সোমবার (০২ জানুয়ারি) দুপুরে সমাজসেবা দিবসে সরকার পরিচালিত প্রবীণ হিতৈষী সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে কোনো প্রবীণ ব্যক্তি এই সুবিধা পাচ্ছে না।
প্রবীণদের পক্ষ থেকে অভিযোগ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওয়াতাধীন সমাজ সেবা অধিদফতরের এই দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও ঘোষণার পর কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারেনি তারা।
প্রবীণ নিবাসে থাকা বেলায়েত হোসেন ও মিরা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এই বয়সে বেশিরভাগ প্রবীণ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। এছাড়া তাদের কাজ করার মতো শারীরিক সক্ষমতা থাকে না। বাসায় দেখভালের লোক না থাকায় বিভিন্ন বৃদ্ধ আশ্রমে তারা আশ্রায় নেন।
৬৫ বছর বয়সী প্রবীণ রিকশা চালক নূরু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সন্তানরা দেখভাল না করায় এই বয়সে তাকে রিকশা চালানোর মত কঠিন কাজ করতে হচ্ছে। দিনের অর্ধেক সময় রিকশা চালানোর পর বিশ্রাম নিতে হয় তাকে।
এদিকে প্রবীণ নিবাসে থাকা বেলায়েত হোসেন ও মিরা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরে সেবা নামমাত্র। রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রবীণদের যে সকল সুবিধা দেওয়ার কথা ছিলো তা আমরা কিছুই পাইনি। আমাদের কাছে কেউ কখনো জানতে আসেনি আমরা কেমন আছি।
ওই দুই প্রবীণ আরো জানান, সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া এই বয়সে পরিবার থেকে আমরা যারা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি, তারা যেন শেষ বয়সে মাথা গোজার ঠাঁই টুকু পাই।
এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রবীণদের সহযোগিতা করছি না এটা ঠিক নয়। আমরা ৩১ লাখ প্রবীণ নারী ও পুরুষকে মাসে ৬০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা দিচ্ছি। এছাড়া ১২ লাখ বিধবা নারীকেও মাসে ৬০০ টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা বেদে ও বৃদ্ধদের আর্থিক সহযোগিতা করছি। এছাড়া এতিম শিশু, এসিড দগ্ধ নারীদের আশ্রয় দিচ্ছি এবং আর্থিকভাবেও সহযোগিতা করছি।
তিনি আরো বলেন, কোনো জ্যেষ্ঠ নাগরিক যদি সুবিধাবঞ্চিত থাকেন এবং আমাদের কাছে সহযোগিতার জন্য আসেন তাকে আবশ্যই সহযোগিতা করা হবে।
২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ দেশের ষাটোর্ধ্ব প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবীণ ব্যক্তিকে ‘সিনিয়র সিটিজেন’ ঘোষণা করেন।
সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী প্রবীণ এসব নাগরিকদের সমাজ্যে বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত নিরাপদ জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দেওয়ার কথা রয়েছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, সম্পদ, মর্যাদা, লিঙ্গ নির্বিশেষে মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করবে রাষ্ট্র।
এছাড়া আলাদা এবং বিনামূল্যে ও স্বল্প মূল্যে স্বাস্থ্য সেবা, সকল প্রকার যানবাহনে আসন সংরক্ষণ,বিশেষ ছাড়ে টিকেট প্রদান এবং আলাদা টিকিট কাউন্টার স্থাপন, প্রবীনদের জন্য দিবা-যত্নকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। এমনকি মৃত্যুর পরে দাফনের দায়িত্বও পালন করবে রাষ্ট্র।
অন্যদিকে তাদের সম্পদ রক্ষাসহ সঞ্চয় প্রকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ, উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ারও ব্যবস্থা নেবে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৭
আরএটি/বিএস