ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা ছিলো নিউ জেএমবি সদস্যদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা ছিলো নিউ জেএমবি সদস্যদের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

থানা আক্রমণ করে অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা ছিলো আটক নিউ জেএমবি সদস্যদের বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

ঢাকা: থানা আক্রমণ করে অস্ত্র লুটের পরিকল্পনা ছিলো আটক নিউ জেএমবি সদস্যদের বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাতে নিউ জেএমবি সদস্য মো. সোহেল রানা ওরফে খাদেম ওরফে মোয়াজ্জিন ওরফে সোহেল ওরফে শহীদুল্লাহসহ (২৩) নিউ জেএমবির অপর সদস্য আব্দুল হাকিম, রাজীবুল ইসলাম, গাজী কামরুস সালাম সোহান ও আবু সালেহকে আটক করে র্যাব।
পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য বেড়িয়ে এসেছে বলে জানান মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি আরও জানান, ঝিনাইদহ মসজিদের ঈমাম মো. সোহেল রানার বাসা ছিলো জঙ্গিদের জন্য দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি সেফ জোন। সে ২০১৩ সালে জঙ্গিবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিউ জেএমবির  সারোয়ার তামিম গ্রুপের সঙ্গে যোগ দেয়।

সোহেলের ব্যবস্থাপনায় তার নিজ বাড়িতে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের বিভিন্ন মিটিং অনুষ্ঠিত হতো। সেখান থেকে একটি মিটিংয়ে থানা আক্রমন করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুটপাটের নির্দেশনা আসে।

আর থানা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব ছিল তারই উপর। সে সারোয়ার তামিম গ্রুপের একজন বিশ্বস্ত গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতো।

র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের এই পরিচালক বলেন, থানায় আক্রমণের লক্ষ্যে সোহেল রানা থানার ভেতরে একজন এজেন্ট নিয়োগ করে। সেই এজেন্টের মাধ্যমে থানায় কতজন  পুলিশ সদস্য থাকেন, কার কখন ডিউটি পরিবর্তন হয়, কি পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুদ আছে, সেসব তথ্য গোপনে সংগ্রহ করতো সে।  

তিনি আরও বলেন, সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সারোয়ার বিভিন্ন জায়গায় গোপন নির্দেশনা সম্বলিত চিঠি সোহেলকে পাঠাতো। পরবর্তীতে সেগুলো নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতো সোহেল।

আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে মুফতি মাহমুদ আরো জানান, জঙ্গিবাদে মদদপুষ্ট ব্যক্তি যারা দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতো নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা ‘সারোয়ার-তামিম’ গ্রুপের সদস্যরা।

তিনি  বলেন, আটক সোহেলের প্রধান দায়িত্ব ছিলো বিভিন্ন স্থান থেকে অর্থ যোগান দেওয়া। একই রকম মদদপুষ্ট ব্যক্তি যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন তাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করতো সে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ২৮ লাখ টাকা আদান-প্রদানের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও বিভিন্ন অস্ত্র ক্রয়  ও বিস্ফোরক তৈরি করতে শামীমের সঙ্গে এক লাখ ২২ হাজার টাকা, সাইদের সঙ্গে দুই লাখ ১০ হাজার টাকা, রেজওয়ানের সঙ্গে পাঁচ লাখ টাকা, আমিন বেগের সঙ্গে তিন লাখ টাকা, সাইফের সঙ্গে তিন লাখ টাকা, শেলীর সঙ্গে চার লাখ ৬৫ হাজার টাকা, জাকিরের সঙ্গে তিন লাখ টাকা, সাইফুল্লাহর আত্মীয়র সঙ্গে চার লাখ টাকা এবং আরও নাম না জানা অন্যান্যদের সঙ্গে দুই লাখ তিন হাজার টাকার লেনদেনের কথা জানা গেছে।

গোপালগঞ্জ জেলার ভেড়া বাজার থানার আড়পাড়া গ্রামের গাজী কামরুস সলাম সোহান পেশায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ায়। সে ২০০৭ সালে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে গাজীপুরের ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স বিষয়ে বিএসসি শেষ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে সে তার বন্ধু সিফাতের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। পরে তাকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণের জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে সে বিস্ফোরক তৈরির শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পায়।  

কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার হোসেন পুর মোল্লাবাড়ির আব্দুল হাকিম ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় মাদ্রাসায় শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকার মাখাবাপুর উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন। তিনি ভালো বক্তা ও প্রশিক্ষক ছিলেন। আব্দুল হাকিম জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হন জসিম উদ্দীন রহমানির মাধ্যমে। পর্যায়ক্রমে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) শীর্ষ পর্যায়ে চলে যান। সারোয়ার-তামিম গ্রুপের কর্মীদের মটিভেটেড করাই ছিল তার প্রধান কাজ।

মাগুরা জোলার সদর থানার রামনগর গ্রামের রাজীবুল ইসলাম ওরফে রাজীব ওরফে আহমেদ ছিলেন সারোয়ার তামিম গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। সে আধা সয়ংক্রিয় অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে দলে শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করে। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সালে পর্যন্ত জসিম উদ্দীন রহমানির ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলো সে। ঢাকা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষে করে ফাইভ স্টার সিমেন্ট কোম্পানির সেলস রিপ্রেজেনটিটিভ কর্মরত ছিলো রাজীবুল।

সারোয়ার তামিম-গ্রুপের শারীরিক ও কারাতে প্রশিক্ষক ছিলেন চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার তৃলোনা গ্রামের শেখ মো. আবু সালেহ । ২০০২ সালে মামুন নামের এক জঙ্গির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হয় সে। ২০০৩ সালে সে কারাতে শেখার জন্য  কলাবাগান থানা এলাকার কিউকুশান নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়। ২০০৯ সালে ব্লাক বেল্ট পেয়ে জঙ্গিদের কারাতে প্রশিক্ষণের জন্য নিযুক্ত হন তিনি।  

মুফতি মাহমুদ বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর দেশব্যাপী জঙ্গি বিরোধী অভিযানে তারা সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। তাছাড়া বেশ কয়েকজন জঙ্গির আত্মসমর্পণের পর তাদের মনোবলে ভাঙন ধরে। ফলে আত্মগোপনে থানা কিছু জঙ্গিদের সংগঠন চাঙ্গা রাখতে তারা গোপনে সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলো।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
পিএম/আরএইচএস

**ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় নব্য জেএমবি
**রাজধানীতে জেএমবি’র ৫ সদস্য আটক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।