ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রিকশার রাজত্বে অসহায় যাত্রী

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৬
রিকশার রাজত্বে অসহায় যাত্রী ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সকাল সাড়ে ৮টা। রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের সামনে আধা ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান। গন্তব্য মগবাজার ওয়্যারলেস গেট।

ঢাকা: সকাল সাড়ে ৮টা। রামপুরা টেলিভিশন সেন্টারের সামনে আধা ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান।

গন্তব্য মগবাজার ওয়্যারলেস গেট।

রামপুরা বনশ্রী আবাসিক এলাকার এ বাসিন্দা প্রতিদিন এখান থেকে রাইদা, স্পেশাল সুপ্রভাত, অনাবিল সিটিং সার্ভিসে উঠে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত যান বা যাওয়ার চেষ্টা করেন। সেখান থেকে রিকশায় মগবাজার ওয়্যারলেস গেট।
 
কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকের এ কর্মকর্তা বেশিরভাগ দিনই বাসে সিট পান না। বাধ্য হয়েই তাকে উঠতে হয় রিকশায়। মেনে নিতে হয় রিকশা চালকদের চাপিয়ে দেওয়া বাড়তি ভাড়ার বোঝা।
 
টেলিভিশন সেন্টার থেকে মালিবাগ রেলক্রসিং পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এই পথের ভাড়া ৫০/৬০ টাকা। মগবাজার ওয়্যারলেস গেট পর্যস্ত গেলে রিকশা ভাড়া বেড়ে ৭০/৮০ টাকায় দাঁড়ায়।

বনশ্রী আইডিয়াল স্কুলে দুই সন্তানের লেখা-পড়া ও নির্ঝঞ্ঝাট এলাকায় বসবাস করার বাসনায় বনশ্রীতে থাকতে গিয়ে ওয়ালিউর রহমানকে প্রতিদিন পোহাতে হচ্ছে এই জনদুর্ভোগ। মানসম্মত গণপরিবহনে অভাবে বাড়তি ভাড়া দিয়ে প্রতিদিনই যেতে হচ্ছে রিকশায়।

আয়ের একটা বড় অংশ রিকশা চালকের পকেটে পুরে দিয়েও স্বস্তি মিলছে না ওয়ালিউর রহমানদের। সকালে বেশি টাকায় ভাড়া টানা যায় বিধায় অলি-গলির সব রিকশা উঠে আসে মূল সড়কে। এ জন্য দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের ২০/৩০ টাকা দিলেই ঝামেলা চুকে যায়!

বুধবার (০৯ নভেম্বর) সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যস্ত রামপুরা ব্রিজ, টেলিভিশন সেন্টার, ওয়াবদা রোড, রামপুরা বাজার হয়ে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেল পর্যন্ত সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে রিকশার রাজত্ব। মূল সড়কের প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গা দখল করে আছে রিকশা।

স্থানীয় লোকজন ও সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মালিবাগ অংশের শুরু হওয়ার পর এ এলাকার জনদুর্ভোগ চরমে ওঠে। ২০ টাকার রিকশা ভাড়া রাতারাতি বেড়ে ৪০/৫০ টাকায় ওঠে। এখন তারা ৫০/৬০ টাকার কমে যেতে চায় না।

আর বাসে উঠলে ২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে লেগে যায় প্রায় ১ ঘণ্টা। দূর থেকে ছেড়ে আসা বাসে জায়গা না থাকায় রামপুরা থেকে বাসে ওঠা অসম্ভব হয়ে পড়ে যাত্রীদের পক্ষে। বাধ্য হয়েই উঠতে হয় রিকশায়। যাত্রীদের এই অসহায়ত্বের সুযোগে চতুর রিকশা চালক দুই/তিন গুণ ভাড়া আদায় করে নেন।
 
তবে এ নিয়ে রিকশা চালকদেরও আছে পাল্টা যুক্তি। তাদের মতে আগে যেখানে ১০ ট্রিপ মারা যেত, এখন সেখানে মারতে হয় ৫ ট্রিপ। যানজটে রাস্তা আটকে থাকার কারণে একটা ট্রিপই তিনটা ট্রিপের সময় খেয়ে দেয়।

কথা হয় রিকশা চালক সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। গাইবান্ধা থেকে আসা এ রিকশা চালক বাংলানিউজকে বলেন, রামপুরা টেলিভিশন সেন্টার থেকে একজন যাত্রী নিয়ে মালিবাগ রেলক্রসিং পর্যন্ত পৌঁছাতে ১ ঘণ্টা লেগে যায়। আগে লাগতো ১৫/২০ মিনিট। টাকা বেশি না নিয়ে কী করব?

যাত্রীদেরও আছে পাল্টা যুক্তি। তারা বলছেন, এটা একটা ওজুহাত। আজই যদি ফ্লাইওভার খুলে দেওয়া হয়, রিকশাওয়ালারা কি ভাড়া কমাবে? নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষগুলোকে জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মাধ্যমে এসব রিকশাচালক এখন নিজ নিজ এলাকায় ভূ-সম্পত্তির মালিক হচ্ছেন। এদের অনেকেরই মাসিক আয় এখন ২৫/৩৫ হাজার টাকা। যা একজন উচ্চ শিক্ষিত চাকরিজীবীর চেয়েও বেশি।

রামপুরা বাজারে কথা হয় ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের জোনাল ডিস্ট্রিবিউটার সারোয়ার আলমের সঙ্গে। উত্তরা যাওয়ার জন্য ফাল্গুন বাসের অপেক্ষায় থাকা সারোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, মানসম্মত গণপরিবহনের অভাব ও অসহনীয় জ্যামের কারণে পাবলিক বাসে না উঠে বাধ্য হয়েই সিএনজি অথবা রিকশায় উঠতে হয়। ফলে মাসিক বাজেটের বড় একটা অংশ খরচ হয় যাতায়াতের পেছনে। সঞ্চয় বা ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন সড়কে মারা পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯,২০১৬
এজেড/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।