বগুড়া: বগুড়ার সদর উপজেলায় খান্দার এলাকায় আবু হাসান (৪৪) নামে এক ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) আহত আবু হাসানের স্ত্রী মোছা. নুসরাত জাহান তানিয়া জানান, হত্যার উদ্দেশ্যে তার স্বামীকে ছুরিকাঘাতসহ এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এ ঘটনায় তিনি সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনিসহ তাদের পরিবার।
আহত আবু হাসান বগুড়া শেরপুর উপজেলার সালফা গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে। তিনি বগুড়া সদর উপজেলার ঠনঠনিয়া শহীদ নগর মণ্ডলপাড়া এলাকার বাসিন্দা। এলাকায় ইন্টারনেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন আবু হাসান।
জানা যায়, গত ৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৭টার দিকে শহরের খান্দার বাজার এলাকায় আবু হাসানের ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা। তার দুই পায়ে ছুরিকাঘাতসহ মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করা হয়। পরে তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় আহত আবু হাসানের স্ত্রী মোছা. নুসরাত জাহান তানিয়া ৮ অক্টোবর সদর থানায় বগুড়া সদর উপজেলার মালগ্রাম জেলাদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. আ. সামাদের ছেলে শামীম আহম্মেদ (৪৫) ও অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে নুসরাত জাহান তানিয়া উল্লেখ করেন, আমার স্বামী মো. আবু হাসান একজন ইন্টারনেট ব্যবসায়ী। পূর্বে থেকেই নামীয় আসামি মালগ্রাম জেলাদার পাড়ার বাসিন্দা শামীম আহম্মেদের সঙ্গে আমার স্বামীর জমা-জমি সংক্রান্ত টাকা-পয়সা নিয়ে মনোমালিন্য চলছিল। আগে থেকেই আসামি শামীম বিভিন্ন সময় আমার স্বামী আবু হাসানকে রাস্তাঘাটে দেখলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ মারধর করে খুন জখম করবে মর্মে হুমকি দিতেন। গত ৫ অক্টোবর সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার সময় বগুড়া সদরের খান্দার বাজারের সুজনের গ্যারেজের সামনে আমার স্বামীকে দেখতে পেয়ে ওই আসামি প্রাণনাশের হুমকি দেন। এমতাবস্থায় সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে আবু হাসান বগুড়া সদর থানাধীন ঠনঠনিয়া শহীদ নগর মণ্ডলপাড়ায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সনি সাইবার নেট অফিসে অবস্থান করছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা ৬ থেকে ৭ জন ব্যক্তি অফিসে এসে নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অফিসের বাইরে আসতে বলেন। আমার স্বামী অফিসের ভেতরে কথা বলার চেষ্টা করেন। এসময় অজ্ঞাতনামা আসামিরা একটি স্পাইসিং মেশিন (যার মূল্য আনুমানিক ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা) নিয়ে আমার স্বামীকে টেনেহিঁচড়ে অফিসের বাইরে নিয়ে আসে তারা। এরপর ধারালো বার্মিজ চাকু দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীর দুই-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পর পর আঘাত করে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করে।
একপর্যায়ে আসামিরা আমার স্বামীকে টেনেহিঁচড়ে খান্দার বাজারের সুজনের গ্যারেজের সামনে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১ নং নামীয় আসামির পা ধরে মাপ চাইতে বলে। ক্ষমা চাইতে দেরি করলে ১নং আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা কাচের বোতল দিয়ে হত্যার উদ্দেশে আমার স্বামীর মাথায় সজোরে আঘাত করে গুরুতর জখম করে। তখন আমার স্বামী নিরুপায় হয়ে লোকজনের সামনে ১নং আসামির কাছে ক্ষমা চান।
সেসময় স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আসামিরা বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখিয়ে দ্রুত চলে যায়।
পরে আমার স্বামীকে উদ্ধার করে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শজিমেক হাসপাতালে রেফার্ড করেন বলেও মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
আহত আবু হাসানের স্ত্রী মোছা. নুসরাত জাহান তানিয়া বলেন, আমার স্বামী কখনো কারো সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ানোর মানুষই না। অভিযুক্ত শামীম আহমেদ সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ছুরিকাঘাত করেন। আমার স্বামীর জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও বলেন, অফিস থেকে স্পাইসিং মেশিনসহ আবু হাসানের মোবাইল ফোন, পকেটে থাকা নগদ টাকাও ছিনিয়ে নিয়েছে হামলাকারীরা। মামলার এজাহারে তাৎক্ষণিকভাবে এ অভিযোগ লিখতে ভুলে যাই। এই হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি আমরা। আমার স্বামী বগুড়া জিয়া পরিষদের সদস্য। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
মামলার বিষয়ে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, এ ঘটনায় নামীয় একজনসহ অজ্ঞাত আরও ৬-৭ জনের নামে মামলা হয়েছে। এখনও কাউকে আটক করা যায়নি।
অভিযুক্তদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২৪
কেইউএ/এসএএইচ