ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ভাড়া শিশু নিয়ে নারী চোরদের দৌরাত্ম্য ঢাকার মার্কেটগুলোতে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
ভাড়া শিশু নিয়ে নারী চোরদের দৌরাত্ম্য ঢাকার মার্কেটগুলোতে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হঠাৎ শুনি, মেয়েটাকে মারবেন না, ভাড়া করে ওকে আনা। পেটের দায়েই এই কাজে নামতে হয়েছে। নারী চোরদের এমন আর্তনাদ শুনে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে সবাই সবক্ষেত্রে...

ঢাকা: হঠাৎ শুনি, মেয়েটাকে মারবেন না, ভাড়া করে ওকে আনা। পেটের দায়েই এই কাজে নামতে হয়েছে।

নারী চোরদের এমন আর্তনাদ শুনে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে সবাই সবক্ষেত্রে ছাড়া পান তা নয়। অনেককেই পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।

রাজধানীর নারী চোরদের প্রতিদিনের এমন ঘটনা সম্পর্কে বলছিলেন, নিউ মার্কেটের রাফিন কর্নার নামের কসমেটিক দোকানের মালিক সাইফুদ্দীন খান। তিনি জানান, শিশুদের ভাড়া করে নতুন কৌশলে তরুণীরা চুরি করছে নিউ মার্কেট এলাকায়।  

রাজধানীর নিউ মার্কেটের বিভিন্ন দোকানির কাছে এ রকম নানা অভিজ্ঞতার কথা জানা যায়।

সাইফুদ্দীন খান বাংলানিউজকে বলেন, রাজধানীতে নারী চোর ও পকেটমারের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এদের প্রায় সবাই ১৮ থেকে ২০ বছর বয়সী। প্রত্যেকেই বোরখা পরেন। চুরির জন্য এখন তাদের কৌশলগত সঙ্গী শিশু। সন্তান পরিচয়েই শিশুদের সঙ্গে রাখছেন নারীরা। ধরা পড়লে যেন মানবিক কারণে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা না হয়, সে কারণেই এ অপকৌশল তাদের। শিশুদের দিয়েও খেলার ছলেই চুরি করানো হচ্ছে।
নিউ মার্কেটের রাফিন কর্নারের এই বিক্রেতা বাংলানিউজকে আরও বলেন, ভাড়া করা শিশুদের নিয়ে ক্রেতা সেজে তারা চুরি করতে আসেন। আসেন দলগতভাবে। সবার সঙ্গেই থাকে শিশু।

নারী চোর সম্পর্কে গাউসিয়া মার্কেটের ‘আলী কালেকশন’র মালিক কাপড় ব্যবসায়ী মো. হুমায়ুন বলেন, নারী চোররা দলগতভাবে ভিড়ের মধ্যে সুযোগ নেয়। একসঙ্গে দোকানে ঢুকে এটা ওটা ধরে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি করে। আর সুযোগ বুঝেই মালামাল ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়। ধরা পড়লেই সঙ্গে থাকা বাচ্চার কথা বলে পার পেয়ে যায়। নারী হওয়াতে আমরাও অনেক সময় ছেড়ে দেই।

চলতি বছর তার দোকানে প্রায় ১৫ জন চুরির অপরাধে ধরা পড়েছেন বলে জানান হুমায়ুন।

একই মার্কেটের স্বর্ণ ব্যবসায়ী মো. ফজলে রাব্বী জানান, চুরির ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ধরা পড়লে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আবার কখনও কখনও দয়া করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

এই নারী চোররা শুধু দোকানে চুরি করেন তা নয়,  ক্রেতাদেরও মোবাইল ও মানিব্যাগ চুরি করে থাকেন বলেন, ফজলে রাব্বী।

নিউ মার্কেটের চার নম্বর গেটের ফুটপাতের খুচরা বস্ত্র ব্যবসায়ী রিয়াদ জানান, চোরের জ্বালায় তারা অসহ্য অবস্থায় রয়েছেন। কয়েকদিন আগেও কয়েকজন নারী বোরখা পরে দোকানে আসেন। কেনাকাটার ফাঁকে তাদের একজন মালামাল চুরি করে পালানোর চেষ্টা করেন। একজন পালিয়ে গেলেও অন্য দুইজনকে ধরা হয়। পরে তাদের নিউমার্কেট থানায় সোপর্দ করা হয়।
 
নিউ মার্কেটে মেয়ের জন্মদিনের কেনাকাটা করতে এসছিলেন ফহমিদা হামিদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কেনাকাটার জন্য এসেছিলাম। সাড়ে ৬টার দিকে গাউসিয়ায় ভিড় ঠেলে ঢোকার পথে কিছু বুঝে ওঠার আগেই বোরখা পরা এক নারী আমার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। মার্কেটে অতিরিক্ত ভিড়ের মধ্যে আচমকা এই ঘটনায় আমি চিৎকার দিয়েও কাজ হয় না।

মার্কেটের ফুটপাত দখলের কারণে চুরির ঘটনা বেশি ঘটে বলে দাবি করেন ফহমিদা। কারণ উল্লেখ করে বলেন, চুরি করে সহজেই ফুটপাতের ভিড়ে লুকিয়ে যায় ওরা।

নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মার্কেটে এ ধরনের চুরির ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। তবে ঈদ, পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুনে বেড়ে যায় চোরদের উৎপাত।

তিনি বলেন, মার্কেটের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সাদা পোশাকে ও ইউনিফর্মে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অবগত করা হলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেই। তবে ধরা না পাড়া পর্যন্ত নারী চোরদের শানাক্ত করা কঠিন।

নারী চোরদের এ দৌরাত্ম্য কমাতে পুলিশ, দোকানি এবং ক্রেতারও মনে করেন নিরাপত্তা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
আরএটি/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।