ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি  

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি   নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে প্রজন্ম সংলাপ। ছবি: বাংলানিউজ

নোয়াখালী: নারীর প্রতি সহিংসতা ও হয়রানির মূল কারণ মানুষের বিকৃত মানসিকতা। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে না। এটি এখন একটি সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে।

আর এ সামাজিক ব্যাধি নিরাময়ে আমাদের প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হবে নারীর অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত উন্নয়ন এবং সামাজিক সচেতনতা।

একইসঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন জরুরি।    
 
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় আয়োজিত এক প্রজন্ম সংলাপে এসব কথা বলেন অতিথিরা।  

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ এবং পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (প্রাণ) যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে।

সুবর্ণচরে জনসচেতনতা তৈরি করা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নাগরিক সমাজ এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে সংবেদনশীল এবং তরুণ সমাজকে সচেতন করতে এবং তাদের অভিমত জানতে এ প্রজন্ম সংলাপের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন স্থানীয় সমাজকর্মী মাসুদ।  

তিনি বলেন, গত জুলাই মাসে ৬টি জাতীয় দৈনিক এবং স্থানীয় পত্রিকার সংবাদের ভিত্তিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ৭১টি সহিংসতা ঘটনার ১৫.৫ শতাংশই ঘটেছে সুবর্ণচরে।  

এছাড়া গেল মাসেও সুবর্ণচরে বিভিন্নভাবে বেশকিছু নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবং তা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। যা বিভিন্ন মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ঘটনা বন্ধে সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন।

প্রজন্ম সংলাপে উপস্থিত তরুণ সদস্যরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরেন। জানতে চান বাল্যবিয়ে বন্ধে করণীয় সম্পর্কে।  

তারা বলেন, শারীরিকভাবে সহিসংতা ছাড়াও পথে-ঘাটে চলার সময় নারীদের বিভিন্নভাবে অশ্লীল ভাষার মাধ্যমে হয়রানি করা হয়। আমাদের প্রত্যেককে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে এ ব্যাপারেও এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের সম্মান দিতে জানতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে যে, পোশাক নয়, নিচু মন-মানসিকতার কারণেই নারীর প্রতি সহিংসতা হয়।  

এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগগুলো আরও জোরদার করা দরকার। আইনের প্রয়োগের পাশাপাশি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটিগুলো সক্রিয় করার প্রয়োজন বলে মনে করে তরুণরা। আমরা চাই সবার সহযোগিতায় নারীবান্ধব হয়ে উঠবে নেয়াখালীর সুবর্ণচর।

এ প্রজন্ম সংলাপে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেন। এসময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে বলা হয়, নোয়াখালীতে এমনও এলাকা আছে যেখানে বাড়িতে যদি পুরুষ না থাকে তাহলে নারীরা সহিংসতা ও হয়রানির শিকার হন। এতেই প্রমাণিত হয় যে, আমাদের মানসিকতার সমস্যা রয়েছে।  

এছাড়া সহিংসতার শিকার নারীর অভিযোগ নেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রশাসনের অনিহা দেখা যায়। এমনকি রাজনৈতিক দৌরাত্ম্যও দেখা যায়। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে প্রশাসনের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।

সংলাপ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, বর্তমান প্রজন্ম নানা ধরনের সমস্যা ও সহিংসতার সম্মুখীন যেমন হচ্ছে, অন্যদিকে তাদের কাছেই রয়েছে সময়োপযোগী সমাধান।  

তিনি বলেন, সহিংসতা রোধের শুরু হতে হবে ঘর থেকেই। নারীর প্রতি আচরণ, শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান পারিবারিক শিক্ষার অংশ। আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে। নারীকে দেখতে হবে মানুষ হিসেবে।  

অপরদিকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সকল প্রকার অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।  

তিনি আরও বলেন, সমাজের সবক্ষেত্রে নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন খুবই জরুরি। এতে সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।         

বিশেষ অতিথি অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, আমাদের একে অপরকে মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে হবে। আমরা এখনও চিন্তা করি যে নারীর কাপড়ের কারণে সহিংসতা হয়। এমন চিন্তা করার এখন আর সময় নেই। এখন চিন্তা করতে হবে আমরা কেন এমন চিন্তা করি।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের শিকার নারীকেই আমরা দোষ দেই। পার পেয়ে যায় ধর্ষণকারী। ধর্ষণকারীকে আমরা গ্রহণ করি বলেই আমাদের এ অবস্থা। যারা হয়রানিমূলক আচরণ করেন তারা নিজেদের হীনমন্যতা লুকাতে এধরনের আচরণ করেন। এধরনের আচরণের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদের আহ্বান জানান তিনি।

এসময় আরও বক্তব্য রাখেন-নোয়াখালী জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খিসা, সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম ইবনল হাসান ইভেন, সৈকত সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মোনায়েম খান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা সুলতানা প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।