ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রাফিক পুলিশ যেখানে দর্শক

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৬
ট্রাফিক পুলিশ যেখানে দর্শক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নতুন বাজার (ঢাকা): মাত্র দশ কদম দূরে বাস বে। কিন্তু সেখানে কোন বাসকেই দাঁড়াতে দেখা গেলো না।

 বাস বে পুরোই খাঁ খাঁ করছে। যাত্রীবাহী সবগুলো বাসই রাস্তার ‍উপর দাঁড়িয়ে যাত্রীদের তুলছিলো নামাচ্ছিলো।
 
কোন কোন বাস তো আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে রাস্তা বন্ধ করে যাত্রীদের ওঠা নামা করাচ্ছিলো। যেন পেছন থেকে কোন বাস পাশ কাটিয়ে সামনে গিয়ে যাত্রী নিতে না পারে।  

কিছুদিন আগেও দু’একটি পরিবহনের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যেত। কিন্তু সোমবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে জাবালে নুর, আকিক পরিবহন, সু-প্রভাত, অনাবিল, ছালছাবিল, ভিক্টর পরিবহন ও বিআরটিসির দ্বিতল বাসকেও দেখা গেলো এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার সামিল হতে। কেউ কারো চেয়ে কম নন। বরং একধাপ বেশিই বলা চলে।
 
আট লেন বিশিষ্ট এই সড়কটির (প্রগতি সরণি) উভয় পার্শ্বে চারটি করে লেন রয়েছে।  কিন্তু নতুন বাজার পয়েন্টে পশ্চিম পার্শ্বের দু’টি লেন গুলশান-২ নম্বরে যাওয়ার জন্য উন্মুক্ত রেখে রাস্তার মাঝামাঝি স্থাপন করা হয়েছে ট্রাফিক বক্স। যে কারণে চার লেন ধরে আসা যানবাহনগুলোর গতি এমনিতেই মন্থর হয়ে যাচ্ছে।  তার উপর ‘বাস বে’ তে যাত্রী উঠা-নামা না করে প্রধান সড়কের উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
 
অফিস আওয়ারের পরে নগরীর অনেক এলাকায় যানজট কমে গেলেও এখানকার চিত্র পুরোই ভিন্ন। সারাদিন যানজট, অনেকটা বলা চলে মনুষ্যসৃষ্ট কৃত্রিম যানজট লেগেই থাকছে এখানে। বেলা ১২ টায় অনেক সড়কে হয়তো যানজট পাওয়া যাবে না। কিন্তু নতুন বাজারে যানজট থাকবেই।
 
বেলা ১২.৩৫ মিনিটে বাড্ডার দিকে থেকে এসে রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়লো আকিক পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৭৬০৮)। সবার সামনে এসে আড়াআড়িভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে বাসটি। পেছনে আটকে পড়া যানবাহনগুলো অনবরত হর্ন দিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু তাতে বাস চালকটির মধ্যে ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলো না।


 
মিনিট তিনেক পরে একটু এগিয়ে খানিকটা সোজা হয়ে দাঁড়ালে ছোট গাড়িগুলো যাতায়াত শুরু করে। আরও মিনিট খানেক পরে অনেক কষ্টে আকিক পরিবহনের বাসটির পথ আগলে দাঁড়ায় জাবালে নুর পরিবহনের অপর একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৭৭৩৫)।  এই বাসটিও মিনিট দু’য়েক রাস্তা আটকে যাত্রী তোলা-নামা করে কুড়িল অভিমুখে রওয়ানা দেয়।
 
ততক্ষণে পেছনে দীর্ঘ লাইন। মুহূর্তেই যানবাহনের সারি ক্যামব্রিয়ান কলেজ ছাড়িয়ে উত্তরবাড্ডায় পৌঁছে যায়। শুধু কুড়িলগামী যানবাহন নয় আটকা পড়ে গুলশানগামী যানবাহনগুলোও। কুড়িলের দিক থেকে আসা যানবাহনগুলো আমেরিকান দূতাবাসের সামনে এসে ইউটার্ন নিয়ে গুলশান-২ অভিমুখে যাত্রা করে।
 
কিন্তু এই সড়কটি বন্ধ থাকায় ইউটার্ন নিতে ব্যর্থ হয়। আর ইউটার্নের জন্য রাস্তা বন্ধ করে দাঁড়ানোর কারণে মতিঝিলগামী যানবাহনগুলোও আটকা পড়ে। আকিক ও জাবালে নূরের বাস দু’টি চলে যায় একই নামের পরের গাড়ি এলে। সেই বাসগুলোও একই ভাবে রাস্তা বন্ধ করে যাত্রী তোলা নামা করে। ফাঁকে ফাঁকে দু’ একটি বাস কসরত প্রদর্শন করে এগিয়ে যায়।
 
গ্রেট তুরাগ পরিবহন যে একটু ‌আলাদা তা কর্মেই প্রমাণ দিলেন।  ১২.৫৫ মিনিটে সু-প্রভাতের একটি বাসের গা ঘেঁষে সামনে গিয়ে পথরোধ করে দাঁড়ায় বাসটি। এ সময় পুরো রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।  সঙ্গে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে বিআরটিসির বাসও।  

বাসগুলো যখন এইভাবে প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে তখন অনেকটা অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলামকে। মাঝে মধ্যে বাসগুলোকে চলে যেতে নির্দেশ দিলেও কে শোনে কার কথা।  তাদের ইচ্ছা পূরণ হলে তবে প্রস্থান করে তারা।
 
ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুলের গা ঘেঁষে রাস্তা বন্ধ করে জাবালে নুর পরিবহনের বাসটি দাঁড়ানো। নজরুল ইসলামের কাছে প্রশ্ন ছিল অনিয়ম করছে কিন্তু বাসটিকে শাস্তি দিচ্ছেন না কেন? জবাবে বলেন, অপরাধ করলেও সব সময় ধরা যায় না। কারণ একটি বাস সাইড করতে গেলে রাস্তায় জ্যাম লেগে যায়। এ জন্য সুযোগের প্রয়োজন হয়।


 
অবশ্য শুধু ট্রাফিক কনস্টেবলকেই নয়, বড় কর্তাদেরও তেমন একটা তোয়াক্কা করতে দেখা গেলো না বাস চালকদের। এর আগে যখন ট্রাফিকের এডিসিকে পার করার জন্য টিআই, সার্জেন্ট ও কনস্টেবল মিলে তৎপর ছিল তখনও তাদের কথা গায়ে নিচ্ছিল না বাস চালকরা।
 
পেছনে টিআই, মাঝে কনস্টেবল আর সামনে সার্জেন্ট দাঁড়িয়ে হম্বিতম্বি করছিল। ঠিক তখনও রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠা নাম করায় জাবালে নুর ও আকিক পরিবহনের বাসগুলো।  

কেউ কেউ অবশ্য দাবি করেন অন্য কথা, এখানে দাঁড়ানোর জন্য মাসোহারা দেয় তারা। যে কারণে ট্রাফিক পুলিশও নৈতিকভাবে দুর্বলতার কারণে অপরাধ করলেও জোরে কিছু বলতে পারেন না।
 
রাস্তা বন্ধ করে যাত্রীদের ওঠানামা করাচ্ছিলেন জাবালে নুর ( ঢাকা মেট্রো ব ১১-৭৭৩৫) বাসটির হেলপার ইমরান। তার কাছে প্রশ্ন ছিল দশ কদম দূরে ‘বাস বে’তে না দাঁড়িয়ে, রাস্তা বন্ধ করে কেন দাঁড়িয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘ওখানে তো কোন যাত্রী যায় না। দেহেন পুরাই ফাঁকা পড়ে আছে। ‘
 
একই প্রশ্ন ছিল ডিউটিরত ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) মাহবুবের কাছে। তিনি জানান, ‘আমরা সবাই অসভ্য, আমি, আপনি এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছে, বাস চালক, হেলপার, সবাই। যাত্রীরা রাস্তার উপর এসে দাঁড়িয়ে আছে। ওভারব্রিজ রয়েছে কিন্তু সেদিক দিয়ে কেউ যায় না। দেখেন দেখেন কিভাবে ব্যাঙের মতো লাফ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে।
 
এই রাস্তা বন্ধ করে যাত্রী ওঠা নামা করানোর কারণে সারাদিন এমনকি রাতেও জ্যাম লেগে থাকে। কিন্তু যদি ‘বাস বে’ দাঁড়াতে বাধ্য করা যেত তাহলে ৮০ ভাগ যানজট কমে যেতো।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
এসআই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।