ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ম্যাসেঞ্জারে অর্ডার, বিকাশে পেমেন্ট!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৬
ম্যাসেঞ্জারে অর্ডার, বিকাশে পেমেন্ট! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেরানীগঞ্জ, ঢাকা: কেরানীগঞ্জে মাদক কেনাবেচায় ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছে মাদক ব্যবাসায়ী ও মাদকসেবীরা। উপজেলায় প্রায় শতাধিক চিহ্নিত মাদকের স্পট থাকলেও মূলত এখন হাতে হাতেই বিক্রি হয় মাদক।

মাদকসেবীরা ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার ও ইমোর মতো আধুনিক যোগাযোগের মাধ্যমে মাদকের অর্ডার দেয় বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে। ..

পরবর্তীতে, ‘বিকাশ’, ‘রকেট’ ও ‘শিউরক্যাশের’ মতো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে বিল পরিশোধ করা হয়। এছাড়া মাদক কেনাবেচায় তারা ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সংকেত। যেমন গাঁজাকে সবজি, ফেনসিডিলকে ৬ ইঞ্চি, ফেঞ্চি এবং ইয়াবাকে গুটি, লেবার ও বাবা নাম ব্যবহার করা হয়।

উপজেলাবাসীর দাবি, কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেয়। অন্যদিকে, সাধারণ জনগণকে ধরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করে। এতে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় বাড়ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড।

চলতি বছরের অক্টোবরে উপজেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মোট মামলা হয়েছে ৪৪টি। যার মধ্যে মাদক ও চোরাচালান মামলা ২৭টি। মাদক সহ গ্রেফতার ৩৬ জন। একই মাসে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মোট মামলা হয়েছে ১৭টি। যার মধ্যে মাদক মামলা ১১টি। মাদক সহ গ্রেফতার ১৮ জন।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার স্টেটমেন্ট অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাহফুজ ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার স্টেটমেন্ট অফিসার সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে, অক্টোবরে কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে ৪৪টি। যার মধ্যে ৪টি ব্যতীত সবগুলোই মাদক সংক্রান্ত। ভ্রাম্যমাণ আদালত ৪০টি মামলায় ৩৭ জনকে ১ লাখ ৯ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করেছেন। এছাড়া ৫৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন। এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) কেরানীগঞ্জ সার্কেল পারভেজুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ সার্কেল অঞ্জন কুমার সরকার।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মজিরুল হক ও বেঞ্চ সহকারী হুমায়ুন কবীর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলার উত্তর মালিভিটার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মো. দিলবার। তার আস্তানায় রাত ৮টার পর থেকে চলে রমরমা মাদক ব্যবসা। বেউতা এলাকার জাকির হোসেন বিপুল পরিমাণ মাদকসহ একাধিকবার আটক হলেও তাকে রোধ করা সম্ভব হয়নি। বেউতা এলাকায় তার একাধিক চোলাই মদের কারখানা রয়েছে। পোড়াহাটি এলাকার শওকত ইয়াবার ডিলার। পূর্বদি এলাকার মান্নান, দিপ্তা ও তৌহিদ। বাবুরাই পাড়ার রনি, বাপ্পি, সাবেদ ও সোহেল। জালখোলা এলাকার জাবেদ ইয়াবা বিক্রি করছেন অবাধে।

চলতি বছরের ২২ অক্টোবর দিনগত রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার চুনকুটিয়া মাঠেরকোণা এলাকার বালুর মাঠে মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে সোহেল (৩৫) নামে এক যুবক খুন হন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার এক মাদকসেবী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আগে স্পট থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করতাম। এখন মোবাইলে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে ইয়াবার অর্ডার দেই’। ‘নির্দিষ্ট স্থানে ইয়াবা রেখে গেলে আমরা সেখান থেকে তা সংগ্রহ করি। পরে বিকাশে পেমেন্ট দিয়ে দেই’।

উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের আমবাগিচা এলাকার একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ, ‘আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগা দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে যাচ্ছে। অথচ তারা কিছু বলছে না। তারা মাদক ব্যবসায়ীদের টাকা খেয়ে ছেড়ে দিয়ে নিরীহ মানুষকে ধরে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। ’

এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কেরানীগঞ্জের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা নিয়মিত মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি। তাছাড়া যে সমস্ত চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী আইসিটির মাধ্যমে মাদক কেনাবেচা করতে পারে তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।