ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২২ বছরে পার্বত্য শান্তিচুক্তি, বাস্তবায়ন কতটুকু?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১৯
২২ বছরে পার্বত্য শান্তিচুক্তি, বাস্তবায়ন কতটুকু?

খাগড়াছড়ি: ০২ ডিসেম্বর (সোমবার)। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২২ বছরপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে আত্মনিয়ন্ত্রণাধীকার আন্দোলনের পর পাহাড়ে ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যেটি কিনা পাবর্ত্য শান্তিচুক্তি নামে বেশি পরিচিত।

ষাটের দশকে জলবিদ্যুতের জন্য কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় পাহাড়ে বাঙালি পুনর্বাসনসহ সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এরপর প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে চলে এই সশস্ত্র সংগ্রাম।

এতে অসংখ্য বাঙালি ও পাহাড়ি ক্ষতির শিকার হওয়া ছাড়াও সামগ্রিক উন্নয়নের মূল ধারা থেকে পিছিয়ে পড়েন পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দারা। পরে সশস্ত্র আন্দোলনের অবসান ঘটিয়ে শান্তি ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি ফেরাতে কয়েকটি সরকার শান্তি প্রক্রিয়া চালালেও তা ব্যর্থ হয়।

অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসেই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতির (শান্তিবাহিনী) সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করে। এর মধ্য দিয়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে পাহাড়ে। জীবনযাত্রায় আসে ব্যাপক পরিবর্তন। প্রত্যন্ত এলাকায় ছোঁয়া লাগে উন্নয়নের।

কিন্তু ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি না হওয়ায় পাহাড়ি-বাঙালির মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাস সেভাবে তৈরি হয়নি এখনও। এক কথায় পাহাড়ের নেতারা বাস্তবায়নে চুক্তির সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার বিরোধ ও হানাহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ পাহাড়িরা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ ২২ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে। যে কারণে পাহাড় আজও অশান্ত। ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আশার আলো ফোটাতে পারছে না। আমরা কমিশনের বিধিমালা অচিরেই প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। পরিপূর্ণভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা ওরফে জলেয়া বাংলানিউজকে বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের ২২ বছর লাগার কথা না। যেহেতু বর্তমান সরকারের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তাই আমরা আশা করি এই সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে চুক্তি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বাংলানিউজকে বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করে যেভাবে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, ঠিক তেমনভাবে বাস্তবায়ন করব। এর জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। এখন রাগ-ক্ষোভ, একে অপরকে দোষ না দিয়ে নিজেদের মধ্যে চুক্তি বাস্তবায়নে জোরালোভাবে কাজ করলে লক্ষ্য এগোবে।

চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকি ধারাগুলোও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি।

এদিকে, পার্বত্য চুক্তির ২২ বছর পূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে এমএন লারমা নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সংবাদ সম্মেলন করেছে। এ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে চুক্তির যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি ওঠে।

এদিকে, চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। রোববার (০১ ডিসেম্বর) বিকেল থেকে খাগড়াছড়ি টাউন হল প্রাঙ্গণে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী সম্প্রীতি মেলা।  

এছাড়া সোমবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের উদ্যোগে একটি র‍্যালি বের হবে। একইসঙ্গে ওইদিন সন্ধ্যায় স্টেডিয়াম মাঠে একটি কনসার্ট অনুষ্ঠিত হবে। এতে কণ্ঠশিল্পী মিনার, পুতুল, রাজীব, হিলস্টার মিউজিক্যাল গ্রুপ, অরণ্য দর্শক মাতাবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
এডি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।