দশ হাত দূরে রয়েছে ‘হাসনাহেনা’ টেবিল। এখানে হাসনাহেনার গোড়ায় চেয়ার-টেবিল।
শেডগুলো খানিকটা টং ঘরের আদলে গড়া, যাতে রোদ-বৃষ্টি-কুয়াশা বাগড়া দিতে না পারে। প্রত্যেকটির আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়েছে। সবগুলোই ফুলের নামের সঙ্গে মিল রেখে। আর শেডের যে নাম সেই শেডের গোড়া সেই ফুলের আধিক্য।
বলছিলাম নার্সারি কাম রেস্টুরেন্টের কথা। ঐতিহ্যবাহী পাবনা জেলার শহরের বাইপাসে অবস্থিত এই নার্সারি কাম রেস্টুরেন্টটি অবস্থিত। প্রচলিত ধ্যান ধারণার পুরো বিপরীত এই রেস্টুরেন্টের নাম শ্রেষ্ঠ নার্সারি ও সেরা ফুডস। নার্সারি কিংবা ফুডকে লক্ষ্য করে এই নামকরণ নয় কিন্তু! নামকরণ করা হয়েছে উদ্যোক্তার দুই ছেলে শ্রেষ্ঠ ও সেরা’র নামের সঙ্গে মিল রেখে।
২০০৫ সালে যা স্রেফ নার্সারি হিসেবে (শ্রেষ্ঠ নার্সারি) যাত্রা শুরু করে। এখনও নার্সারি রয়েছে। কিন্তু খানিকটা অবয়ব বদলে ফেলা হয়েছে। এখন একদিকে যেমন নার্সারিতে চারা বিক্রি হচ্ছে ধুমছে। একইভাবে অনেকে খানিকটা বন্য পরিবেশে উদরপূর্তি করতে আসছেন লোকজন। আবার কেউ কেউ নগরের যান্ত্রিকতার বাইরে খানিকটা সময় একান্তে কাটাতে চলে আসছেন স্ব-পরিবারে।
আগে বিঘা জমি জুড়েই থাকত ফুল-ফলের চারায় ঠাসা। এখনও ফুল-ফুলের চারা রয়েছে, কিন্তু পরিকল্পিত। চারার ফাঁকে ফাঁকে চেয়ারটেবিল পেতে দেওয়া হয়েছে। মাঝ দিয়ে যাতায়াতের জন্য দুই ফুট প্রশস্ত ওয়ার্কওয়ে রয়েছে। যাতে হাঁটার সময় ফুল ও পাতা এসে আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে যাবে আপনাকে। রাতের বেলা চলতে গেলে খানিকটা গা ছম ছম করবে।
ব্যতিক্রমী এই নার্সারির উদ্যোক্তা আসাদুজ্জামান লিটন বাংলানিউজকে জানান, নতুন প্রজন্ম ফুল ফলের নাম ভুলতে বসেছে। উদ্দেশ্য একটাই বাংলার ফুল-ফলের সমৃদ্ধ ভাণ্ডারকে তাদের কাছে তুলে ধরা। খেতে খেতে যদি কোনো শিশুর নজরে ফুলটি পড়ে, তার গন্ধ নাকে লেপ্টে থাকবে। ভুলে যাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
চেয়ারে বসে মুখরোচক খাবার খেতে খেতেই পরিচিত হতে পারবেন বাংলার ফুল-ফলের সঙ্গে। এখানে প্রায় দু’শ প্রজাতির ফুল, চল্লিশ প্রজাতির ফল, বনজ দশ ও ঔষধি বৃক্ষ রয়েছে পনের প্রজাতির। অনেকে খেতে এসে পছন্দ হলে চারাও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। একসঙ্গে দু’টি ব্যবসাই চলছে মহাসমারোহে।
খাবারের পদের ক্ষেত্রে রয়েছে লম্বা তালিকা। বাঙালি থেকে ইন্ডিয়া, থাই হয়ে চাইনিজ। কোনোটাই বাদ যায় নি। মাত্র কয়েক মাস হচ্ছে রেস্টুরেন্ট খোলা হয়েছে। এখনই সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে ভিন্নমাত্রার এই রেস্টুরেন্টের কথা। অনেক দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসছেন এখানে।
উদ্যোক্তা জানালেন, প্রচলিত রেস্টুরেন্টে পিঠে পিঠ ঠেকে বসতে বসতে লোকজন ক্লান্ত। তাই এখানে ভিন্ন আমেজ ভোজন রসিকরা বেশ উপভোগ করছেন। খাবারের মানের ক্ষেত্রেও কোনো আপোস করা হচ্ছে না। কোনো বাসি খাবার দেওয়া হয় না। সব সময় সতেজ খাবার পরিবেশন করা হয়। প্লেটে তুলে দেওয়া হচ্ছে এই নার্সারির লেটুসপাতা, থাইপাতা, পেয়াজপাতা। পরিকল্পনা রয়েছে ভবিষ্যতে এখানেই চাষাবাদ করে ভোজন রসিকদের পাতে পরিবেশন করা।
এখানে যেমন যুগলদের বসার জন্য ছোট শেড রয়েছে। তেমনি পারিবারিক কিংবা অফিসিয়াল ছোট গ্রুপ ডিনারের জন্য রয়েছে বড় শেড। প্রত্যেকটি শেডেই আচ্ছাদিত বাহারি ফুল ও ফলদবৃক্ষে। খাবারের মৌ মৌ গন্ধের সঙ্গে ফুলের মন মাতানো গন্ধে সন্ধ্যা কিংবা দুপুরটা কাটতে পারে একান্তে। হতে পারে সেরা মধ্যাহ্নভোজ কিংবা রাতের আহার।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এসআই/পিসি