ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

খাল-বিলের দেশি মাছে ভরপুর নাটোর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
খাল-বিলের দেশি মাছে ভরপুর নাটোর নাটোরের বাজারে দেশি রানি মাছ/ছবি: বাংলানিউজ

নাটোর: নাটোরে খাল-বিলের পানি প্রায় শুকিয়ে গেছে মাসখানেক হলো। তাই জাল ফেলে মাছ শিকারের চিরচেনা দৃশ্য চোখে পড়ছে না খুব বেশি। তাই বলে মাছ শিকার কিন্তু বন্ধ নেই। বিলের ছোট-বড় জলাশয়, নালার পানি সেচে চলছে মাছ ধরা। এতে হাট-বাজার এখন ভরপুর ছোট-বড় দেশি মাছে।

বলা হচ্ছে গত কয়েক বছরে বিলের ফসলে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার, চলন বিল, হালতি বিলের রাস্তায় সৃষ্ট বাঁধ প্রভৃতি কারণে কমে গেছে এ অঞ্চলের দেশি মাছের উৎস। সঠিক যুক্তিযুক্ত কারণ না মিললেও এই সময়ে যে মাছ মিলছে সেটাও কম নয়।

আবার এক শ্রেণীর মানুষ বলছেন বিলুপ্ত অনেক দেশি মাছ ফিরে এসেছে নতুন কিছু উদ্যোগে।

পিয়ালি মাছহাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে টেংরা, বাতাসি, কৈ, বোয়াল, আইড়, পাবদা, শোল, খলিসা, সরপুঁটি, গচি, খড়িয়া, পিয়ালি, সিং, রানি, রুই, মৃগেল, কাতলাসহ অন্তত ৩০-৪০ প্রজাতির দেশি মাছ। দাম কোথাও একটু বেশি, কোথাও ক্রেতাদের নাগালের ভিতরেই।
 
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নলডাঙ্গা, মাধনগর, পাটুল, সিংড়ার ত্রিমোহনী বাজার, শেরকোলসহ বিভিন্ন মাছ বাজারে উঠছে এসব দেশীয় জাতের মাছ। সময়, স্থান-কাল ভেদে এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুপাতে বিভিন্ন দরে এসব মাছ পাইকারি ও খুচরা বিক্রি হচ্ছে।
পাবদা 
খোজ নিয়ে জানা যায়, মৃগেল ১৪০ টাকা, কালিবাউশ ১৩০, টেংরা স্থান ভেদে ২৮০ টাকা থেকে ৪০০, খলিসা ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, সিং ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শোল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, বোয়াল ৩০০ টাকা থেকে ৬০০, কৈ ৫৫০ থেকে ৬০০, রুই ২০০ টাকা, গচি ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকা, বাটা ১২০ টাকা, সরপুঁটি ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, কাতলা ২০০ টাকা, ছোট বাতাসি ৪৫০ টাকা, বড় বাতাসি ৬০০ টাকা, খড়িয়া ২২০ টাকা, চান্দা ১২০ টাকা, চিংড়ি মাছ ছোট সাইজ ৪০০ টাকা, বড় সাইজ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
 
গচি মাছস্থানীয় মাছ বিক্রেতারা জানান, বাজারগুলোতে প্রতিদিন ভোর রাত থেকে শুরু হয় মাছ কেনা। দেশের বিভিন্ন স্থান বা জেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন শহর কিংবা হাট-বাজারে। একদিকে দেশি মাছে স্থানীয় চাহিদা মিটছে, অন্যদিকে এসব মাছ বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন জেলেসহ মাছ বিক্রেতারা।
 
মৎস্য সংশ্লিষ্টরা জানান, একসময় এই এলাকায় দেশি প্রজাতির মাছের প্রাচুর্য ছিল। নদী ও খাল-বিলে এসব মাছ ধরা পড়তো সহজেই। কিন্তু দিন দিন দ্রুত বর্ধনশীল মাছের বাণিজ্যিক চাষ, সংরক্ষণের অভাব ও নানা প্রাকৃতিক কারণে দেশি মাছের বহু জাতই বিলুপ্ত হয়েছিল।
হরেক দেশি মাছ নিয়ে বাজারে বিক্রেতা 
কিন্তু গত কয়েক বছরে মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে বিল নার্সাসি স্থাপন, পোনা মাছ অবমুক্ত, মা মাছ উৎপাদন বাড়াতে অভয়াশ্রম স্থাপনসহ নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ায় বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় ১৭ প্রজাতির মাছের আর্বিভাব ঘটেছে।
 
নলডাঙ্গার বাজারে মাছ কিনতে আসা গাংগইল গ্রামের আবুল হোসেন ও বুড়িরভাগ গ্রামের আবুল কাশেম জানান, গত দুই বছর আগেও এভাবে দেশি মাছ মিলতো না। এখন প্রতিদিনই মাছ পাচ্ছেন। তবে দামটা একটু বেশি।
 
স্থানীয় আড়তদার আকতার হোসেন জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পাইকারি ক্রেতারা বেশি দামে দেশি মাছ কেনায় এখানে মাছের দামটা বেড়ে যায়। যেদিন বাইরের ক্রেতার আগমন থাকে না, সেদিন মাছের দাম অনেকটাই কম থাকে।
 
নলডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য অফিসার ইব্রাহিম হামিদ শাহিন বাংলানিউজকে বলেন, বিল নার্সারি ও অভয়াশ্রম গড়ে তোলায় বিলুপ্ত দেশি মাছের আর্বিভাব হয়েছে। এতে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ জেলেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ সহজেই স্বাদ পাচ্ছে দেশি মাছের। চাহিদা মেটাচ্ছে খাদ্য ও আমিষের। জীব ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ হচ্ছে। একইসঙ্গে পাখির আগমন ঘটছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৪১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।