ঢাকা, বুধবার, ১ কার্তিক ১৪৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কালনী এক্সপ্রেসে এখনও হ-য-ব-র-ল বগি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৬
কালনী এক্সপ্রেসে এখনও হ-য-ব-র-ল বগি ফাইল ফটো

গন্তব্য শ্রীমঙ্গল। বেছে নিলাম পছন্দের ট্রেন জার্নি, কালনী এক্সপেস। অফিসের কাছে হওয়ায় বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠার সিদ্ধান্ত নিই।

কালনী এক্সপ্রেস থেকে: গন্তব্য শ্রীমঙ্গল। বেছে নিলাম পছন্দের ট্রেন জার্নি, কালনী এক্সপেস।

অফিসের কাছে হওয়ায় বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠার সিদ্ধান্ত নিই।

কমলাপুর থেকে এসে বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি বিমানবন্দর স্টেশন ছাড়ার কথা। সে অনুযায়ী প্রায় তিরিশ মিনিট আগেই হাজির হই স্টেশনে।  

জানা গেলো, বিমানবন্দর স্টেশনে মাত্র মিনিট তিনেকের যাত্রাবিরতি রয়েছে ট্রেনটি। এর মধ্যেই উঠতে হবে। স্টেশনে লোকে গিজগিজ করছিল। তাই যথাসময়ে ট্রেনে ওঠা নিয়ে এক ধরনের উৎকণ্ঠা তৈরি হল মনের মধ্যে।

ট্রেনের নির্ধারিত ‘খ’ বগি কোথায় দাঁড়াবে জানা নেই। এই শঙ্কা থেকেই স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঢুঁ মারা। একজন জানালেন, ‘খ’ বগি পেছনের দিকে হবে।

স্টেশন মাস্টারের কক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বিমানবন্দর স্টেশনের দক্ষিণ দিকে অবস্থান নিই। প্রায় তিরিশ মিনিট বিলম্বে (বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে) হেলেদুলে বিমানবন্দর স্টেশনে প্রবেশ করে কালনী এক্সপ্রেস।  

ইঞ্জিনের পরেই প্রথমে ‘ঝ’ বগিতে চোখে পড়ে। তখন ভাবলাম স্টেশন মাস্টারের কক্ষে পাওয়া তথ্য ঠিক বুঝি। এদিকে ‘ঝ’ বগি রয়েছে। নিশ্চয় পেছনে দিকে ‘ক’-‘খ’ রয়েছে।

কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যখন দ্বিতীয় বগিটি চোখের সামনে চলে আসে তখন আর কপাল চাপড়ানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। দ্বিতীয় বগিটির গায়ে লেখা ‘খ’ বগি। তখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

সে বগি পাশ কাটিয়ে অনেক সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তখন পড়িমড়ি করে ছোটা ছাড়া আর কিছুই ভাবনার মধ্যে ছিল না। কিন্তু স্টেশনে যাত্রী গিজগিজ করায় দ্রুত যাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। অন্য যাত্রীরাও তখন দিগ্বিদিক ছুটছিলেন। অনেক কষ্টে ‘খ’ বগিতে উঠতেই কালনী হুঁইসেল দিয়ে যাত্রা শুরু করে।

কিন্তু আসন পর‌্যন্ত পৌঁছাতে ব্যর্থ হই। বগির ভেতরে অনেকে শেষ মুহূর্তে ওঠায় এক ধরনের জটলা তৈরি হয়। কিছু লোকজনকে পাওয়া গেলো যারা নিজেদের বগি না পেয়ে এই বগিতে উঠেছেন। এখান থেকেই খুঁজতে খুঁজতে নির্ধারিত বগিতে যেতে চান তারা।

আব্দুস সালাম নামে শায়েস্তাগঞ্জের এক মাঝবয়সী যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, “আমি নিয়মিত যাওয়া-আসা করি। এই ট্রেনটির এলোমেলো বগির কারণে খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ”

স্মৃতিচারণ করে বলেন, “একদিন এয়ারপোর্ট স্টেশনে উঠেছি পেছনের বগিতে। ভেতরে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় নির্ধারিত বগিতে পৌঁছতে পৌঁছতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার হয়ে যায়। ”

আব্দুস সালাম অভিযোগ করে বলেন, “আমার মতো সামর্থবান লোকেরই এই অবস্থা। বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অক্ষম লোকের কী অবস্থা হয় অনুমান করতে পারেন?”

ট্রেনটিতে ইঞ্জিনের পরেই ‘ঝ’ বগি। এরপর যথাক্রমে ‘খ’, ‘ছ’, ‘চ’, ‘ঙ’, ‘জ’, ‘ঘ’ এবং ‘গ’ বগি। দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছে ট্রেনটি। অথচ মাত্র কয়েক মিনিটে বগিগুলোর সিরিয়াল ঠিক করা যায়। আবার চাইলে কম্পিউটারে এক ক্লিকেই ঠিক করে নেওয়া যায় এই সিরিয়াল।

কিন্তু এতে যেন বাংলাদেশ রেলওয়ের কোনো মনোযোগ নেই। আর সিরিয়াল না থাকায় স্টেশনে দাঁড়ালেও যাত্রীদের ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। অনেক অভিযোগ, কিন্তু সমাধা হয় না এসব সমস্যার।  

বগির সিরিয়াল প্রসঙ্গে কালনী এক্সপ্রেসের পরিচালক শ্যামল বড়ুয়া বলেন, “এটি হওয়া উচিত না। আমি বলবো আন্তরিকতার অভাব। ”

তিনি বলেন, “ট্রেনটি সিলেটে গেলে ওয়ার্কশপে নেওয়া হয়। সেখানে কাজ করানোর সময় চাইলে বগিগুলো সিরিয়াল করতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। চাইলে কম্পিউটারে টিকিট সিস্টেমের কোড পরিবর্তন করেও বগির সিরিয়াল করা সম্ভব। যেখানে যে বগি রয়েছে সেভাবেই থাকবে, শুধু সিটপ্ল্যান পরিবর্তন করতে হবে। ”

এই সিটপ্ল্যান পরিবর্তন করা মাত্র এক ক্লিকের কাজ বলে মনে করেন অন্যরা। কিন্তু এই কাজটিই হচ্ছে না কয়েক বছর ধরে।

কালনী এক্সপ্রেস বিগত ৫ বছর ২ মাস যাবত এই রুটে নিয়মিত চলাচল করছে। প্রতিদিন সকাল ৭টায় সিলেট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। দুপুর ২টায় পৌঁছে। আবার দুই ঘণ্টা পর ঢাকা থেকে বিকেল ৪টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সিলেটে পৌঁছায় রাত ১১টায়। তারপর নেওয়া হয় ওয়ার্কশপে। সেখানেই এই কাজটি করা খুব জটিল কিছু নয়।

এর আগে, জুলাই মাসে কয়েক দফায় শ্রীমঙ্গল ও সিলেট সফরকালে এই কালনীতে যাত্রা করেছিলাম, যাত্রা হয়েছিল একই রুটের পারাবত এক্সপ্রেসে। সেই ট্রেনের বগিগুলোও এলোমেলো ছিল। সেসময় আবার বগির নামও ছিল না। তারপর বাংলানিউজে নিউজ হয়, ‘হ-য-ব-র-ল বগিতে ভোগান্তি’। ওই প্রতিবেদনের জেরে বগিগুলোর নাম বসানো হয়। কিন্তু এই ট্রেনের বগি এখনও এলোমেলোই রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৬
এসআই/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।