ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে সচেতন নয় তরুণ প্রজন্ম

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে সচেতন নয় তরুণ প্রজন্ম রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা/ ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: খুব বেশি লেখা বই নেই, যেখানে আমাদের ছোটরা নিহত বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে জানতে পারবে। শুধু ফেসবুকিং করে ভালো মানুষ হওয়া যায় না। যারা এদেশ এনে দিয়েছে, তাদের সম্পর্কে না জানলে কী করে এরা জাতির হাল ধরবে! কথাগুলো বলছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছোট ছেলে আসিফ মুনীর। খুব মিথ্যা বলেননি তিনি।

সকালে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে আসা জনতার ঢল নামে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত।

সাধারণ মানুষের থেকে সে স্রোতে বেশি উপস্থিতি ছিলো স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের। তবে সেসব শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বুদ্ধিজীবী দিবস কি এবং কেন তা জানলেও রায়ের বাজার বধ্যভূমির সঙ্গে বুদ্ধিজীবী দিবসের সম্পর্ক জানেন না অনেকেই।

রায়ের বাজার বধ্যভূমির সঙ্গে বুদ্ধিজীবী দিবসের সম্পর্ক কি? এমন প্রশ্ন রাখা হয়েছিলো রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে আসা রাজধানী ঢাকার নামী কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কাছে। তবে মেলেনি সুন্দর উত্তর।

বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে সচেতন নয় তরুণ প্রজন্ম/ছবি: সুমন শেখধানমন্ডির একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, এখানে এসেছি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে। অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারিহা জামান বললেন, এসেছি বন্ধুদের সঙ্গে।

সদুত্তোর মেলেনি পরের দু’জনের কাছেও। তাবে ধাঁধা ভাঙলেন ৫ম জন মোহনা মৃধা। ঢাকা সিটি কলেজের এ শিক্ষার্থী বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণের আগে বাংলার বুদ্ধিজীবীদের হত্যায় সচেষ্ট হয়। রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা বুদ্ধিজীবীদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করে মিরপুর ও রায়েরবাজারে তাদের মরদেহ ফেলে যায়। শহীদ সেসব বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তাদের স্মরণে এখানে তৈরি হয় এ স্মৃতিস্তম্ভ।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।

বুদ্ধিজীবী দিবসের ইতিহাস সম্পূর্ণভাবে না জানলেও তা উদযাপন পিছিয়ে নেয় বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তবে উদযাপনের থেকে মূল ইতিহাসটা জানা বেশি জরুরি বলেই জানান বিশেষজ্ঞরা।

বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে সচেতন নয় তরুণ প্রজন্ম/ছবি: সুমন শেখএ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের রিসার্স ফেলো হাসান নিটোল বলেন, যেহেতু এখন তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সচেতন হয়েছে এবং আগের থেকে জানার ব্যাপারে আরো বেশি আগ্রহী মূলতো সে কারণেরই তাদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী দিবসের উদযাপনটা এত বেশিভাবে দেখা যায়। কেননা বুদ্ধিজীবী দিবসটি মুক্তিযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে আমরা এটা কেন পালন করি এবং এদিন কি হয়েছিলো, সেই ব্যাপারটা নিয়ে তরুণ প্রজন্ম এখনো ততটা সচেতন না। এটা তারা যখন জানবে তখনই তাদের কাছে উদযাপনের পরিবর্তে স্মরণের দিন হবে। কেননা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস আনন্দের, উদযাপনের। আর ১৪ ডিসেম্বর শোকের, স্মরণের।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকে আমরা তরুণ প্রজন্মের কাছে যেভাবে সুন্দর করে উপস্থাপন করেছি, ঠিক একই রকম গুরুত্ব দিয়ে ১৪ ডিসেম্বর বা বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস তাদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। পাশাপাশি একাত্তরের অন্যান্য গণহত্যাগুলোর ইতিহাসও আনতে হবে তাদের সামনে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে, বাসায় বাবা-মা’র সঙ্গে গল্পে, বন্ধুদের আড্ডায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এগুলো আরো আলোচনায় আনতে হবে। এগুলো সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস যখন শিক্ষার্থীরা জানতে পারবে, তখনই তাদের স্মরণের উদযাপনটা হবে যথার্থ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৭
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।