ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

মায়ানমারের ভেতরেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
মায়ানমারের ভেতরেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশে নয়, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের উৎস মায়ানমারের অভ্যন্তরে খুঁজতে হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

ঢাকা: বাংলাদেশে নয়, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের উৎস মায়ানমারের অভ্যন্তরে খুঁজতে হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক।

বুধবার (২২ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন জিএফএমডি’র প্রস্তুতি বিষয়ে জানাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ১০ ডিসেম্বর তিন দিনব্যাপী গ্লোবাল ফোরাম ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।

এতে বিশ্বের ৭৩টি দেশের ২০জন মন্ত্রীসহ সরকারি-বেসরকারি প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ প্রতিনিধি অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে চলমান রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বেশিরভাগ প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। এ মতবিনিময়ের কিছুক্ষণ আগেই ঢাকায় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশের উদ্বেগ জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল আহসান।

এ ব্যাপারে কামরুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর যে দমন-পীড়ন, তাদের বাড়িঘর লুট ও অগ্নিসংযোগ চলছে; সে ব্যাপারে আমরা আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। আমরা অবিলম্বে এ নির্যাতন নিপীড়ন বন্ধ করে রাখাইন রাজ্যে তাদের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।

জবাবে রাষ্ট্রদূত কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে কামরুল আহসান বলেন, রাষ্ট্রদূত এসব খবরকে সত্য নয় বলে জানিয়েছেন। তবে আমরা এ বিষয়ে আমাদের প্রতিবাদপত্র রাষ্ট্রদূতের কাছে হস্তান্তর করেছি।

মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিও থান্ট অবশ্য সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্যাগ করেন।

এদিকে এ ঘটনার পরপরই সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় দায়িত্বশীল দেশ হিসেবে যা যা করা প্রয়োজন, সবকিছুই করছে বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে মায়ানমারের রাষ্ট্রদূত মিও মিন্ট থান্টকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে আমাদের বক্তব্য জানিয়ে দিয়েছি। আরও যা যা করার আমরা করেছি। সাম্প্রতিক সংকট সৃষ্টির আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ানমারের প্রেসিডেন্ট এবং স্টেট কাউন্সিলরের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীও এ ইস্যুতে কথা বলেছেন। আমি নিজেও পাঁচবার মায়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তার সবকিছুই খোলাখুলিভাবে আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানানো সম্ভব নয়। আমরা সমস্যাটার মূলে সমাধান চেয়েছি।
 
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এ ধরনের বাধ্যতামূলক স্থানান্তরের সঙ্গে নিয়মিত অভিবাসনকে মেলানো ঠিক নয়। নিয়মিত অভিবাসনে এভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার নিয়ে কেউ পালিয়ে যায় না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে মায়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী এ সংকট সৃষ্টির পরে মায়ানমারের কারো সঙ্গে কথা বলেননি বলেও জানান শহীদুল হক।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জিএফএমডি’র সঙ্গে এ বিষয়টি মেলানো ঠিক হবে না। জিএফএমডি একটি বৈশ্বিক সম্মেলন, এ বছর যেটি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগের বছর তুরস্কে এবং আগামী বছর জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, এবারের জিএফএমডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, বিশ্ব সম্প্রদায় অভিবাসন ইস্যুতে এখন একটি গ্লোবাল কমপ্যাক্ট প্রণয়ণে একমতে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের প্রস্তাবিত একটি বৈশ্বিক চুক্তি। এর মাধ্যমে অভিবাসন, শরণার্থী ও মানবপাচার বিষয়ক সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে। ২০১৮ সালে বিশ্ব নেতারা এ চুক্তিটি অনুমোদন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

এবারের জিএফএমডিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও তুরস্কের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় যুক্ত হচ্ছে। জিএফএমডি মূল সম্মেলনের আগে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা দুই দিনব্যাপী আলোচনায় অংশ নেবেন।

এবারের সম্মেলনে কানেকটিভিটি ইস্যুকেও অভিবাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

** মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশের উদ্বেগ

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০১৬
জেপি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।