ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মা-যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট, আটকা পড়েছে কার্গো জাহাজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৯
পদ্মা-যমুনায় নাব্যতা সঙ্কট, আটকা পড়েছে কার্গো জাহাজ আটকে পড়া কার্গো জাহাজ। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: পাবনায় পদ্মা-যমুনা নদীতে নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ফলে পণ্যবাহী জাহাজগুলো মাল নিয়ে নৌ-বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। মাঝ নদীতে আটকে পড়া জাহাজ থেকে লাইটারেজ করে রাসায়নিক সারসহ বিভিন্ন পণ্য বন্দরে আনা হচ্ছে। 

মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) পর্যন্ত কাজীরহাটের প্রায় ৩ কিলোমিটার ভাটিতে রাজধরদিয়া, চরশিবালয় ও নাকালিচরে পদ্মা-যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে প্রায় ১৯টি পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা ও ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় স্রোতের টানে বালু ভাটিতে গিয়ে ডুবোচরের সৃষ্টি করছে।

অপরদিকে নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দ্রুত ড্রেজিং শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

পাবনার কাজিরহাট ঘাট সূত্রে জানা গেছে, চট্রগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও মংলা বন্দর থেকে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে আসা এমভি জুয়েল, এমভি ফেয়ারি, ওটি আছিয়া বেগম, এমভি সুমাইয়া হোসেন, এমভি ফয়সাল, এমভি ফয়সাল, এমভি ফয়সাল-৮, এমভি ইব্রাহীম খলিল, জুয়েল, আল তায়েফ, এমভি আফিফা, এমভি ওয়ারিশ আহনাফ, সততা পরিবহন, মাজননী, বিসমিল্লাহ, আছিয়া পরিবহন, ভাই ভাই, আবু ছালেসহ ১৯টি ছোট-বড় জাহাজ রাজধরদিয়া, চরশিবালয় ও নাকালির চরের বিভিন্ন পয়েন্টে পদ্মা ও যমুনার ডুবোচরে আটকা পড়েছে। কার্গো জাহাজগুলো রাসায়নিক সার, কয়লা, গম ও চাল নিয়ে বাঘাবাড়ী নৌবন্দরে যাচ্ছিল।

এদিকে মোহনগঞ্জ থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১৫-১৬টি ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে বালু ব্যবসায়ীরা। এই অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে স্রোতের টানে বালু ভাটিতে গিয়ে ডুবোচরের সৃষ্টি হচ্ছে দাবি করে স্থানীয় বাসিন্দারা ও ব্যবসায়ীরা। আর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) যমুনা ও পদ্মা নদীতে সঠিকভাবে ড্রেজিং না করায় আটকে পড়া জাহাজের সংখ্য প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে।

বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-বাঘাবাড়ী নৌপথে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য মালামাল পরিবহনের একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মাধ্যম। এ নৌপথে জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার, রাসায়নিক সার ও বিভিন্ন পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচল করে। বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে উত্তরাঞ্চলে চাহিদার ৯০ ভাগ জ্বালানি তেল ও রাসায়নিক সার সরবরাহ করা হয়। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে বাঘাবাড়ী বন্দরের মাধ্যমে চাল ও গমসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। এ নৌপথের ৬টি পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বাঘাবাড়ী ট্রানজিট বাফার গুদাম সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৪টি বাফার গুদামে রাসায়নিক সার চাহিদার ৯০ ভাগ বাঘাবাড়ী বন্দর থেকে যোগান দেওয়া হয়। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা রাসায়নিক সার সড়ক পথে বাফার গুদামগুলোতে সরবরাহ করা হয়। যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটে বাফার গুদামগুলোতে আপদকালীন সারের মজুদ গড়ে তোলার কাজ চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিসিআইসি’র বগুড়া আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইরি-বোরো আবাদ মওসুমে উত্তরাঞ্চলে ১২ লাখ টন রাসায়নিক সারের প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনীয় সারের বেশির ভাগই বাঘাবাড়ী বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়। পরে সেখান থেকে সড়ক পথে বাফারগুদামে পাঠানো হয়। বাফারগুদামগুলোতে আপদকালীন সার মজুদ আছে দুই লাখ ২৫ হাজার টন। বাঘাবাড়ী নৌ-রুটে নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হওয়ায় আপদকালীন সার মজুদের কাজ কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানায়, রাসায়নিক সার ও পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের জন্য ১০ থেকে ১১ ফুট পানির গভীরতা প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে এ নৌপথে কোথাও কোথাও পানির গভীরতা রয়েছে ৮ থেকে ৯ ফুট। আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পানির স্তর কমে ৭ থেকে ৮ ফুট পর্যন্ত নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা। বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর থেকে দৌলতদিয়া পর্যন্ত নৌ-পথের চরসাফুল্লা, নাকালিয়া, নাকালী, রাজধরদিয়া, নগরবাড়ীসহ ৬টি পয়েন্টে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। গত সোমবার পর্যন্ত রাজধরদিয়া, চরশিবালয় ও নাকালী পয়েন্টে ডুবোচরে ১৯টি পণ্যবাহী জাহাজ আটকা পড়েছে।
 
বাঘাবাড়ী নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ ড্রেজিংয়ের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দরমুখী রাসায়নিক সারসহ অন্যান্য পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ লোড নিয়ে বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ড্রেজিং শুরু না করায় মারাত্মক আকার ধারণ করছে নাব্যতা সঙ্কট।

পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ এমভি বিজয়’র মাস্টার মো. জহির উদ্দিন স্বপন বাংলানিউজকে জানান, দৌলতদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌ-বন্দর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার নৌ-পথের ৬টি পয়েন্টে পানির গভীরতা কমে দাড়িয়েছে ৭ থেকে ৯ ফুট। সরু হয়ে গেছে নৌ-চ্যানেল। মোহনগঞ্জ, পেঁচাকোলা পয়েন্ট কার্গো জাহাজ চলাচলের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ পয়েন্টে দুটি জাহাজ পাশাপাশি চলাচল করতে পারছে না। ওই পয়েন্টে জেগে ওঠা চরের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন চ্যানেলটি আরও সরু হয়ে যাচ্ছে। এ পয়েন্টে দ্রুত ড্রেজিং না করা হলে পণ্যবাহী ও জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) বাঘাবাড়ী রিভারাইন অয়েল ডিপোর যমুনা কোম্পানির ম্যানেজার একেএম জাহিদ সরোয়ার বাংলানিউজকে জানান, বাঘাবাড়ীতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল কোম্পানির ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমান জ্বালানি তেল মজুদ রয়েচে। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল সঙ্কটের আশঙ্কা নেই। যমুনা ও পদ্মা নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা সঙ্কট নিরসনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।  

তিনি আরও জানান, প্রতিবছরই এ সময় দৌলোদিয়া থেকে বাঘাবাড়ী নৌ-পথে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দেয়। বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয় তাদের জানায়, বর্তমানে এ রুটে ৭ থেকে ৮ ফুট পানির গভীরতা রয়েছে। নৌ-চ্যানেল সচল রাখার জন্য যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে দ্রুত ড্রেজিং শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
ইউবি /এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।