যার ফলশ্রুতিতে বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ব্রিজটির কাজের অগ্রগতি দেখতে আসছেন বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) দিনগত রাতে জেলার রামগড়ে ফরেনার্স পুলিশ চেকপোস্ট'র উদ্বোধন হয়।
এ ব্যাপারে কথা হয় খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মো. সাহেল তস্তগীরের সঙ্গে।
তিনি জানান, সেতুটি হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সড়কপথে ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর বাণিজ্যিক আদান প্রদানের সম্ভাবনা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়- কাছে এসে যাবে চট্টগ্রাম নৌ বন্দর, সমুদ্র পথে পণ্য পরিবহনের সুযোগ মিলবে।
ট্রানজিট ব্রিজটি নিয়ে সমান আগ্রহী ওপার বাংলার মানুষও। কথা হলে ত্রিপুরার সাব্রুম এলাকার ব্যবসায়ী বিজয় দাস এ ব্যাপারে জানান, ফেনী নদীর উপর প্রস্তাবিত আর্ন্তজাতিক এ সেতু নির্মিত হলে শুধু ভারতের পূর্বাঞ্চলই নয়, খুলে যাবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।
সংশ্লষ্টিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী রামগড় স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে ফেনী নদীর উপর রামগড়-সাব্রুম মৈত্রী সেতু-১ এর ভিত্তি প্রস্তর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশ-ভারত অভিন্ন সীমান্তে ফেনী নদীর উপর ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ব্রিজ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত পিলার নং-২২১৫-৪ আর-বি এলাকাটি পরিদর্শন করে মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ বিষয়ে ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের পর্যবেক্ষণ শেষে রামগড় পৌরসভায় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়।
বৈঠকের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালের মধ্যে বন্দর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করা এবং ভারতীয় অর্থায়নে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মূল সেতু এবং সংযোগ সড়কসহ ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪.৮ মিটার প্রস্থের সেতু নির্মাণের কথা রয়েছে।
বৈঠকে বাংলাদেশ দলের সাত সদস্যের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বিভাগের যুগ্ম-সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মোস্তফা, ভারতীয় দলের এগার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের সচিব মি. জেনার।
এসময় সাউথ ত্রিপুরার প্রজেক্ট ডিরেক্টর পি-চাকমা জানিয়েছিলেন, ১০০ বছর মেয়াদী ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ব্রিজ নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। পরবর্তীতে ১৩ ডিসেম্বর বন্দর এলাকার বাংলাদেশ অংশে সড়ক-জমি ও সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করা হয়।
গেল বছরের ২ জানুয়ারি খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে রামগড় স্থলবন্দর উন্নয়ন বিষয়ে গণপরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বলেছিলেন, বছরের শেষ দিকে শত কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ২৩ তম রামগড় স্থলবন্দর নির্মাণ করবে বিশ্ব ব্যাংক। আর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্দর এলাকার ফেনী নদীতে মৈত্রী সেতু-১ নির্মাণ করবে ভারত সরকার।
তিনি আরো জানান, বন্দর অবকাঠামো ও সেতু নির্মাণে বন্দর এলাকার মহামুনি থেকে ১০ একর জমি অধিগ্রণের প্রস্তাব ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু এরপর কাজের অগ্রগতি তেমনটা হয়নি বললেই চলে। বুধবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর সফর এ ব্রিজের নির্মাণ কাজের প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন পাহাড়ি জনপদ রামগড়ের সাধারণ মানুষ।
উল্লেখ্য বুধবার, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রামগড়ে ফেনী নদীর উপর নির্মিতব্য ব্রিজ পরিদর্শন করবেন মন্ত্রী ও ভারতীয় হাই কমিশনার। মন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়।
এসময় আরো উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে, প্রত্যাগত উপজাতীয় শরণার্থী প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন এবং অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু নির্দিষ্টকরণ সম্পর্কিত ট্রাস্কফোর্স চেয়ারম্যান খাগড়াছড়ি’র সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক রাশেদুল ইসলাম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, পুলিশ সুপার মো. আলী আহমদ খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী মো. সাহেল তস্তগীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈয়দ ফরহাদ, সাবেক সংসদ সদস্য মো. আলীম উল্লাহ, রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন মিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ০৩ জানুয়ারি, ২০১৮
এসএইচডি/আরএ