ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ঘণ্টি বাজিয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম’

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৮
‘ঘণ্টি বাজিয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম’ ‘লেট’স টক উইথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা: “তুমি জানো আমি কে? তোমাকে আমি জেলে নিতে পারি। বললাম—জেলখানায় তো আমরা প্রতি ১৫ দিন পরপর যাই। আমাকে এই ভয় দেখিয়ে তো লাভ নাই।”

তরুণদের সঙ্গে ‘লেট’স টক’ অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “একদিন স্কুলে স্ট্রাইক করাতে গিয়ে দেখি, খুব লম্বা-চওড়া এক পুলিশ অফিসার; সে আমাকে ধমক দিচ্ছে।

আমরা গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে, যে কেউ যেতে পারবে না। তো খুব ধমক দিচ্ছে যে, তুমি জানো আমি কে? তোমাকে আমি জেলে নিতে পারি। আমি বললাম, জেলখানায় তো আমরা প্রতি ১৫ দিন পরপর যাই। আমাকে এই ভয় দেখিয়ে তো লাভ নাই। আমি তো জেলখানায় সবসময় যাই। ”

‘বলল সে, হ্যাঁ! তোমার নাম কী? আমি বললাম, “আমার নাম, বাবার নাম, হেড স্যার জানেন। তাকে জিজ্ঞাসা করে নিয়েন। ”

শেখ হাসিনা বলেন, “এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মেয়েরা ছিলো, তারা ইশারা দিয়ে আমাকে চলে আসতে বললো সেখান থেকে। ব্যস ওখান থেকে চলে আসলাম। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের বেড়া ফাঁক করে ওখান থেকে ঢুকে যেতাম। তখন বাস ছিলো মুড়ির টিনের মতো। তা সেরকম একটা গাড়িতে পুলিশ আমাদের ধাওয়া করছে। ওখান থেকে বের হয়ে পলাশি মোড় হয়ে, এখন যেটা জহরুল হক হলের ভিতর দিয়ে—ওয়াল টপকে ওখান থেকে আমরা রোকেয়া হলে ঢুকে গেলাম। ”

ঘণ্টি বাজিয়ে স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছিলাম
কৈশরের একটি মজার ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “ছোটবেলার একটা মজার ঘটনা বলি, ধর্মঘট চলছে তখন। আমরা ঠিক করলাম, স্কুল ছুটি দিতে হবে। তা এমনিতে তো আর দিবে না। হেড স্যারের রুমের পাশেই স্কুলের ঘণ্টিটা। এখন ঘণ্টিটা আমরা কিভাবে বাজাবো!”

“আমরা একটা মেয়েকে দায়িত্ব দিলাম ঘণ্টিটা বাজাবে, আরো কয়েকজনকে দায়িত্ব দিলাম দাড়োয়ান কিছু বোঝার আগেই গেটটা খুলে দেবে। যখন ঘণ্টি বাজাতে শুরু করলাম ছোট বাচ্চারা তারা সব ছুটে পালাতে শুরু করলো। তখন মজার বিষয় হলো বাচ্চারা ছুটছে তাদের ধরার জন্য শিক্ষকেরাও ছুটছে। আর তখন আমরা বের হয়ে চলে এলাম। স্কুল থেকে সবাই দৌড় দিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলাম সব। মিটিংয়ে গেলাম। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। ”

প্রধান শিক্ষক সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের হেডমাস্টার আবার ভীষণ কড়া ছিলেন। কাজী ওমর আলী সাহেব, আমি উনাকে দেখলে ভয়ে দৌড়ে পালাতাম। কিন্তু খুব আদরও করতেন, খুব ভালো শিক্ষক ছিলেন। মানে গাধা পিটিয়ে মানুষ করা বলে না, উনিও তেমন আমাদের গাধা পিটিয়ে মানুষ করতেন। ”

মায়ের কাছে দাবি আদায়ে হাঙ্গার স্ট্রাইক
মায়ের কাছে আবদার মেটানোর স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “একদিন মা হঠাৎ করে বললেন মিটিংয়ে যেতে পারবে না। আর মা যদি একটা কথা বলতেন তা অমান্য করে কিছু করা আমাদের সাধ্যে ছিলো না। মা দরজাও লাগাতেন না, গেটও লাগাতেন না। কিছু করতেন না। শুধু বলতেন যেতে পারবে না। আর আমাদের সেই শিক্ষা ছিলো, মা বললে শুনতে হবে। ”

“কিন্তু প্রতিবাদও তো করতে হবে। সুতরাং হাঙ্গার স্ট্রাইক। নাস্তা খাবো না, ভাত খাবো না, কিচ্ছু খাবো না। বসে বসে ভ্যা ভ্যা করে কান্না!”

বঙ্গবন্ধুকন্যা আরো বলেন, “আমার দাদা থাকলে খুব ভালো হতো। তিনি থাকা অবস্থায় এমন হলো, খুব জরুরি মিটিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে যেতেই হবে। মা বললেন, ‘না আজকে বের হতে পারবে না। ’ দাদা শুধু ডেকে মাকে বললেন, ‘দেখ, আমি তো কোনদিন আমার ছেলেকে মানা করিনি। আমি তো কোনদিন নিষেধ করিনি, তুমি নিষেধ করছো কেনো? ও যেতে চায়, যেতে দাও। ’ আমার মা আবার মুরুব্বিদের কথা খুব মেনে চলতেন। দাদা বলেছেন। মা আর কিছু বললেন না। যাও, দাদাকে পেয়েছো এখন যাও। ”

বাড়ির বড় মেয়ে ছিলাম, আলসেও ছিলাম খুব
’৭৫ পরবর্তী সংকটময় সময়ের তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “৭৫ পরবর্তী ৩-৪ বছর একটা অন্ধকার সময় ছিলো। বলা যায় একটা বাসায় বন্দি। সব জায়গায় যাবার সুযোগ ছিলো না। এমনকি নিজের পরিচয় দেবারও সুযোগ ছিলো না। একটা নামও দেওয়া ছিলো। ওই নামে আমাদের পরিচয়। নিজের পরিচয়টাও ছিলো না। তখন মনে হতো, জীবনের সবথেকে কম যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু নিয়েই চলব। সেখানে থেকে সংসারের প্রতিটি কাজ একে একে আমাদের শিখতে হলো, করতে হলো। করে করে শিখলাম। ”

বাবা-মায়ের সংসারের আদুরের জীবনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসলে বাড়ির বড় মেয়ে ছিলাম। আলসেও ছিলাম খুব। এমনও অনেক দিন গেছে, না খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম। আব্বা এসে ঘুম ভাঙিয়ে ভাত মাখিয়ে মুখে তুলে দিতেন। ”

“আমার খুব বদঅভ্যাস ছিলো বসে গল্পের বই পড়া আর গান শোনার। তখন মা এক কাপ চা বানিয়ে এনে দিতেন। নিজে খুব একটা বেশি কাজ করতাম না, আলসে ছিলাম এটা ঠিক। আর সেখান থেকে এমন একটা অবস্থায় পড়ে গেলাম, যে ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছু নিজেদের করতে হতো, করতাম। ”

তরুণদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর ১৯৭১ সালের গৃহবন্দি জীবন, ১৯৮১ সালের পর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ ও পরবর্তী সংগ্রামের জীবনের কথা উঠে আসে।

‘লেট’স টক ইউথ শেখ হাসিনা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো তরুণদের মুখোমুখি হন প্রধানমন্ত্রী। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থী, উদ্যোক্তা, তরুণ পেশাজীবী, অ্যাথলেটস, খেলোয়াড়, সংস্কৃতিকর্মীসহ দেড়শোর মতো তরুণ অংশ নেন।

তরুণদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী, শোনেন তরুণদের স্বপ্নের কথাও। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ডা. নুজহাত চৌধুরী।

আরো পড়ুন:
‘অবসরে নাতি-নাতনিদের সঙ্গে লুডু খেলি’
‘ইচ্ছা ছিলো প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হবো’
‘জীবনটাকে উৎসর্গ করেছি, রাতে ৫ ঘণ্টা ঘুমাই’

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
এমইউএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।