ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নদীর কূলে কূলে

নৌবিহারে বুড়িগঙ্গা হবে বিনোদনের প্রাণ

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
নৌবিহারে বুড়িগঙ্গা হবে বিনোদনের প্রাণ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহর টেমস নদীর তীরে। প্যারিসের পাশে আছে সিন, জার্মানির বনের অবস্থান রাইনের তীরে। তেমনি এই বাংলায় ঢাকার চারদিক ঘেঁষে আছে বুড়িগঙ্গা...

বুড়িগঙ্গা ঘুরে: যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহর টেমস নদীর তীরে। প্যারিসের পাশে আছে সিন, জার্মানির বনের অবস্থান রাইনের তীরে।

তেমনি এই বাংলায় ঢাকার চারদিক ঘেঁষে আছে বুড়িগঙ্গা।

টেমস, সিন বা রাইনের মতো শহর ঘেঁষা নদী বুড়িগঙ্গা হলেও খুব একটা আলো ছড়ায় না এর জলরাশি। অথচ বিশ্বে শহর তীর সংলগ্ন নদীগুলো এক মনোরম বিনোদনের কেন্দ্র; কোথাও নৌকা ভ্রমণ, কোথাও স্পিডবোট, লঞ্চ বা জাহাজ ভ্রমণে জগতজ্যোতি খ্যাতি সেগুলোর।

এভাবে উদাহরণ দিয়ে না বললেও রাজধানী ঢাকায় অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র যে বুড়িগঙ্গা হতে পারে সেটি প্রকাশে ভুল করলেন না মাঝি মো. লিটন। তার কথাতেই মনে পড়ে গেলো আধুনিক সভ্যতায়, নগর উন্নয়নে-বিনোদনে একটি নদী কত বড় নিয়ামক। লিটনের সঙ্গে কথা বাদামতলীর রকেটঘাটে। এ পারের ঘাট থেকে ওই পাশের জিঞ্জিরায় চলাফেরার নাও মাঝি এই মধ্যবয়সী।

কথা প্রসঙ্গে লিটন বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে মানুষ নিত্যদিনের প্রয়োজনে এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করেন। তবে এই গাঙ যে ঘোরাফেরার অন্যতম স্থান হয়ে উঠতে পারে, এটি আমি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি। সেজন্য চাই সরকারের একান্ত ইচ্ছা। ময়লা-আবর্জনা আর কালো পানির পরিবেশে কেইবা ঘুরতে আসবে বলেন! কেবল চারপাশটা একটু সাজানো-গোছানো হলেই সম্ভব নতুন কিছু।
হাত দিয়ে দেখিয়ে তিনি বলেন, ঘাটের পাশে এত্তোগুলো ময়লা! ফলমূলের খোসা, ঘাটে ছড়ানো-ছিটানো ইট-বালু। আর পানির দুর্গন্ধের কথা না হয় বাদই দিলাম।

তিনি আরও বলেন, এপার থেকে ওইপারে যেতে ভাড়া জনপ্রতি মাত্র ৫ টাকা। সব খরচ বাদ দিলে রোজ আয় ২০০’র মতো। মূলত আয় তো আরও বেশি হয়, তবে ঘাট খাজনা ৮০, মহাজনের নৌকা ভাড়া ৬৫, নাস্তা, খাওয়া-দাওয়া, চা-পানে চলে যায় আরও ২০০। সব বাদেই খরচ গুণতে হয়। এ কাজ করেই কাটিয়ে দিলাম জীবনের অন্তত ২৫টা বছর। ছেলেকে বড় করেছি, সে এখন চাকরি করে, এক মেয়ের বিয়ে হলো। আর ছোট মেয়ে পড়াশোনা করছে।

কষ্টের সুরে লিটন বলেন, নদীর আয়ে আমি তো জীবন পার করলাম, কিন্তু নদীর কিছু হলো না!

কালাম মাঝির বিষয়টাও মোটামোটি অভিন্ন। লিটনের মতো থাকেন একই জায়গায় জিঞ্জিরাতে। এখানে বেশিরভাগ মাঝিই হলেন- বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুরের আদি বাসিন্দা।

ভ্রমণ প্রসঙ্গে কথা শুনে কালামও যোগ করলেন, শুক্র-শনি আর অন্য ছুটির দিনগুলোতে মানুষের খানিক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। অনেকে এসে পরিবার-পরিজন নিয়ে নৌকা ভাড়া করে ঘুরে বেড়ান। ঘণ্টায় শ’ টাকায় ৫/৬ জন ঘুরতে পারেন; এতে মুক্তমনে হাওয়া খাওয়া, দারুণ পরিবেশ উপভোগ করা যায়। কিন্তু বাস্তবে এমন মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কম, নদীর পরিবেশ যদি আরও ভালো করা যেতো, তবে মানুষের ভিড় লেগে থাকতো প্রতিদিনই। যাতে অপূর্ব এক বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হতো বুড়িগঙ্গা।
এ কথায় সায় না দিয়ে উল্টো বিরোধিতা করলেন খোরশেদ, খলিল, ফারুক এবং মানিক মাঝি। কারণ একটাই ‘দূষণ’। বললেন, কেরানীগঞ্জের অংশে দূষণ খানিকটা কম,  অন্যদিকে মোহাম্মদপুর, বছিলা এবং ঢাকা উদ্যানের নদী অংশেও দূষণ তুলনামূলক ক্ষীণ। কিন্তু সেখানে নৌকা ভ্রমণ তো হয় না, এক্ষেত্রে চাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ। অন্তত মাস তিন পরপর হতে পারে নৌকা বাইচের আয়োজনও। পাশাপাশি বাদামতলী, সদরঘাট, বাবুবাজার অংশে যেখানে নৌকা চলাচল অব্যাহত সেখানে মারাত্মক আকারে পৌঁছেছে দূষণ। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই পারে এখানে নৌবিহারের সম্ভাবনা জাগাতে।

তারা আরও বলেন, একটা সময় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাহন ছিল নৌকা। নৌকা নিয়েই দূর-দূরান্তে ভ্রমণ করতেন দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। ছিল পাল তোলা নাও বাহার। কালের পরিক্রমায় বিলীন হয়েছে বহু নদী-খাল। একইসঙ্গে হারাচ্ছে নৌকা। অন্তত ঐতিহ্য-বিনোদন হিসেবেও নৌকাভ্রমণ টিকিয়ে রাখা দরকার। নয়তো মহিষ, গরুর গাড়ি কিংবা ঢেঁকির রেখায় বিলুপ্ত দশা না হয়ে যায় জলযান নাওয়ের!

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।