ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৬
ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাজধানীর মহাসড়কে উল্টোপথে অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে রয়েছে বিধি-নিষেধ। তবে সেসব বিধি-নিষেধকে রীতিমত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অযান্ত্রিক যানবাহন মহাসড়কে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাই।

ঢাকা: রাজধানীর মহাসড়কে উল্টোপথে অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে রয়েছে বিধি-নিষেধ। তবে সেসব বিধি-নিষেধকে রীতিমত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অযান্ত্রিক যানবাহন মহাসড়কে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরাই।

বুধবার (৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর নতুন বাজার ওভারব্রিজের নিচে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের তিন সদস্য আ. রহমান, মো.আতাউর রহমান ও মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে এক আনসার সদস্য।

এ সময় প্রত্যেকটি অযান্ত্রিক যানবাহন থেকে প্রকাশ্যে তাদের অবৈধভাবে টাকা নিতে দেখা গেছে।

শুধু তাই নয়, যেকোনো ধরনের অযান্ত্রিক যানবাহন মহাসড়কে উঠলেই ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। নয়তো বা আবার উল্টোপথে আসার অপরাধে ৬০০ টাকা রেকার বিল দিতে হয়। তাই অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোর চালকরাই ঝামেলা না করে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের হাতে চাঁদা দিয়েই চলাচলের অনুমতি নেন।

এছাড়া নতুন বাজার প্রগতি সরণিতে মালবাহী পিকআপ, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান চলাচলে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু কে শোনে কার কথা? আইনের রক্ষকরাই স্বয়ং অর্থের বিনিময়ে মহাসড়কে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছেন।

সকাল ৯টা। নতুন বাজার প্রগতি সরণিতে লেগে আছে তীব্র যানজট। এর মধ্যে নতুন বাজারে দায়িত্বরত তিনজন ট্রাফিক পুলিশও মেতে আছেন খোশগল্পে। আর এমনই সময় নতুন বাজার আমেরিকান ট্রেনিং সেন্টারের সামনের গলি ধরে উল্টো পথে যাত্রা করছে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা। আর তখন কোথা থেকে দৌড়ে এলেন এক আনসার সদস্য। প্রথমে তিনি চেষ্টা করলেন রিকশাটির চাবি নিতে কিন্তু চালক যখন পকেট থেকে টাকা বের করলেন। তখন তিনি সামনে হাঁটা শুরু করলেন এবং একটু সামনে গিয়ে টাকাটা নিয়েই উল্টো পথে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। কিন্তু আনসার সদস্যের পোশাকে নামের কোনো নেমপ্লেট ছিলো না। তাই প্রকাশ্য দিবালোকেই তিনি এভাবে অর্থোপার্জন করছেন।

এ বিষয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক শরীফ বাংলানিউজকে বলেন, মহাসড়কে উল্টোপথে তো দূরে থাক চলাচলই আমাদের জন্য নিষদ্ধ। কিন্তু ট্রাফিক পুলিশদের কিছু টাকা দিলেই মামারা আমাগোরে চলাচল করতে দেয়।

কত টাকা দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামারে ২০ টাকা দিলাম। আবার আসার সময় ২০ টাকা দিতে হইব। নইলে রিকশা আটকায়ে রাখব।

শরীফ আরও জানান, এ যাবত তার কাছ থেকে হাজার তিনেক টাকা নিয়েছে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। প্রতিদিন ১০/২০/৩০ টাকা দিলেই উল্টোপথে যাওয়ার অনুমতি মেলে। শুধু তাই নয়, রিকশার গদি নিয়েও ৫০ বা ১০০ টাকা নেয় তারা। ট্রাফিক পুলিশদের উল্টো পথ নয় ওদের টাকার দরকার হলেই যেকোনো একটা ছুতো পেলেই ওরা টাকা নেয়।

নতুন বাজার থেকে ভ্যানে করে মুদি দোকানের মাল নিয়ে বাড্ডায় যাচ্ছেন তোরাব আলী। এ সময় তিনি ধরা খেলেন ট্রাফিক পুলিশ রফিকুল ইসলামের কাছে। কিছু বলার আগেই তাকে বকাঝকা করে নাজেহাল করে ফেললেন ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য। পরে যখন কথা বলতে চেয়ে পকেটে হাত দিলেন তখন তাকে নিয়ে সামনে গেলেন এবং টাকার বিনিময়ে তাকেও ছেড়ে দিলেন সেই ট্রাফিক পুলিশ।

তোরাব আলী বাংলানিউজকে বলেন, মামারে ৫০ টাকা দিতে হইছে। শুধু আজ না প্রতিদিন দিয়ে থাকি। কেননা আমি মুদি মাল আনা নেওয়ার কাজ করি। সড়ক-মহাসড়ক বুঝি না টাকা দিলেই চলতে পারি একডা শুধু বুঝি।

টাকা নেওয়ার বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে ট্রাফিক পুলিশ রফিক বলেন, এইডা কোনো বিষয় না। মাঝে মধ্যে চা পান খাওয়ার জন্য একটু আর কি? আর ওদেরও তো ভালো হচ্ছে। নইলে মাল নিয়ে কি আর ওরাও চলাচল করতে পারতো?

তবে তাকে নিয়ে রিপোর্ট না করতে বারবার প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন ট্রাফিক পুলিশের ওই সদস্য।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৬
এসজে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।