ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

১০ টাকা দিলেই ম্যানেজ!

জান্নাতুল ফেরদৌসী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
১০ টাকা দিলেই ম্যানেজ!

ঘটনা-১ সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রিকশা চালক। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য (ট্রাফিক)। রিকশা দেখেই হাতের লাঠিটা উচিয়ে বলতে লাগলেন, ‘মার খাবি বেটা। এইহান দিয়া আইসস কে। গাড়ি ঘুরা’।

ঢাকা: ঘটনা-১ সিগন্যালে দাঁড়িয়ে রিকশা চালক। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন দায়িত্বরত এক আনসার সদস্য (ট্রাফিক)।

রিকশা দেখেই হাতের লাঠিটা উচিয়ে বলতে লাগলেন, ‘মার খাবি বেটা। এইহান দিয়া আইসস কে। গাড়ি ঘুরা’।

কিন্তু পকেট থেকে ১০ টাকা আনসার সদস্যের হাতে দিয়ে সুকৌশলে কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা সংলগ্ন গোলচত্বরের সিগন্যাল পার হয়ে গেলেন চতুর রিকশাচালক।

ঘটনা ২- ফার্মগেট থেকে বাংলামোটরমুখী সড়ক। সার্ক ফোয়ারার গোলচত্বরে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যের ঠিক পেছনেই সবজিভর্তি ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন এক ভ্যানচালক। কিন্তু সেদিকে নজর নেই ট্রাফিক সদস্য আবদুল হাইয়ের।

ঘটনা-৩ শাহবাগ থেকে  মিরপুরমুখী লেন। সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস। স্বাভাবিকভাবে সিগন্যাল ছাড়ার পর সামনে এগোনোর জন্য টান দিয়েছে বাসটি। কিন্তু এরই মধ্যে হঠাৎ একটি রিকশা চলে এসেছে গাড়িটির ঠিক সামনে। রিকশাচালককে বাঁচাতে জোরে ব্রেক কষলেন গাড়িচালক নয়ন। সাথে সাথে যাত্রীরা দুলে উঠলেন দোলনার মত। ইঞ্জিনের উপর বসা যাত্রীদের একে অপরের গায়ের উপর পড়ে যাওয়ার উপক্রম। অথচ এই সড়কে রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ।

সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় এসব চিত্র।
দেখে গেল, রিক্সা ও ভ্যানচালকদের থেকে ৫-১০ টাকা ঘুষ নিয়ে এভাবে এগুলোকে মূল সড়কে চলতে দিচ্ছেন কর্তব্যরত ট্রাফিক ও আনসার সদস্যরা।

ব্যাপারটিতে জিজ্ঞেস করা হলে এক আনসার সদস্য বলেন, ‘১০ টাকা ২০ টাকা পেয়ে সকালের নাস্তার টাকাটা উঠে যায়। সাড়ে আট হাজার টাকা বেতনে কি জীবন চলে?

আরো বললেন, ‘ওদেরকে (ভ্যান-রিক্সাচালক) তো জোর করা হয় না। তারপরও ওরা সড়কে উঠে। তারা যদি আমগো হাতে টাকা গোছায়ে দেয়, আমরাও তো না করতে পারি না। ’

ট্রাফিক পুলিশ সদস্য আব্দুল হাইয়ের বক্তব্য,‘কি করবো বলেন, নিয়ম তো আছে এই সড়কে ওরা উঠলে ওদের বাহনটা আটকানো। কিন্তু সারা দিনে ওরা কত পয়সা রোজগার করে। গাড়ি আটকালে তো ওরা না খেয়ে মরবে। তাই মাঝে মাঝে দেখেও না দেখার ভান করি। ’

তবে যাত্রীদের বক্তব্য তিক্ত। মিরপুর থেকে মতিঝিলে যাচ্ছেন ব্যাংকার শফিক আহমেদ। রাজধানীর মূল সড়কগুলোতে অযান্ত্রিক বাহন যানজটে কতটা প্রভাব ফেলে এমন প্রশ্নের জবাব তিনি জানালেন, যানজটের প্রধান কারণই তো এরা (রিক্সাচালকরা)। এরা এসে রাস্তার বেশিরভাগ জায়গা দখল করে। ফলে বড় বাস বা ট্রাক তাদের গতিতে চলতে পারে না। এগুলো বন্ধ হলেও যানজটও কমবে শতকরা ৭০ ভাগ।

তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আরেক যাত্রী ফাহমিদা আকতার বললেন, দোষ তো ওদের (চালকদের) নয়। দোষ ট্রাফিকদের। তারা টাকা নিয়ে ওদের চলাচল করতে দেয় বলেই তারা চলতে পারে এবং যানজটের সৃষ্টি হয়।

৬নং বাসের চালক বললেন তার ভাষায়, ‘হেগো জন্য মনে করেন গাড়ি টান দেবার পাড়ি না। চিপাচাপা দিয়ে বের হয়ে সামনে আহে। গালি দিলেও শুনে না। ট্রাফিকরা তো হেগো টেকায় চা-বিড়ি খায়। ’

রিক্সাচালকরাও যেন বেশ সহনীয়। জানালেন, ‘১০-৫ টেকা নিয়া ছাইড়া দেয় গাড়ি। না দিলে তো গাড়ি আটকাইবো। তহন আবার ১ হাজার টেকা দেওন লাগবো। ’ এই হলো রাজধানীর প্রতিদিনকার বাস্তবতা।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির এক হিসাব অনুযায়ী (বিআরটিএ), রাজধানীতে প্রতিদিন গাড়ি চলাচল করছে ৮ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪শ ৬৯টি। ঢাকা শহরের মানুষের সংখ্যা অনুযায়ী কমপক্ষে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা দরকার। কিন্তু রয়েছে মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ রাস্তা।

বিআরটিএ’র তথ্যমতে, শহরের চলাচল করছে এমন লাইসেন্সকৃত রিকশার সংখ্যা প্রায় ৭৯ হাজার। লাইসেন্সবিহীন রিকশার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। যা যানজটের অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
জেডএফ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।