১৯৮০ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার পুলিশ কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন আহম্মেদের সঙ্গে বিয়ে হয়। সাংসারিক জীবনের মাত্র তিন বছরের মধ্যে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
কিন্তু বিয়ের ১০ বছরের মাথায় স্বামী দুই সন্তানসহ তাকে ফেলে রেখে অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর শুরু হয় চন্দনার সংগ্রামী পথচলা।
জীবনের পুরনো ইতিহাস বলতে চান না। তবুও জীবনের প্রয়োজনেই দুই সন্তান নিয়ে ফরিদপুরের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন চন্দনা। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে চোখের পানিতে ভাসিয়ে নিজের জীবনের স্মৃতিচারণ করেন চন্দনা।
১৪ বছর মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত চন্দনা নিজের জন্য নয়, দুই মেয়ের অধিকার ফিরে পেতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চন্দনা। এ সময় তার দুই মেয়ে সাবরিনা আহমেদ ও ফারহানা আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে চন্দনা জানান, দুই মেয়ের নামে আলফাডাঙ্গা বাজারে দেড় শতাংশ জমি কেনেন ওদের বাবা। ৯৩ সালে স্বামী ছেড়ে চলে যান। তারপর ৩ বছর বাবার বাড়ির সাহয্য নিয়ে কোনরকমে দিনাতিপাত করলেও জীবন যেন আর চলছিল না।
১৯৯৬ সালে দুই সন্তানের ভরণপোষণের দাবিতে আদালতের দারস্থ হন তিনি। ১৯৯৮ সালে আদালতের রায়ে প্রতি মাসে দুই সন্তানের জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও কোনদিনই শাহাবুদ্দিন তা দেননি। পরে ৩ মাসের সাজা হয় শাহাবুদ্দিনের।
তিনি জানান, ভরণপোষণ না পেয়ে ঢাকায় একটি পার্লারে বিউটিশিয়ান ও বুটিক্স-এর কাজ করে সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যান। তারা দুই মেয়েই মাস্টার্স শেষ করেছে।
চন্দনা অভিযোগ করেন, কোনদিন বাবার দায়িত্ব পালন না করলেও ভোরণপোষণের অজুহাত দেখিয়ে উল্টো দুই মেয়ের জন্য দেড় শতক জমি ছিল আলফাডাঙ্গা বাজারে সেটিও তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর বছর দুয়েক আগে চন্দনা বাদী হয়ে মামলা করেন।
চন্দনা অভিযোগ করেন, শাহাবুদ্দিন দুর্নীতির দায়ে দুদকের হাতে গ্রেফতার সাব রেজিস্টার ফজলার রহমানের ভাই। সম্প্রতি ফজলার রহমান জামিনে বের হয়ে তাকে ও তার দুই কন্যাকে হুমকি দিচ্ছেন।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে তার দুই মেয়ের শেষ সম্বল ফিরে পেতে ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানান।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি মেয়েদের ভরণপোষণ, বিয়ের খরচ দিতেও রাজি। কিন্তু ওরা ওর মায়ের কথা শুনে নিজেদের সুযোগ হাতছাড়া করছে।
মামলায় সাজা হওয়ার কথা স্বীকার করে শাহাবুদ্দিন মিয়া বলেন, উচ্চতর আদালত সে রায় স্থগিত করেছেন। দুই মেয়ের নামে কেনা জমি বিক্রির কথা স্বীকার করেন শাহাবুদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
আরআর