ঢাকা, বুধবার, ১ কার্তিক ১৪৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

টাকা দিলে অনুমতি মেলে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৬
টাকা দিলে অনুমতি মেলে!

রাজধানীর মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ সেগুলোও চল‍াচলের অনুমতি মেলে টাকা দিলে। মাত্র ১০-২০ টাকা ট্রাফিক পুলিশের পকেটে গেলেই মানতে হয় না কোনো বিধি-নিষেধ।

ঢাকা: রাজধানীর মহাসড়কে যেসব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ সেগুলোও চল‍াচলের অনুমতি মেলে টাকা দিলে। মাত্র ১০-২০ টাকা ট্রাফিক পুলিশের পকেটে গেলেই মানতে হয় না কোনো বিধি-নিষেধ।

ঢাকার রাস্তায় যানজটের দুর্ভোগ কমাতে নিয়মিতই বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। সড়ক ও সময় বিবেচনায় বিভিন্ন যান চলাচলের বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। অথচ সেসব বিধি-নিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশরাই পকেটে পুরছেন উপড়ি টাকা।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর সাইন্সল্যাব মোড়ে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ রফিক। যিনি টাকার বিনিময়ে অনুনমোদিত যানবাহনকে চলাচলের ছাড়পত্র দেওয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।

সড়কটিতে ব্যাটারি চালিত রিকশা একেবারই নিষিদ্ধ, মালবাহী পিকআপ ভ্যান দিনের বেলায় চলাচলেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ১০/২০ টাকার বিনিময়ে এসব বাহন চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য রফিক।

সকাল সাড়ে ৬টায় যখন সড়ক একেবারেই ফাঁকা। ট্রাফিক পুলিশের এই সদস্য সাইন্সল্যাব মোড়ে দাঁড়িয়ে অন্য সহকর্মীর সঙ্গে গল্প করছেন। গল্পে মজে থাকলেও তার নজর ব্যাটারিচালিত রিকশার দিকে। সে সময় বিভিন্ন আড়ৎ থেকে সবজি বা মাছ নিয়ে নিজ গন্তব্যে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সাধারণ রিকশা হলে সমস্যা নেই, যখনই ব্যাটারিচালিত রিকশা দেখছেন তখনই সেটার সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছেন রফিক। ভাবখানা এমন যেন এখনই রিকশাসহ চালককে আটক করবেন তিনি।
কিন্তু সব রাগ ক্ষোভ নিমিষেই ঠাণ্ডা হয়ে আসে যখন চালক পকেট থেকে কিছু একটা বের করছেন, আর রফিক সেটা পকেটে পুরছেন। তারপর ছেড়ে দিচ্ছেন সেই রিকশাটি। বুঝতে সমস্যা হচ্ছিল না যে, টাকার বিনিময়ে তিনি রিকশাগুলো ছেড়ে দিচ্ছেন।

এভাবে কিছুক্ষণ দেখার পর কত টাকা লেনদেন হচ্ছে জানতে এক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয়। রিকশা চালক আলী আহমদ জানান, কারওয়ান বাজার থেকে সবজি নিয়ে মোহাম্মদপুর যাচ্ছেন। এখানে আটকে দেওয়ার পর ১০ টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। পুরো পথেই ট্রাফিক পুলিশের কাছে ধরা খেলে প্রতিবার ৫/১০ টাকা দিতে হয় বলেও জানান তিনি।

সকাল ৭টার পর যখন সড়কে ব্যস্ততা বাড়তে লাগলো ততক্ষণে ওই ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিন্তু যখনই কোনো মালবোঝাই পিকআপ ভ্যান আসছে তখনই তিনি দায়িত্ব ফেলে পিকআপের কাছে ছুটে যাচ্ছেন।

পিকআপ চালকের সাথে খানিকটা কথা বলেই আবার পকেটে হাত, আবার ছেড়ে দেওয়া। তারপর আবার তার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব শুরু।

ঢাকার বাইরে থেকে মাছ নিয়ে আসা পিকআপ চালক মাসুদের কাছে ‘কত টাকা দিলেন?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ২০ টাকা।

তিনি আরও জানান, ঢাকায় মাছ নিয়ে ঢুকতে দেরি হয়ে গেছে। এখন ট্রাফিক পুলিশ ধরলেই বিভিন্ন ঝামেলা করছে। টাকা দিলেই সকল ঝামেলার সমাধান!

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৬
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।