ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জ্বালানি খাতে শত কোটি টাকার অনিয়ম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
জ্বালানি খাতে শত কোটি টাকার অনিয়ম

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কার স্কিম প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। 

ঢাকা: অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন ছাড়াই সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কার স্কিম প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ নিজেদের পছন্দের কর্মকর্তাদের বিশেষ সুবিধা দিতেই প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়।

এতে সরকারের প্রায় ৩ কোটি টাকা গচ্ছা গেছে।  

একইভাবে জ্বালানি খাতের বিভিন্ন কাজের নামে ১০১ কোটি ৯৮ লাখ ৯৩ হাজার ২৪০ টাকা অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে।
 
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সংসদে ভবনে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১১টি প্রতিষ্ঠানের এসব অনিয়মের চিত্র প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেছে বাংলাদেশের মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়।  
 
সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব এবং প্রতিষ্ঠান ও অডিট অফিস থেকে প্রতিনিধি নিয়ে ৩ সদস্যের কমিটির মাধ্যমে বিষয়গুলো তদন্ত করে অনধিক ১৫ দিনের মধ্যে কমিটির কাছে প্রতিবেদন দাখিলের সুপারিশ করা হয়েছে।  
 
বৈঠকে কমিটির সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলাম, মো. আব্দুস শহীদ, মোহাম্মদ আমানউল্লাহ, পঞ্চানন বিশ্বাস, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, মো. জিল্লুল হাকিম, আ ফ ম রুহুল হক, মো. শামসুল হক টুকু, বেগম রেবেকা মমিন অংশগ্রহণ করেন।  
 
কমিটিতে উত্থাপিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শেভরন ও কেয়ার্নকে চুক্তি অনুযায়ী যথাসময়ে বিল পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে তারা জরিমানা আদায় করেছে। এতে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৩ লাখ ৭ হাজার ৮৮৬ টাকা।  

এ পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি অডিট অফিস, প্রতিষ্ঠান ও মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিনিধি নিয়ে ৩ সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি পরীক্ষা করে অনধিক ৬০ দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন কমিটির কাছে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। প্রতিবেদনে সুপার রিফাইনারি (প্রা.) লিমিটেডের বিল থেকে উৎসে আয়কর কম কর্তন করায় সরকারের ৬ কোটি ৫০ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৯ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।  
 
এতে উল্লেখ করা হয়, প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রাম থেকে বাঘাবাড়ী ও চাঁদপুর ডিপোতে পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য সরাসরি পাঠানোর পরিবর্তে ভায়া গোদনাইল পাঠানোয় অতিরিক্ত ট্যাংকার ভাড়া পরিশোধ এবং অনুমোদিত পরিবহন ঘাটতি একবারের জায়গায় দু’বার দিতে হয়েছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৭০৭ টাকা। বিদেশি এয়ারলাইনসের বিক্রিত জেট-এ-১ এর মূল্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে ডলারের পরিবর্তে টাকায় গ্রহণ এবং ক্রেতার স্থানীয় এজেন্টের কাছ থেকে ডলারের বিক্রয় মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যে টাকা আদায় করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৩০ লাখ ৮ হাজার ৯১৮ টাকা।  
 
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমিক না হয়ে জাতীয় বেতন স্কেলভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ তহবিল থেকে অনিয়মিতভাবে ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ৪ হাজার ৮৭৯ মুনাফা বণ্টন করে নেওয়া হয়েছে। বিপিসি’র আদেশ উপেক্ষা করে বিভিন্ন ডিপোতে মূল্য বৃদ্ধির আগে অস্বাভাবিক পরিমাণ অতিরিক্ত ডিজেল বিক্রি করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৮৮ হাজার ২১৯ টাকা। পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের টেন্ডারের মাধ্যমে ভাড়াকৃত ট্যাংকারের ভাড়া বিপিসি বিনা টেন্ডারে সমঝোতার মাধ্যমে নির্ধারিত ভাড়ার হারে আদায় করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে এক কোটি ২৮ লাখ ৭২ হাজার ২৩৭ টাকা, প্রাপ্য স্কেল অপেক্ষা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে উচ্চতর স্কেল প্রদান ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে সিলেকশন গ্রেড প্রদান করায় ক্ষতি ৫৬ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩০ টাকা, অবসর গ্রহণকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রাপ্য অপেক্ষা অতিরিক্ত গ্র্যাচুইটি প্রদান করায় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয়েছে ১৭ লাখ ৯৯ হাজার ৯৭৩ টাকা এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রাপ্যতা বহির্ভূত ভাতাদি প্রদান করায় ১৭ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার ৩৩৯ টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
এসএম/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।