামী মানুষের ভিড় বহুদূর পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। একে অন্যের আগে বাসে ওঠার লড়াইয়ে ধীরে ধীরে সামনে এগুতে এগুতে বাসের জন্য অপক্ষোরত মানুষের লাইন প্রায় হাফ কিলোমিটার ছড়িয়ে গেছে। অনেকক্ষণ ধরে যারা অপেক্ষা করছেন তারা এবার একটু বেশি ঝুঁকিই নিয়ে ফেলছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকা থেকে ছেড়ে আসা মহাখালীগামী চলন্ত বাসগুলোর দিকে তারা ছুটে যাচ্ছেন মাঝ রাস্তা বরাবর। কখনও কখনও তারা সফল হলেও বেশিরভাগকেই ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে।
 
এদেরই একজন গুলশানগামী শাহীন রহমান। বাংলানিউজকে তিনি বলছিলেন, খিলক্ষেতে গাড়ির জন্য অপেক্ষার যে কষ্ট তাতে আসলে প্রতিনিয়তই মূল্যবান সময় ও জীবন নষ্ট হচ্ছে। পর্যাপ্ত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু না করা পর্যন্ত এই কষ্ট কমবে না। শুধু তাই না, খিলক্ষেত থেকে বিভিন্ন রুটের গাড়ি চালুরও ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, আব্দুল্লাহপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোতে জায়গা থাকে না। আমাদের নেবে কীভাবে!
 
সকাল নয়টা। বিআরটিসি’র একটি ‘মহিলা বাস’ এসে থামলো। বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে আসা বাসটির অর্ধেক সিটই ভরা। একমুহূর্তে সবগুলো সিট ভরে গেলো মহাখালীগামী এই বাসটির। এরপরও যাত্রীদের কোনো অস্বস্তির লক্ষণ নেই। শেষ পর্যন্ত যে অবস্থা, সামনের বাসস্ট্যান্ড থেকে আর কেউ উঠতে পারবে, এমন জায়গা রয়েছে বলে মনে হলো না!
 
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৬ 
আরএম/এসএনএস
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।