ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নিরাপদ পানি নিশ্চিতে গ্লোবাল ফান্ড গড়ার আহ্বান শেখ হাসিনার

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
নিরাপদ পানি নিশ্চিতে গ্লোবাল ফান্ড গড়ার আহ্বান শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ছবি: সংগৃহীত

পানি থেকে জীবন উৎসারিত আর পানিতেই জীবনের টিকে থাকা, এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। 

বুদাপেস্ট (হাঙ্গেরি) থেকে: পানি থেকে জীবন উৎসারিত আর পানিতেই জীবনের টিকে থাকা, এই আপ্তবাক্য স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।  

সোমবার (২৮ নভেম্বর) হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে বিশ্ব পানি শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে শেখ হাসিনা বলেছেন, পানির নিরাপত্তাই পারবে ভূ-পৃষ্ঠে মর্যাদার জীবন ও সুন্দর জীবন-যাপন নিশ্চিত করতে।

আর সে লক্ষ্য অর্জনে আমাদের সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যা করণীয় তার সবকুটু করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি।  

এসময় বিশ্ব পানি তহবিল গঠনেরও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।  

বুদাপেস্টের মিলিয়েনারিজ পার্কে এই শীর্ষ সম্মেলন এক ডজনেরও বেশি রাষ্ট্র কিংবা সরকারপ্রধান অংশ নিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা পানি বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা।  

তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, পানি জীবনের উৎস আবার পানিই জীবনকে টিকিয়ে রাখে। আমাদের সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি আর টেকসই পরিবেশের জন্য পানি একটি মৌলিক বিষয়।  

হাঙ্গেরি সরকার তথা প্রেসিডেন্ট জ্যানোস আদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যে শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে তা আমাদের সকলের জন্য মহামূল্যবান।  

বাংলাদেশের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পানি আমাদের সংস্কৃতিরই একটা বড় অংশজুড়ে রয়েছে, আমাদের জীবন ও জীবিকার জন্যও পানি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আর আজ এইখানে আমরা যে দেশটিতে বসে কথা বলছি, সে দেশটির পানির বৈশ্বিক ডিসকোর্স তৈরিতেই রয়েছে বড় ধরনের অবদান। আজ আমাদের স্বীকার করতেই হবে ২০১৩ সালে যে বুদাপেস্ট পানি শীর্ষ সম্মেলন হয়ে গিয়েছিলো, তারই অবদান হিসেবে আমরা ২০৩০ সালের বিশ্বের জন্য পানি সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা পেয়েছি।  

এসময় তিনি গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে গৃহীত হাই লেভেল প্যানেল অব ওয়াটার গৃহীত হওয়ার কথা স্মরণ করে বলেন, এই অধিবেশনে আমরা সকল রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানসহ অন্য নেতারা পানি সম্পর্কিত ইস্যুতে অগ্রাধিকার দিয়েছি।  

বক্তৃতায় পানি নিয়ে সাতটি পয়েন্ট অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। প্রথমেই তিনি কথা বলেন ২০৩০ সালের বিশ্ব এজেন্ডায় পানি ও টেকসই উন্নয়নের যে আন্তঃসংযোগ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে তা নিয়ে। সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, কোনো জাতীয়, আঞ্চলিক কিংবা বৈশ্বিক উন্নয়ন প্রচেষ্টার সঙ্গে পানি হতে হবে অবিচ্ছেদ্য ইস্যু কিংবা অংশ।

বিশ্বে এখন কোটি কোটি মানুষ সুপেয় পানির অভাবে রয়েছে, তারা মৌলিক স্যানিটেশন সেবা-বঞ্চিত, তাদের জন্য যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তা অপর্যাপ্ত ও অনিরাপদ, এই মত দিয়ে দ্বিতীয় পয়েন্টে শেখ হাসিনা বলেন, পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, নারী ও সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করেন তিনি।

জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে হুমকির মুখে থাকা দেশগুলোর জন্য পানি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। পানি সম্পর্কিত কোনো বিপর্যয় রোধ করা আজকের সময়ের জন্য জরুরি প্রয়োজন আর সে কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার উদ্যোগগুলোতে পানির বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে বলে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান বঙ্গোপসাগর তীরে ব-দ্বীপ রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।  
 
এই বিশ্ব ফোরামে চতুর্থ যে বিষয়টি শেখ হাসিনা তুলে ধরেন, তা হচ্ছে- পানির চ্যালেঞ্জ কেবলই এর অভাব কিংবা ঘাটতিকে ঘিরে নয়, বরং পানির অন্যায্য বণ্টনই আজ সবচেয়ে বড় সঙ্কট। আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর কার্যকর ব্যবস্থাপনাই হতে পারে এর সঠিক সমাধান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য পানি দরকারি, কিন্তু পানিস্বল্পতা আজ সবার জানা। আর সে কারণেই আমাদের এমন শস্য উৎপাদনের দিকে যেতে হবে যেন পানির প্রয়োজন অপেক্ষাকৃত কম, আর পানি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তিও আনতে হবে।

ষষ্ঠ পয়েন্ট হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রত্যেকরই যা কিছু ভালো উদ্যোগ তা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে হবে। হোক সে জ্ঞান, দক্ষতা, প্রযুক্তি কিংবা সামর্থ্য। পানির যথার্থ ব্যবহারে আমরা কেউ কোনো উন্নয়ন আনতে পারলে তা অন্যকেও দেবো এই প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।  

পানি সম্পর্কিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে অর্থায়নকে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার সপ্তম পয়েন্টে বলেন, আমি আবারও পানি নিয়ে বিশ্ব তহবিল গঠনের ওপর জোর দিচ্ছি। এই তহবিল দিয়ে গবেষণা, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ সম্ভব হবে। কোনো উদ্ভাবন কিংবা সমাধান এলে তার সেবা যেন তলানিতে পড়ে থাকা জনগোষ্ঠীর কাছেও পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের ওপরও গুরুত্ব দেন শেখ হাসিনা।  

নিরাপদ পানি সরবরাহে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) বাংলাদেশ এরই মধ্যে অর্জন করেছে, স্যানিটেশন খাতেও ব্যাপক অগ্রগতি নিশ্চিত করা গেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বিশ্ব ফোরামকে জানান, দেশের ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী উন্নত স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় রয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের সবার জন্য নিরাপদ খাবার পানি নিশ্চিত করা আর ৯০ শতাংশ মানুষকে উন্নত স্যানিটেশনের আওতায় আনার সরকারি অঙ্গীকারের কথাও এসময় তুলে ধরেন তিনি।  

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে হুমকির মুখে থাকা দেশ হিসেবে সরকার এরইমধ্য তা মোকাবেলায় ধারাবাহিক উদ্যোগ নিয়েছে, যার মধ্য পূর্ব-সতর্কতা ব্যবস্থা, সাইক্লোন সেন্টার, উপকূলীয় এলাকাজুড়ে সবুজ বেষ্টনী তৈরি বিশ্বের নজর কেড়েছে, বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্ষায় পানির ঢল, আর শুকনো মৌসুমে পানির অভাব, এ এক বিশেষায়িত চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশ মোকাবেলা করে আসছে। আর অপর নাজুক দিকটি হচ্ছে, দেশের উপরিতলের ৯২ শতাংশ পানিই আসে সীমান্তের ওপার থেকে। আর সে কারণে, আন্তঃসীমান্ত পানি বণ্টন একটি জটিল সঙ্কট হয়ে রয়েছে। গত দুই দশক আগে বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে। আর বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত ও নেপালের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক পানি-সহযোগিতার বিষয়টিও সঠিকভাবেই এগোচ্ছে।  

পানি আন্তঃদেশীয় অসমতাকে আরও ঘনীভূত করতে পারে এই আশঙ্কার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই সময়ে পানিসম্পদের সুরক্ষা, সাশ্রয়, সংরক্ষণ ও ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।  

তিনি বলেন, এতে যে কেবল পানির অসম ব্যবহারই দূর হবে তাই না, এরমধ্য দিয়েই পানির গতিপথ ধরে গড়ে ওঠা প্রতিটি সমাজ-সভ্যতায় আসবে শান্তি, স্থিতিশীলতা আর নিরাপত্তা।    

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৬
এইচএ/এমএমকে/

আরও পড়ুন
**দানিয়ুবের বুকে এক অপরূপ রাতের গল্প
** বুদাপেস্ট পৌঁছালেন প্রধানমন্ত্রী, ৪ ঘণ্টা বিলম্ব

** ত্রুটি সারিয়ে তুর্কমেনিস্তান থেকে ফের উড়লো প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট
** প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ তুর্কমেনিস্তানে
** প্রতি বিন্দু পানি প্রাধান্য দিতে বুদাপেস্ট সামিট
** বুদাপেস্টের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।