ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ট্রেন যাত্রায় সঙ্গী ‘মেয়েবেলা’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
ট্রেন যাত্রায় সঙ্গী ‘মেয়েবেলা’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আগে চলন্ত বাস-ট্রেনে অনেককে বই পড়তে দেখা যেতো। আবার হকারেরও দেখা মিলত যারা ফেরি করে বই-ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন। যাত্রা পথে সময় কাটাতে বই ছিল মোক্ষম হাতিয়ার।

পারাবত এক্সপ্রেস থেকে: আগে চলন্ত বাস-ট্রেনে অনেককে বই পড়তে দেখা যেতো। আবার হকারেরও দেখা মিলত যারা ফেরি করে বই-ম্যাগাজিন বিক্রি করতেন।

যাত্রা পথে সময় কাটাতে বই ছিল মোক্ষম হাতিয়ার।

কিন্তু এখন এমন দৃশ্য সচরাচর চোখে পড়ে না। বেশিরভাগ লোকজনকেই স্মার্টফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। কিন্তু পারাবত ট্রেনের টয়লেটের দরজার সামনে আলোতে একজনকে বই পড়তে দেখে চোখ আটকে গেলো। অবশ্য ট্রেনের মধ্যেও বেশিরভাগ যাত্রীর হাতেই মোবাইল লক্ষ্যণীয়।

আধুনিক যুগে তারও হয়তো যথার্থ কারণ পাওয়া যাবে। এখন সব বই পাওয়া যাচ্ছে অনলাইনে। লাইব্রেরির জায়গা দখল করে নিচ্ছে ই-লাইব্রেরি। অনেকে মনে করেন, এক সময় আসবে যেদিন এই বই পড়ার দৃশ্য জাদুঘরে স্থান করে নেবে। ঠিক যেভাবে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য গরুর গাড়ি, ঢেকিতে ধান ভানার দৃশ্য শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরে স্থান করে নিয়েছে।

বই পড়া এই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলতেই আলাপ জমে উঠল। নাম মাহমুদুল হাসান। কমলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেকনিশিয়ান পদে চাকরি করেন। ছোট বেলা থেকেই তার বই পড়ার নেশা। শুরুটা সেই খিলপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (নোয়াখালীর চাটখিলের) থেকে। স্কুলের লাইব্রেরি থেকে নিয়মিত বই তুলতেন, পড়া শেষে আবার ফেরত দিতেন। তার পছন্দের লেখক শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়। প্রিয় লেখকের লেখা ‘চরিত্রহীন’ এর সংলাপ আজও মনে আছে।

কবিতা পছন্দ বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের। কলেজ জীবনে টুকটাক কবিতাও লিখেছেন। এখন আর লেখা হয়ে ওঠে না। কিন্তু পড়াটা ধরে রেখেছেন সযতনে। সুযোগ পেলেই বই পড়েন। তবে কাজের ব্যস্ততার কারণে খুব একটা হয়ে ওঠে না। সিলেট থেকে ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন হাতে সময় অনেক তাই এক বন্ধুর কাছ থেকে তসলিমা নাসরিনের মেয়ে বেলা বইটি চেয়ে এনেছেন। সেটাতেই মগ্ন ছিলেন। বইয়ের নাম দেখতে চাইলে লাজুক হাসি দিয়ে বইয়ের কভার উল্টে ধরেন।  

বই পড়া নিয়ে আলোচনা উঠতেই বললেন, বই পড়লে বিচিত্র নলেজ অর্জন করা যায়। এখনকার ছেলে মেয়েরা তো খুব একটা বই পড়তে চায় না। তারা ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। স্মার্টফোন অনেক সুযোগ এনে দিয়েছে তাদের সামনে। বলা যায় মস্তবড় সুযোগ। যদি সেই সুযোগ কাজে লাগায়, তাহলে অনেক লাভবান হবে তারা। এখন চাইলে এক ক্লিকেই যে কোনো বই পড়ে নেওয়া যায়।

নতুন প্রজন্ম ফেসবুক নির্ভর হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তারা সমাজ-সামাজিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। পারিবারিক সম্পর্ক তাদের কাছে গৌণ হয়ে যাচ্ছে। তাদের বলয়টা হচ্ছে বন্ধুবান্ধবকে ঘিরে। এতে এক ধরনের সামাজিক সংকট দেখা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৬
এসআই/ আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।