মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিআইআইএস মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘ভোটাররা কী স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন?' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, নির্বাচন পূর্ব সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার চারটি উপায়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রথমত, দলের প্রতি অনুগত সরকারি কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা। দ্বিতীয়ত, আইনি কাঠামোতে পরিবর্তন নিয়ে আসা। তৃতীয়ত, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দায়ের, তাদের গ্রেফতার গুম এবং অব্যাহত বিচারবহির্ভুত হত্যা এবং গায়েবী মামলা দেওয়া। এবং চতুর্থত নির্বাচন পূর্ব সময়ে সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করা। এসব কার্যক্রমের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা প্রণয়ন অন্যতম।
তবে এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন দলের আয়োজনে নির্বাচনে বিএনপির মতো দল অংশ নেওয়ার কারণে নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার দায়িত্ব সরকারি দলের ওপরই বলে মত দেন বদিউল আলম মজুমদার। পাশাপশি নির্বাচন বিতর্কিত হলে তার পরিণতি অমঙ্গলজনক হবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। বিশেষ করে, এবারের নির্বাচনে প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ ভোটার যেন হতাশ না হন সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, এ তরুণেরা হতাশ হলে তারা বিপথে চলে যাবে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাচন শুধু ফ্রি (অবাধ) হলেই হবে না সেটিকে ফেয়ার (সুষ্ঠু) হতে হবে। ভোটগ্রহণ যেমন ফ্রি হতে হবে তেমন ভোট গণনাও ফেয়ার হতে হবে।
আসন্ন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে নিজেদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বহাল থাকা সংসদ ও সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে। এ অবস্থায় নির্বাচনী মাঠ এত বেশি খানাখন্দে ভরা ভিন্ন মতের মানুষের জন্য। আর এতটা সমতল সরকারি দলের জন্য। এ অবস্থায় কোনো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। এ বেড়া বেস্টনির মধ্যে মার খেতে খেতে মরে যাই তাহলে ভোট দিয়ে কি হবে?
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলেও মানুষেরা এবার নির্বাচনে ভোট দিতে যাবেন বলে মত দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, নির্বাচন যদি সামান্যতম ফেয়ারও হয় এবার নৌকার পাল গুড়ে যাবে। সরকারি দল অনেক চেষ্টা করলেও মানুষ এবার ভোট কেন্দ্রে যাবে, ভোট দেবে।
তবে নির্বাচন নিয়ে এখনই হতাশ হতে চান না আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, আস্থা রাখার কারণ নষ্ট হওয়ার মত কিছু হয়নি।
এ সময় নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন সরকারি দল না চাইলেও ইলেকশন কমিশন সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ থেকে বোঝা যায় যে ইলেকশন কমিশন স্বাধীন।
সিজিএস এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী এবং জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, এফবিসিসিআইর সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, দৈনিক নিউজ টুডে'র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক সচিব ও সাবেক রাষ্ট্রদূত ফজলুল করিম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, তিতুমীর কলেজের অধ্যাপক রাশেদ আলী মাহমুদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শাহাব এনাম খান, সাবেক রাষ্ট্রদূত এম শফিউল্লাহ, লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান আহমেদ চৌধুরী, এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ তিতা।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সিজিএস এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮
এসএইচএস/এসএইচ