ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

‘আমি নিজেই সুইচ অফ করি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৬
‘আমি নিজেই সুইচ অফ করি’

বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমি নিজেই সুইচ অফ করি’।

ঢাকা: বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ঘর থেকে বের হওয়ার সময় আমি নিজেই সুইচ অফ করি’।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের মধ্যে এ মানসিকতা থাকতে হবে যে, বিদ্যুৎ আমারই সম্পদ, আমি এটাকে রক্ষা করবো, সাশ্রয় করবো’।

বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি তা সময়সাপেক্ষ’।

‘অনেকে অহেতুক বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপব্যবহার করি, অপচয় করি’।

তিনি বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালতে সবাইকে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সাশ্রয়ী হতে হবে। ঘরে-বাইরে সর্বক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে’।

‘বিদ্যু‍ৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও বেগবান করবে’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজেরা যদি নিজের হাতে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় সুইচ বন্ধ করেন, তাতে লজ্জার কিছু নেই’।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের একটু অভ্যাস খারাপ আছে। অনেকে মনে করেন, আমি বড় অফিসার। আমি আবার সুইচ অফ করবো কেন! আর্দালি-পিয়ন এসে করবে। নিজের কাজ নিজে করায় লজ্জার কিছু নেই’।

গ্যাসের অপচয় রোধে সবাইকে সচেতন ও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে গ্যাসের চুলা বন্ধ করেন না। একটু মিট মিট করে জ্বালিয়ে রাখেন। এতে অপচয় যেমন ঘটে, তেমনি দুর্ঘটনাও ঘটে। আগুনে পুড়ে মানুষ মারা যান’।

‘একদিকে সাশ্রয়ী হতে হবে। আর একদিকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে হবে’।

পানির অপচয় রোধেও সবাইকে আন্তরিক হতে বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পানির অনেক অপচয় হয়। অনেকে পানির কল ছেড়ে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর পানির অপচয় করতেই থাকেন। পানিরও সাশ্রয়ী ব্যবহার করতে হবে’।

প্রতি ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালানোর প্রত্যয় পূনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা বহুমুখী বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি’।

বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের মহাপরিকল্পনা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি’।

বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পর দেশের দক্ষিণাঞ্চলে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৪ সাল নাগাদ নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে’।

বাস্তবায়নাধীন ৯ হাজার ৮৪০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৮টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মেগা প্রকল্পের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

২০২১ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক ৩ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির বর্তমান চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৪৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে অফগ্রিড এলাকায় ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে’।

সোলারের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাধ্যমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

বিদ্যুৎ উৎপাদনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ৮ বছরের সঙ্গে বিএনপি আমলের পার্থক্য বিবেচনার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

গত ৮ বছরে ১ কোটি ১৪ লাখ নতুন সংযোগ প্রদান, ৫ কোটি মানুষকে নতুন করে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, ১০টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন, ৮০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, ১ হাজার ৯০২ কিলোমিটার সঞ্চালন ও ৯৭ হাজার বিতরণ লাইন স্থাপনসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

গ্যাসের চাহিদা মেটাতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, এনএনজি টার্মিনাল নির্মাণসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি জানান, ২০২১ সালের মধ্যে আরও ৩৭টি উন্নয়ন কূপ খনন এবং ২৩টির ওর্য়াকওভার করা হবে।

বিএনপি আমলে বিদ্যুতের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ছিলো মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তখন ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হতো। বিদ্যুতের দাবিতে কানসাটে আন্দোলন করতে গিয়ে গুলিতে মানুষকে জীবন দিতে হয়েছিলো।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী জনার্দন শর্মা, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তাজুল ইসলাম, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার হোসেন।

এবারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের প্রতিপাদ্য ‘অদম্য বাংলাদেশ’।

** **বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

**‘১ কোটি ১৪ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পেরেছি’

বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬

এমইউএম/টিআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।