ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

আগুনে নিঃস্ব লুৎফর, তিথো বেগমের আহাজারি

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৬
আগুনে নিঃস্ব লুৎফর, তিথো বেগমের আহাজারি ছবি: শাকিল

‘আমার সব শেষ হইয়্যা গেছে, আমি এক্কেবারে ফতুর হইয়্যা গেছি। ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই! ও আল্লাহ তুমি আমার ওপর এমন গজব দিলা কেন? আমি নিঃস্ব হইয়্যা গেলাম।’

ঢাকা: ‘আমার সব শেষ হইয়্যা গেছে, আমি এক্কেবারে ফতুর হইয়্যা গেছি। ভিক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই! ও আল্লাহ তুমি আমার ওপর এমন গজব দিলা কেন? আমি নিঃস্ব হইয়্যা গেলাম।

ঢাকার মহাখালী-বনানী এলাকার কাড়াইল বস্তিতে পুড়ে যাওয়া নিজ হাতে গড়া মুদি দোকানের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন ল‍ুৎফর রহমান।

পাশে দাঁড়িয়ে জীবিকার একমাত্র মাধ্যমটির ধ্বংবাশেষ দেখে তার স্ত্রীও বুক চাপড়ে কেঁদেই যাচ্ছিলেন।
 
শুধু ল‍ুৎফর নয়, শত-শত ঘর-বাড়ি-দোকান পুড়ে যাওয়া কড়াইল বস্তি জুড়ে রোববার (০৪ ডিসেম্বর) ছিলো আহাজারি ও আর্তনাদ। কারো জীবিকার একমাত্র দোকান পুড়ে ছাই, কারো মাথা গোঁজার ঠাঁই পুড়ে ভস্ম।

রোববার পৌনে ৩টার দিকে কড়াইল বস্তি আগুন লাগে। লেপ-তোষকের দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত্র হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ১১টি ফায়ার সার্ভিস ইউনিট কাজ করে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে কড়াইল বস্তিতে বসবাস লুৎফরের।

তিল-তিল করে জমানো টাকা দিয়ে, দিয়েছিলেন মুদির দোকান। তাও আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেলো। জীবনের সব উপার্জন এই মুদির দোকানে লগ্নি করেছিলেন লুৎফর। দোকান থেকে একটু দূরেই এ বস্তিতেই থাকেন তিনি।

লুৎফর বাংলানিউজকে বলেন, ‘দোকান বন্ধ করে দুপুরের খাওয়ার জন্য ঘরে যাই। একটু পরেই আগুন-আগুন বলে চিল্লা-চিল্লি। আমি দৌড়ে বের হই দেখি দাউ-দাউ করে আগুন জ্বলছে। দোকান থেকে কিছুই বের করতে পারি নাই। দোকানে রাখা টিভিটা বের করেছিলাম। কিন্তু পাশে রেখে অন্য জিনিস নিতে গিয়ে দেখি টিভিটা কে যেন নিয়ে গেছে। এর আর কিছু বের করতে পারি নাই। কয়কদিন থেকে টাকা জমাচ্ছিলাম নতুন করে মাল করবো বলে, সে টাকাও পুড়ে গেছে। ’
 
লুৎফুরের মতো আগুনে নিঃস্ব হয় বিধবা তিথো বেগম। দুই সন্তানের এই জননী একটি মাত্র থাকার ঘর। বাসে-বাসে ভিক্ষা করে এই ঘরের মালিক স্বামী হারা এই নারী।
 
নিজের পুড়ে যাওয়া ঘরের আসবাবপত্র দেখাতে তিথো বেগম বলেন, ‘সব শেষ, কিছু জমানো টাকা ছিলো তাও পুইড়া গেলো, এখন কী নিয়ে বাঁচমো। জোয়ান বেটিরে নিয়ে রাস্তায় থাকন ছাড়া কোনো উপায় নাই। ’
 
তিথো, লুৎফর, মতো খোদেজা, মিনা মুজাহিদও কড়াইল বস্তির আগুনে নিজেদের শেষ সম্বল হারিয়ে এখন নিঃস্ব, দিশেহারা। তাদের চোখে-মুখে এখন শুধুই সাহায্যের আকুতি।

** পোড়া স্তূপে সব হারানোর আর্তনাদ

** ‘আল্লাহ আমার পোলাগোরে বাঁচাইছে’

** কড়াইলে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

** কড়াইল বস্তিতে পুড়লো ৪ শতাধিক ঘর-বাড়ি

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৬
এমসি/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।