ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শিশির ভেজা অগ্রহায়ণের দরজা

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
শিশির ভেজা অগ্রহায়ণের দরজা ছবি: দীপু মালাকার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দরজায় অগ্রহায়ণ। গঞ্জের সকালগুলো শুরু হয় একটু দেরিতে। সকালে ঘাষের উপর দিয়ে হাঁটতে যেয়ে পা ভিজে ওঠে। রাতভর কুয়াশায় ভেজা ঘাষগুলো নরম হয়ে রয়। সকালে সূর্যের আলোতে মুক্তোর মতোই কিরণ ছড়ায় শিশিরবিন্দুগুলো।

দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে: দরজায় অগ্রহায়ণ। গঞ্জের সকালগুলো শুরু হয় একটু দেরিতে।

সকালে ঘাষের উপর দিয়ে হাঁটতে যেয়ে পা ভিজে ওঠে। রাতভর কুয়াশায় ভেজা ঘাষগুলো নরম হয়ে রয়। সকালে সূর্যের আলোতে মুক্তোর মতোই কিরণ ছড়ায় শিশিরবিন্দুগুলো।

পথের ধারে গাছের নিচে দাঁড়ালে মাথায় শীতল এক ফোঁটা শিশিরের ছোঁয়া পাওয়া যায়। ততক্ষণে আরো এক ফোঁটা শিশির জমতে শুরু করেছে পাতার ডগায়।

বাংলায় এখন কার্তিকের শেষ দিক। কার্তিককে কবিতায় ফুটিয়ে তুলে প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, 'শুয়েছে ভোরের রোদ ধানের উপরে মাথা পেতে/ অলস গেঁয়োর মতো এইখানে কার্তিকের ক্ষেতে। '

কার্তিকের ২০ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ ছিল গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। মনে হচ্ছিল একেবারে হাঁড় কাঁপানো শীত বুঝি চলে আসলো। মফস্বলের পথগুলোতে দুটি জামা গাঁয়ে দেয়ার লোক চোখে পড়ে। গ্রামের হাটগুলোতে বিকেলে নতুন, পুরাতন শীতবস্ত্রের বিকিকিনি চোখে পড়ে।

তবে ২৫ তারিখ সকালে হেসে উঠে তেজহীন রোদ। স্বচ্ছ আকাশের তলে উত্তরের হাওয়া কিছুটা কনকনে ভাবতোলে। রিকশা বা গাড়িতে চললে হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। শেষ বিকেল আর সকালে গাড়ির জানালা খোলা রেখে বসা যায় না।

সুনামগঞ্জের হাওড়গুলোতে পানি অনেক নিচে নেমেছে। হাওড়ের জমিগুলোতে লাঙ্গলবাইতে শুরু করেছেন কৃষকেরা। আবার ছোট ছোট জলাগুলোতে বাঁগদ দিয়ে সেচে ছোট মাছের সন্ধান করছেন ছেলে বুড়ো। জলের তলে বৈঠা ঠেকিয়েই নৌকা ঠেলে শাপলা ফুল ওঠাতে হচ্ছে।
কচুরিপানা ফুলের সৌন্দর্য রাস্তার দুপাড়ের জলাগুলোকে দিয়েছে রানীর রূপ। আমন ধানের শীষে উত্তরের হাওয়া খেলা করে। কিছুদিন আগের দমকা ঝড়ে আবার নুঁইয়ে পড়েছে ধানের শীষের ডগাগুলো। সেই ঢেউ বয়ে যায় অনেক দূর পর্যন্ত।

ভোরে শীতের ছোঁয়াতে ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটার সময় বুকের ওপর দুহাতের একটিকে আরেকটির ভেতর ভাঁজ করে রাখে গ্রামবাসী। বোঝা যায় শীত আসছে।

গঞ্জের দোকানগুলেতে কড়া লিকারের চা আর বিড়ির ধোঁয়া এই দুর্বল শীতকে পাত্তা দিতে দেয় না।

খুব দ্রুত সূর্যের আলো মিলিয়ে যায় এখন। সিলেট জকিগঞ্চের রাস্তার দু ধারে বিস্তৃত বিলে সূর্যের লাল আলো আছড়ে পড়ে শেষ বিকেলে। হেমন্তের শুভ্র নীলাভ আকাশের প্রতিচ্ছবি পড়ে বিলের পানিতে। রাতের আকাশে খোলার মতো জ্বলজ্বলে চাঁদ পূর্ণ হওয়ার অপেক্ষা। পূর্ণিমার আলোয় ভরিয়ে তুলবে এই ধরা।

জকিগঞ্জের দক্ষিণে সরু নদী কুশিয়ারা। ওপারে ভারতের করিমগঞ্জ। শান্ত রূপে ঘোলা পানির কুশিয়ারা। পানির ওপরে বাতাস খেলা করে গেলেও নৌকার দাঁড় ছাড়া বড় শব্দ তৈরি করে না। নৌকায় দুই দেশে যাত্রী পরিবহন হয় দু’একজন।
এখানকার মানুষের অনেক স্বজন রয়েছেন করিমগঞ্জে। শীত আসার আগেই অনেকেই আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরে আসছেন।

কুলাউড়া শহুরে পরিবেশ। ভোরের আলো ফুটলেও শুক্রবারের সকাল শুরু হয় দেরিতে। এই শীত শীত ভাবে শীতবস্ত্র নিয়ে প্রতারিত হতে নয় মানুষদের। কারণ সকালে শীতের বিজ্ঞাপন দিলেও কার্তিকের দুপরে কিন্তু শীতবস্ত্র বোঝা হয়ে উঠবে।

বিকেলের হাটে এখনো শীতের সবজি খুব বেশি উঠেনি। বরং ঘরের সঙ্গে মাঁচা বেয়ে বেড়ে উঠছে সিম, কচুর লতা, লাউয়ের ডগা। জমিগুলোতে চাষ শুরু হয়েছে ফুল কপি, বাঁধা কপি, মূলার।

এই কার্তিকের সৌন্দর্যে বিভোর কবি আবারো বেঁচে ওঠার স্বপ্ন দেখেন। তাইতো কার্তিকের শীতের আগমনের ভোরেই আসতে চান তিনি।
জীবনানন্দ কার্তিকের প্রেমে মত্ত হয়ে লিখেছেন, 'আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে.... হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে...'।
হেমন্তের নবান্নের উৎসবের শেষ দিকে, অর্থাৎ অগ্রহায়ণ মাস জুড়েই শীতের দাপট বাড়বে। আগুনের পাশে না বসে মুখে তোলা যাবে না পিঠা-পুলি।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৬
এমএন/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।