ঢাকা, শনিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

জয়নুল উদ্যানে স্বস্তি, নগরীতে ব্যানার-তোরণের ‘জঞ্জাল’!

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
জয়নুল উদ্যানে স্বস্তি, নগরীতে ব্যানার-তোরণের ‘জঞ্জাল’! ছবি: অনিক খান- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শতবর্ষের প্রাচীন জয়নুল উদ্যান ময়মনসিংহ নগরীর চিত্তবিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর একমাত্র স্থান। নগরীর প্রধান এ বিনোদন কেন্দ্রের বাইরে ছায়াঘেরা পরিবেশ থাকলেও চরকি, নাগরদোলা, দোলনা আর চটপটি-ফুচকার দোকানের উৎপাতে হেঁটে চলাচল করা যন্ত্রণাদায়ক।
 

ময়মনসিংহ: শতবর্ষের প্রাচীন জয়নুল উদ্যান ময়মনসিংহ নগরীর চিত্তবিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর একমাত্র স্থান। নগরীর প্রধান এ বিনোদন কেন্দ্রের বাইরে ছায়াঘেরা পরিবেশ থাকলেও চরকি, নাগরদোলা, দোলনা আর চটপটি-ফুচকার দোকানের উৎপাতে হেঁটে চলাচল করা যন্ত্রণাদায়ক।

 

কিন্তু এ উদ্যানের সৌন্দর্য রক্ষা ও সবুজ শ্যামল ছায়াপথে প্রকৃতির কাছাকাছি আসা মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে স্থায়ী ও অস্থায়ী সব দোকানপাট উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। ব্রহ্মপুত্র নদের উপকণ্ঠে এ উদ্যানে পা রাখলেই এখন চোখে পড়বে অন্যরকম এক নান্দনিক পরিবেশ। যেনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে এ উদ্যান।

তবে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে দিনের পর দিন গাছ বা খুঁটিতে ঝোলানো ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড বা তোরণ এখনও জঞ্জাল পাকিয়ে রয়েছে। নগরীর সৌন্দর্য ফেরাতে প্রচারণামূলক এসব বিজ্ঞাপনী উপাদান এক সপ্তাহের মধ্যে নিজস্ব উদ্যোগে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

কিন্তু নির্দেশনার তিন দিন পরেও তা উপেক্ষিত থেকে গেছে। যদিও পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারও জন্য তারা অপেক্ষা করবেন না। সামনের সপ্তাহ থেকেই পোস্টার, ব্যানার, তোরণ ও বিলবোর্ড উচ্ছেদে জোর অভিযানে নামবেন তারা। এর মাধ্যমেই নগরীর দম বন্ধ হয়ে আসা অবস্থারও অবসান ঘটবে।

জানা যায়, নিত্যদিন সকাল-সন্ধ্যা সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ সংলগ্ন এবং যৌবনের জলতরঙ্গহীন ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা জয়নুল উদ্যান। নদী দেখা, সকালের প্রাতঃভ্রমণ, নির্জন দুপুর আর নৈসর্গিক বিকেল উদযাপনে নগরীর লোকজন উদ্যানে আসে।

কিন্তু উদ্যানের বাইরে বিভিন্ন অবৈধ দোকান পাট, শিশুদের বিভিন্ন রাইডের কারণে হাঁটা ও ঘুরে বেড়ানোর মতো পরিবেশ ছিলো না এখানে। ফলে নগরীর এ উদ্যানে প্রকৃতি, নিসর্গ, নির্মল বাতাস ছিলো বিপন্ন। জেলা প্রশাসন এসব ‘জঞ্জাল’ সরাতে উদ্যোগ নেয়। তাদের অভিযানে সম্প্রতি গুটিয়ে নেওয়া হয় এসব দোকান-পাট।

শুধু তাই নয়, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জয়নুল উদ্যানের এখানে-সেখানে নির্দেশনা সম্বলিত একাধিক বিজ্ঞপ্তি সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘অনুগ্রহপূর্বক পড়ুন এবং মেনে চলুন’ এ শিরোনামে ৯টি নির্দেশনা সম্বলিত এ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন নতুন জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান।

জেলা প্রশাসনের ইতিবাচক এমন পদক্ষেপের ফলে এখন পাল্টে গেছে জয়নুল উদ্যানের চেহারা। উদ্যানে আসা মানুষজন এখন মুক্ত বাতাসে নির্মল নিঃশ্বাস নিতে পারছে। নগরবাসীও জেলা প্রশাসনের এমন কার্যকরী পদক্ষেপের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছে।

এদিকে, প্রায় এক যুগ ধরে নগরীতে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনের উৎপাত চলছে। বৈধ-অবৈধ বিলবোর্ড, তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুনে ঢেকে যায় নগরীর সৌন্দর্য। গুরুত্বপূর্ণ মোড় থেকে শুরু করে সড়কবাতি, সড়কদ্বীপ এবং খুঁটির রক্ষা মেলেনি ‘সৌজন্য’ কিংবা কারও পক্ষে লাগানো এসব বিজ্ঞাপনী হাতিয়ার থেকে।

সড়ক দখল করে মেয়াদ উত্তীর্ণ শুভেচ্ছা সম্বলিত তোরণ নগরবাসীর জন্য হয়ে উঠেছে গলার কাঁটা। একই ঘটনা পরিলক্ষিত হয় ব্যানার-ফেস্টুনের ক্ষেত্রেও। কোনো সুনির্দিষ্ট দিবস ঢের সময় আগে পেরিয়ে গেলেও এসব ব্যানার, ফেস্টুন কিংবা তোরণ অপসারণ করা হয় না।

সূত্র মতে, নগরীর গাঙ্গিনারপাড়, চরপাড়া, নতুন বাজার, মাসকান্দা, টাউন হলসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়ক জঞ্জালমুক্ত করতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নগরের চেহারায় ক্ষত সৃষ্টি করা আত্মপ্রচারণার দৃষ্টিকটু তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ নগরীর স্বাভাবিক পরিবেশ আর সৌন্দর্য ফেরাতে তিনদিন আগে জেলা প্রশাসক খলিলুর রহমান নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ সম্পর্কিত একটি নির্দেশনা পোস্ট করেন।

হাতে চারদিন সময় থাকলেও এখনও এসব জঞ্জাল অপসারণে সাড়া পড়েনি।

তবে ময়মনসিংহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বাংলানিউজকে বলেন, অনেকেই নিজ উদ্যোগে তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণ করছেন।

‘আমরা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা অবধি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এ নির্দেশনা অবহিত করতে মাইকিং করছি। এসব প্রচারণার হাতিয়ার উচ্ছেদে আগামী সপ্তাহ থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১৬
এমএএএম/এসআরএস/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।