ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ঘুম যখন রেলস্টেশনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
ঘুম যখন রেলস্টেশনে ছবি: কাশেম হারুন-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি রেস্টুরেন্ট- কি নেই এ শহরে? যেখানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক শপিংমলগুলোতেও উপচেপড়া ভিড়। আয়েশী জীবন-যাপনের পাশাপাশি মানুষ যেখানে প্রতিনিয়ত বুনে চলেছেন রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

ঢাকা: বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি রেস্টুরেন্ট- কি নেই এ শহরে? যেখানে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গড়ে ওঠা অত্যাধুনিক শপিংমলগুলোতেও উপচেপড়া ভিড়। আয়েশী জীবন-যাপনের পাশাপাশি মানুষ যেখানে প্রতিনিয়ত বুনে চলেছেন রঙিন ভবিষ্যতের স্বপ্ন।

ঠিক তেমনি রাজধানী ঢাকার বিলাসবহুল জীবনের অপর পৃষ্ঠাতেও রয়েছে কিছু গল্প।

কর্মব্যস্ত মানুষজন যখন ‘ডিনার’ সেরে নরম বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছেন, তখনো খাবারের খোঁজ করছেন কিছু মানুষ। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে যখন রঙিন স্বপ্নে বিভোর, তখন কিছু মানুষ নিজেকে সঁপে দেন শহরের রঙিন আলোর নিচে।
দিনের আলোতে কর্মব্যস্ততার ভিড়েই মিশে থাকেন তারা। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন বিলাসবহুল জীবনগুলো আড়ালে যায় মূলত তখনই স্পষ্ট ফুটে ওঠে তাদের অবস্থান। রঙিন নিয়ন আলোও আড়াল করতে পারে না তাদের।

রাতে ঢাকায় রাস্তায় দেখা যায়, ফুটপাত, রেল-বাস-লঞ্চ স্টেশন, যেখানে সেখানেই ঘুমিয়ে আছেন কিছু মানুষ। সেই ঘুমে স্বপ্ন থাকুক বা না থাকুক বছরের প্রতিটা দিন এভাবেই ঘুমান যারা, তারা এই শহরের ছিন্নমূল মানুষ।

রোববার (২৭ নভেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টা। বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেনের জন্য অনেক যাত্রী অপেক্ষা করছেন। ছিন্নমূল মানুষদের অনেকেই যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে ঘুমানোর অপেক্ষা করছেন মো. সৈয়দ আলী (৭৫)।
বৃদ্ধ সৈয়দ আলী জানালেন, এ বয়সে তাকে দেখভাল করতে ছেলে-মেয়ে নেই। স্ত্রীকেও হারিয়েছেন বছর ছয়েক আগে। স্বাধীনতার পর থেকে তিনি ঢাকা শহরে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বয়সের ভারে গত ৪ বছর ধরে আর রিকশা চালাতে পারছেন না।

এখন পেটের টানে মানুষের কাছেই হাত পাততে হচ্ছে নিঃসঙ্গ সৈয়দ আলীকে। জন্মস্থান শেরপুরের নালিতাবাড়ি হলেও সেখানে নিজের ঘর-বাড়ি নেই। ঢাকা শহরে কর্মহীন সৈয়দ আলী ৪ বছর ধরে প্রতিদিনের ঘুমানোর স্থান এ রেলস্টেশন।

ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাগ্নিরা আছে। কিন্তু তাদের কাছে থাকেন না তিনি। তিনি বলেন, তারা গরিব মানুষ, কাম কইরা খায়। আমারে নইলে ১০/১৫ দিন খাওয়াইবো, হেরপরে তারাও কি তিতা (বিরক্ত) হইয়া যাইব না?
বাড়ি যান কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোরবানির ঈদে গেছিলাম। ইজতেমার পরে আবার যামু।

ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন এর মধ্যেই স্টেশনের নিরাপত্তা কর্মীরা এসে যারা ঘুমিয়ে আছেন তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন। সৈয়দ আলীকেও স্টেশন ছাড়তে বাধ্য করা হলো।

স্টেশন ছাড়তে ছাড়তে তিনি বলেন, শীতকালে ঘুমাইতে বহুত কষ্ট হয়। হেরপরে পুলিশ আইস্যা বারি মাইরা খেদায় দেয়।

কোথায় ঘুমাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেহি বাইরে যাই, ঘুম নাও হইবার পারে। ঘুমাইতে না পারলে বইয়া বইয়া রাইত পার কইরা দিমু।

কিছু না পাওয়ার জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোনো চাওয়াও নেই তার। যে ক’দিন বাঁচবেন কোনো রকমভাবেই কাটিয়ে দিতে চান সৈয়দ আলী।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
পিএম/আরবি/ওএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।