তবে গুলশান-বাড্ডা লেকের অপরিমেয় পানির উৎস এবং ফায়ার সার্ভিসের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ডিএনসিসি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা অনেকাংশ কমিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, মার্কেটের রিজার্ভ ট্যাংক ও গাড়িতে বহন করে আনা পানির ওপর নির্ভর করলে ডিএনসিসি মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা আরও বহুগুণে বাড়তে পারতো।
বিশেষ করে ডিএনসিসি মার্কেট লাগোয়া গুলশান শপিং সেন্টারকে এ অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা করা কারো পক্ষেই সম্ভব হতো না।
মঙ্গলবার (০৩ জানুয়ারি) বেলা ১২টার দিকে গুলশান শপিং সেন্টারের দক্ষিণ পূর্বকোণে দাঁড়িয়ে কথা হয় ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার নুরুল হকের সঙ্গে। তখনো গুলশান শপিং সেন্টারের এ পাশের কয়েকটি দোকান থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিল্ডিংয়ের তিনটি দোকানে আগুন লেগেছিল। সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। এদিকে আর আগুন আসতে দেওয়া হচ্ছে না। পযার্প্ত পানি ছিটানো হচ্ছে।
ডিএনসিসি মার্কেটের প্রায় পুরোটা পুড়ে বসে গেলেও গুলশান শপিং সেন্টারের ওই তিনটি দোকান ছাড়া আর কোথাও আগুন লাগেনি। আর এজন্য পযার্প্ত পানি সরবরাহের সুযোগটাকেই ইতিবাচক মনে করছে ফায়ার সার্ভিস।
টিম লিডার নরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় ২০ পাম্প দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে। আর এসব পানিই আসছে ওই গুলশান-বাড্ডা লেক থেকে। মার্কেটের রিজার্ভ ট্যাংকের উপর নির্ভরশীল হলে ভয়াবহতা আরও বাড়তে পারতো।
ডিএনসিসি ও গুলশান শপিং সেন্টারের পূর্বপাশে জব্বার টাওয়ার গলি দিয়ে কয়েকশ’ গজ সামনেই গুলশান-বাড্ডা লেক। সেখানে শক্তিশালী ৫টি অস্থায়ী পাম্প বসিয়ে রাত থেকেই পানি তোলা হচ্ছে। পাইপের মাধ্যমে সেই পানি ফায়ার সার্ভিসের মোবাইল ট্যাংকে জমা হয়ে পুনরায় পাইপ দিয়ে অগ্নি নির্বাপনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
রাত থেকে এতো পানি তোলা হয়েছে যে, গুলশান-বাড্ডা লেকের বিশাল জলরাশী প্রায় এক ফিট নিচে নিমে গেছে। শক্তিশালী পাঁচটি পাম্প এখনো বিরামহীন চলছে।
পানির পাম্প তদারকে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক শাহজাদী সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনায় আমরা সবসময় পর্যাপ্ত পানির অভাব বোধ করি। কোনো স্থাপনায়-ই পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা থাকে না। তবে আজকের এ দুর্ঘটনায় পানির অভাব হয়নি। সেজন্য অনেকটা রক্ষা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, এটা সরকারি ব্যবস্থা। সরকার এ লেকটাকে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করেছে। কিন্তু যেখানে লেক নেই সেখানে এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করবো কীভাবে? এজন্য সবাইকে বলবো- স্থাপনা নির্মাণের আগে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখুন।
একই স্থানে দাঁড়িয়ে কথা হয় গুলশান শপিং সেন্টারের দোকান মালিক মো. আসলামের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ কথা বলাই যায়, পর্যাপ্ত পানির উৎস থাকায় গুলশান শপিং সেন্টার রক্ষা করা গেছে। পানি সরবরাহ টিক মতো না থাকলে এটির অবস্থাও এতোক্ষণে ডিএনসিসি মার্কেটের মতো হতে পারতো।
সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে গুলশান-১ নম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেটে আগুন লাগে। তারপর থেকে টানা ৯ ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ফায়ার সার্ভিস। তবে এখনো ডিএনসিসি মার্কেটের ভেতর থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলি বের হচ্ছে।
আরও পড়ুন
**এখনো ধোঁয়ার কুণ্ডলি, থেকে থেকে আগুনের হল্কা
** ডিএনসিসি মার্কেটজুড়ে আগুন, বাহিরে ব্যবসায়ীদের আর্তনাদ আহাজারি
** ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের ওপর চড়াও ব্যবসায়ীরা
** বৈদ্যুতিক ত্রুটি থেকে ডিএনসিসি মার্কেটে আগুন, ধারণা মেয়রের
** আগুনের কথা শুনে ভেবেছিলাম দুঃস্বপ্ন দেখছি!
** এখনো পুড়ছে ডিনসিসি মার্কেট, ধসে পড়েছে একাংশ
** গুলশান ডিসিসি মার্কেটে ভয়াবহ আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১৭ ইউনিট
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৬
এজেড/ওএইচ/জেডএস