ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান বেদেরা

সাইফুর রহমান রানা, ডিভিশনাল স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান বেদেরা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নদীর কোল ঘেঁষে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন আর ছেঁড়া কাপড়ের তাবু বানিয়ে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে অভ্যস্ত বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন।

রংপুর: নদীর কোল ঘেঁষে খোলা আকাশের নিচে পলিথিন আর ছেঁড়া কাপড়ের তাবু বানিয়ে যাযাবরের মতো জীবন কাটাতে অভ্যস্ত বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন।

এ সম্প্রদায়ের লোকেরা জীবিকার তাগিদে বছরের অর্ধেক সময়ই নৌকা নিয়ে ছুটে বেড়ায় দেশের নানা প্রান্তে।

সাপ খেলা ও তাবিজ বিক্রিই তাদের আয়ের উৎস। এ আয় দিয়ে সংসার চালাতে হয় তাদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের নৌকায় এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রতিটি নৌকাতে রয়েছে সোলার আর টিভির ব্যবস্থা। বাপ-দাদার পুরোনো পেশাটি তারা আঁকড়ে ধরে আছেন যুগ যুগ ধরে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এ পেশা টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ পৌর শহরের যমুনেশ্বরী নদী সংলগ্ন মহল্লা ফেসকি পাড়ায় গেলে প্রথমে বেদে পল্লীতে থাকা নারীরা ছবি তুলতে ও কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর কথা হয় ঢাকা সাভার থেকে আসা বেদে সর্দার ফারুকের সঙ্গে।

ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, বেদে পল্লীর মেয়েদের অপরিচিত কারও সঙ্গে কথা বলা বা ছবি তোলা নিষেধ আছে। তাদের এই পল্লীতে ১২টি পরিবার বাস করে। আয়ের প্রধান উৎস গাছগাছালির তাবিজ বিক্রি, সাপ ধরা ও সাপের খেলা দেখানো। ছয় মাসের জন্য আমরা বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি। এই ছয় মাস প্রতিটি পরিবারের পক্ষ থেকে সর্দার হিসেবে আমাকে প্রতি দুই মাস অন্তর অন্তর এক দিনের আয় আনুমানিক ৭-৮ হাজার টাকা দিতে হয়।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত করার জন্য আমরাও ‍আর এ পেশায় থাকতে চাই না। শুধুমাত্র বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। আমাদের দলের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখানোর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছে। সেই দুইবেলা বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখান।

তিনি আরও বলেন, এ পেশা আর ভালো লাগে না। বেদে সম্প্রদায় বলে সাধারণ মানুষরা আমাদের খোটা দেয়। আমরা সবাই মুসলমান। তাই এ পেশা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাই।

এ বিষয়ে বদরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বিমলেন্দু সরকার বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে তাদের এ পেশা অবশ্যই ছাড়তে হবে। কারণ বাচ্চাদের লেখাপড়ায় শিক্ষিত করলেই তারা আর এ পেশায় থাকতে চাইবে না। তাদের মনে রাখতে হবে যে, লেখাপড়ার বিকল্প নেই। তাদের সন্তানদের সমাজের আর ১০টা বাচ্চার মত এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্বও তাদের। তা না হলে তারা আরও পিছিয়ে পড়বে।

বদরগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠির জন্য কিছু কিছু কাজ করছে। তবে বেদে সম্প্রদায় যাযাবর হওয়ায় তাদের সাহায্য সহযোগিতা করা কষ্টকর।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
এনটি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।