ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নগরজুড়ে মোটরসাইকেলের বেপোরোয়া উৎপাত

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
নগরজুড়ে মোটরসাইকেলের বেপোরোয়া উৎপাত ছবি: বাংলানিউজ

রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়। সিগনাল ছাড়ার অপেক্ষায় আজিমপুর টু মিরপুরগামী বিকল্প পরিবহন। ট্রাফিক পুলিশ হাত দিয়ে ইশারা করলে গাড়ি টান দেন চালক আসলাম।

ঢাকা: রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়। সিগনাল ছাড়ার অপেক্ষায় আজিমপুর টু মিরপুরগামী বিকল্প পরিবহন।

ট্রাফিক পুলিশ হাত দিয়ে ইশারা করলে গাড়ি টান দেন চালক আসলাম। মুহ‍ূর্তের মধ্যে গাড়ির সামনে এসে পড়ে একটি মোটরসাইকেল। তাৎক্ষণিকভাবে ব্রেকে হাত দিয়ে দুর্ঘটনা এড়ান চালক।

সীমাহীন বিরক্তি নিয়ে জানালায় মুখ বাড়িয়ে গালিগালাজ করতে থাকে চলে যাওয়া মোটরসাইকেল আরোহীকে। এদিকে হঠাৎ ব্রেক কষায়, গাড়িতে বসা যাত্রীরাও চালকের উপর ক্ষেপে ওঠে।

কিংবা কোনো রাস্তার বাম দিক ঘেঁষে যাত্রী তুলছে বা নামাচ্ছে- বলা নেই কওয়া নেই সেই চিলতে জায়গা দিয়ে আচমকা বেরিয়ে গেলো কোনো মোটরসাইকেল। পিছনে সারি সারি গাড়ি থাকে, যিনি বাস থেকে নামছেন তিনি দেখতেও পাচ্ছেন না মোটর সাইকেল আসছে কিনা। কিন্তু জ্যাম কাটিয়ে দ্রুত যাওয়ার নেশায় ওই সামান্য বামদিকের রাস্তা দিয়ে অবিবেচকের মতো ঢুকিয়ে দিচ্ছে অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালক। তাও আবার বেজায় গতিতে।
  
রাজধানীর প্রতিদিনকার ঘটনা এটি। নগরীজুড়ে বেপরোয়াভাবে এভাবে চলছে মোটরসাইকেল। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনাও। রাস্তা পার হওয়া, গাড়ি থেকে নামতে গিয়ে ছুটে আসা মোটরসাইকেলের কারণে প্রায় সময় বিপদে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।

পথচারীদের অভিযোগ, ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতা ও মোটরসাইকেল চালকদের নিয়ম না মানার প্রবণতার কারণেই বাড়ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।  

অন্যদিকে, মোটরসাইকেলের বেপোরোয়া গতি ও দুর্ঘটনার জন্য চালকদের অচেসতনতাকে দায়ী করে ট্রাফিক বিভাগ।

সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর ব্যস্ততম কাওরান বাজার, বিজয়সরণী, খামারবাড়ি, মহাখালী, শুক্রাবাদ, সায়েন্সল্যাব মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কে মোটসাইকেল আরোহীদের এমন বেপোরোয়া দৌরাত্ম্য দেখা যায়।

ঘুরে দেখা যায়, সিগনাল পড়লে সব গাড়ি নিয়ম মেনে দাঁড়িয়ে পড়ে। তবে মোটরসাইকেল চালকরা প্রায়সময় এর উল্টো। নিয়মের তোয়াক্কা না করে একটু একটু করে এগিয়ে যায় মোড়ের মাঝখানে, এতে সৃষ্টি হয় জটলা। কখনও কখনও ধৈর্য হারিয়ে ফুটপাতে উঠে যাচ্ছে দুই চাকার এই যান। সুযোগ পেলে রং সাইড দিয়েও চালাচ্ছে গাড়ি। রাজপথে পথচারীকে বিভ্রান্তিতে ফেলে উল্টো পথে ছুটে আসছে। এভাবেই নগরজুড়ে বিপদজ্জনকভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মোটরসাইকেল চালকরা।

সোনারগাঁও মোড়ে বিহঙ্গ বাস থেকে নামতে বারবার পা দিয়েও পিছিয়ে যাচ্ছেন এক যাত্রী। যখনই নামতে যান, কোনো কোনো মোটরসাইকেল এসে সামনে পড়ছে। চারবারের চেষ্টায় অবশেষে নামলেন।

নেমেই বাংলানিউজকে বাশার নামে এই যাত্রী বললেন, জঘন্য অবস্থা, বাসের হেলপার বারবার বলছেন, কারওরান বাজারে নেমে পড়ার জন্য। এদিকে নামতে পারছি না বাইকের জন্য। একে তো আমাদের জন্য নামার নির্দিষ্ট জায়গা নেই, এর উপর বাইক চালকদের উৎপাত। যারা বাইক চালান তাদের জ্যামে বসা থাকার এতোটুকু ধৈর্য নেই। সুযোগ পেলে ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে দেন। নিজের জীবনের কথাও চিন্তা করে না এরা।

ট্রাফিক নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালকদের কাছে অনেকটাই অসহায় ট্রাফিক বিভাগ। যদিও মোটরসাইকেল চালকদের নিয়মের মধ্যে আনতে বিজয়সরণী, গুলশানসহ কয়েকটি মোড়ে রশি দিয়ে আটকানো চেষ্টা করছে ট্রাফিক পুলিশ।

এ বিষয়ে ডিএমপি’র ট্রাফিক পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মোসলে উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মোটরসাইকেলের বেপরোয়া গতি ঠেকাতে আমরা কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে থাকি। অনেক সময় ট্রাফিক রুলস ভঙ্গ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কথা তাদের নিজেদের সচেতনতা। মোটরসাইকেল চালকদের এমন ভুলের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। নিয়ম মেনে তারা সচেতন হলে কোনো সমস্যা হতো না।

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬
এমসি/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।