ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাজশাহীতে আলোচিত ঘটনা ড. রেজাউল হত্যাকাণ্ড

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৭
রাজশাহীতে আলোচিত ঘটনা ড. রেজাউল হত্যাকাণ্ড রাজশাহীতে আলোচিত ঘটনাগুলোর ছবি

রাজশাহী: কালের আবর্তে হারিয়ে গেলো আরও একটি বছর। কেটে গেলো ঘটনাবহুল-২০১৬। বিদায়ী বছরের শুরু থেকেই জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ঘটনায় আলোচিত ছিল রাজশাহী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী খুন, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে মায়ের হাতে সন্তান খুনেরও ঘটনা ঘটেছ। ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ড।

এই হত্যাকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তাল হয়ে ওঠে। এছাড়া বিএনপি নেতা ও রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের সাবেক প্রশাসক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আলোচিত হয়। মায়ের হাতে সন্তান খুনের ঘটনা হতবাক করে সবাইকে।  

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ভেতরে শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। একইসঙ্গে দুই বান্ধবীর আত্মহত্যার মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে বিদায়ী বছর। ২০১৬ সালে এমনি বিভিন্ন খুনের ঘটনার সাক্ষী হয়ে বছর পার করলো রাজশাহীবাসী।

রাবি শিক্ষক ড. রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ড: ২০১৪ সালে ড. শফিউল ইসলাম লিলনের মতো একই কায়দায় প্রকাশ্য দিবালোকে অতর্কিত হামলায় আবারও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার ঘটনা ঘটে বিদায়ী বছর। এবার ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে অতর্কিত হামলা করে গলায় কোপ দিয়ে হত্যা করা হয়। ২৩ এপ্রিল এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

উদারমনা, অরাজনৈতিক এবং সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত এ শিক্ষকের মৃত্যুতে ফুঁসে ওঠে ক্যাম্পাস। আন্দোলনকে ঘিরে বেশ কয়েকদিন উত্তাল হয় ক্যাম্পাস। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চারজন মন্ত্রী ক্যাম্পাসে গিয়ে সমাবেশে যোগ দিয়ে বিচারের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্তিমিত হয়। এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল হয়েছে।  

হলের ভেতরে শিক্ষার্থী খুন: রাবির নবাব আব্দুল লতিফ হলে গত ২০ অক্টোবর ঘটে রোমহর্ষক খুনের ঘটনা। হলের ভেতরে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপুকে হত্যা করে ফেলে রাখে খুনিরা। জড়িতদের বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামেন লিপুর সহপাঠীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। লিপু হত্যা মামলায় তার রুমমেট মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

শিক্ষকের অস্বাভাবিক মৃত্যু, সহকর্র্মী অভিযুক্ত: গত ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আকতার জাহানকে মৃত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরি ভবনে তার নিজকক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়। দরজা ভেঙ্গে তার মরদেহ উদ্ধারের পর কক্ষে সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকে আকতার জাহানের আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগ তোলেন তার সাবেক স্বামী একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানভীর আহমদের বিরুদ্ধে। এর জেরে সহকর্মীদের চাপের মুখে বিভাগ কার্যক্রম থেকে সাময়িক অব্যাহতি নেন তানভীর আহমদ।  

এদিকে গত ৩ নভেম্বর আকতার জাহানের আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আতিকুর রহমান রাজাকে। বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন তিনি।

প্রেমিকের মৃত্যুতে প্রেমিকার আত্মহত্যা: তূর্য ও কেয়া। পাশাপাশি বাড়ি। একই স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতো। একসঙ্গেই স্কুলে যাওয়া, প্রাইভেট পড়া ও খেলাধুলার সুবাদে ওদের বন্ধুত্বও গড়িয়েছিল প্রেমে। মৃত্যুকেও যেন তারা বেছে নিল একসঙ্গেই। সড়ক দুর্ঘটনায় তূর্যের মৃত্যুর খবরে শোক সইতে না পেরে আত্মহননেই প্রাণ দিয়েছিল কিশোরী কেয়া। ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগরীতে এ ঘটনা ঘটে।  

একসঙ্গে দুই বান্ধবীর আত্মহত্যা: বখাটেদের অত্যাচারে রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ শাহাপুর এলাকায় গলায় ফাঁস দিয়ে দুই বান্ধবী একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নিহতরা হলেন-শাহাপুর পশ্চিমপাড়া এলাকার নাজমুল হক নাজুর মেয়ে বন্যা (১৩) ও একই এলাকার মুক্তার আলীর মেয়ে সম্পা (১২)।  

ব্যবসায়ী নেতা খুন: রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক প্রশাসক ও আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউল হক টুকুকে দিবালোকে গুলি করে খুন করা হয় গত ২৪ এপ্রিল। নগর ভবনের সামনে নিজস্ব চেম্বারে তিনি খুন হন। তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।  

বিএনপি নেতা গুলিতে নিহত: রাজশাহী জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ঠিকাদার খন্দকার মাইনুল ইসলাম মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ১৬ নভেম্বর। নিজ বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হয়, ঋণের বোঝা বইতে না পেরে তিনি মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন।  

আবাসিক হোটেলে জোড়া খুন: রাজশাহী মহানগরীর নাইস হোটেল ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেল থেকে ২২ এপ্রিল দুই যুবক-যুবতীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হোটেল কক্ষের দরজা বন্ধ থাকলেও মরদেহের অবস্থা দেখে এটি জোড়া হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত করে পুলিশ।  

নিহত যুবকের নাম মিজানুর রহমান (২৩)। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। যুবতীর নাম সুমাইয়া (১৯)। তার বাড়ি পাবনার রাধানগরে। স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আগের দিন সকাল সাড়ে ১০টায় তারা হোটেলটির ৩০৩ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন।

মায়ের হাতে সন্তান খুন: রাজশাহীতে শাহরিয়ার আলম (কাব্য) নামে সাত বছরের শিশু সন্তানকে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে কুপিয়ে হত্যা করে মা। মহানগরীর বুধপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। কাব্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শিশু শ্রেণির ছাত্র।

তবে সব ধরনের হত্যাকাণ্ডের বিচারের ‍মাধ্যমে নতুন বছর রাজশাহীবাসীর জন্য সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৬
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।