শনিবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিষখালী ও পায়রা নদের মোহনায় নৌকা নিয়ে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ নৌকাবন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে প্রায় দু’শতাধিক নৌকায় প্রায় দেড় হাজার জেলে অংশ নেন।
নৌকাবন্ধনকারী জেলেরা জানান, যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় বরগুনার পাথরঘাটার বলেশ্বর, বিষখালী, পায়রা নদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ শিকার করে আসছেন জেলেরা। গত ৫ নভেম্বর (সোমবার) দুপুরে পাথরঘাটার নতুন বাজার এলাকায় জেলা পুলিশের আয়োজনে মৎস্যজীবী, ট্রলার মালিক, আড়তদার সমিতির সদস্য এবং লঞ্চ মালিক প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন নদীতে খুঁটি গেড়ে জাল পেতে মাছ শিকারকে অবৈধ বলে ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার পরপরই মূলত কোস্ট গার্ড ও পুলিশ বিভাগ তাদের জাল ফেলতে বাধা দেয় এবং জাল তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিতে শুরু করে।
জেলেদের দাবি, তারা খুঁটা জাল ব্যবহার করেন না, দড়ি দিয়ে ভাসমান জালে মাছ শিকার করেন। এসব জাল নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত না হলেও মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ তাদের এসব দড়ি জালও তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলছেন। ফলে নদীতে মাছ শিকার করতে পারছেন না তারা। এতে বেকার হয়ে পরেছেন ওই এলাকার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক জেলে।
হরিণঘাটা প্রান্তিক জেলে সমিতির সভাপতি নুরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রান্তিক জেলেরা সারাবছর নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা মূলত পেশাজীবী বংশপরম্পরায় জেলে। তারা সবসময়ই সরকারের নিয়ম মেনে নদীতে মাছ শিকার করে আসছেন। মৎস্যজীবী ট্রলার মালিকও আড়দতার সমিতির সঙ্গে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সভার পর থেকেই আমাদের ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছে। ’
‘আমরা চার ইঞ্চি ফাঁসের জাল দড়িতে গেঁথে নদীতে মাছ শিকার করি। যা জেলা প্রশাসন ঘোষিত নিষেধাজ্ঞারও আওতাভুক্ত নয়। অথচ, গভীর সমুদ্রগামী ট্রলার মলিক সমিতির প্রভাবশালীরা জেলা প্রশাসনের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবহার করে আমরা যেন মাছ শিকার না করতে পারি, সে ব্যবস্থা করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। ’
জেলে সমিতির সভাপতি নুরুল আলম বলেন, ‘প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তারা সরেজমিনে পরিদর্শনে এসে যদি দেখেন আমাদের জাল ও মাছ ধরার প্রক্রিয়া অবৈধ, তবে আমরা মাছ শিকার বন্ধ করে দেবো। ’
কোস্ট গার্ড পাথরঘাটার স্টেশন কমান্ডার সাব-লেফটেন্যান্ট জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্থায়ী কোনো ব্যবস্থায় মাছ শিকার অবৈধ। সে ক্ষেত্রে ওই জেলেরা যদি অস্থায়ী প্রক্রিয়ায় মাছ শিকার করে থাকে আমাদের দিক থেকে কোনো বাধা নেই। তবে খুঁটা হোক বা দড়ি হোক স্থায়ী কিছুতে জাল আটকে রাখা হলে আইনগতভাবে সেটাকে অবৈধ বিবেচনায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ’
বরগুনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কবীর মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘শুধুমাত্র খুঁটা ব্যবহার করে জাল ফেলে মাছ শিকারকে আইনগতভাবে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া সঠিক ইঞ্চি মাপ ও সঠিক সুতার জাল দিয়ে মাছ শিকারে আইনগত কোনো বাধা নেই। ’
কোনো মহল যদি প্রশাসনের দোহাই দিয়ে জেলেদের অন্যায়ভাবে হয়রানি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান ডিসি কবীর মাহমুদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
জিপি