বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, যারাই মাঠে কাজ করবেন, তাদের সাফল্য অবশ্যই দৃশমান হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অফিসারদের সেই ধরনের ইনোভেটিভ আইডিয়া থাকতে হবে, পরিকল্পনা থাকতে হবে। চিন্তা চেতনা থাকতে হবে, দেশের প্রতি ভালবাসা থাকতে হবে। দেশের প্রতি কর্তব্যবোধ থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে আপনারা যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করেন, তখন মাথায় থাকতে হবে জনগণের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব রয়েছে। দেশের কল্যাণে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করবেন।
তিনি আরও বলেন, এটা মনে রাখতে হবে এই দেশ আমাদের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে। ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য আমি কী করে যাচ্ছি, সেটাও মাথায় থাকতে হবে।
প্রজাতন্ত্রের নবীন কর্মচারীদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে গেলে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে, মিতব্যয়ী হতে হবে, পরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে। যাতে উন্নয়নটা স্থায়ী হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে আমাদের, দেশের মালিক তো জনগণ। সংবিধানে আছে প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। সেই জনগণের জন্য আমাদের সমস্ত দায়িত্ব বোধ। সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগই আমরা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করি। … সেক্ষেত্রে আমি বলব নবীন কর্মকর্তা হিসেবে এই যে কষ্ট করে অর্জনটা করলাম। কারা ট্যাক্স দেয়, আমাদের দেশে মানুষ। কারা খাটে, আমার গরীব কৃষক, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ, তারাই তো খাটে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তাদের এই অর্থগুলো যথাযথভাবে দেশের উন্নয়নে যেন ব্যয় হয় এবং উন্নয়নটা যেন পরিকল্পিতভাবে হয়, মিতব্যয়ের সঙ্গে আমরা যেন আরও বেশি উন্নয়ন করতে পারি। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেবার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নিজেদের পরিবারের প্রতি যে দায়িত্ববোধ থাকবে, ঠিক সেই ভাবে নিজেদের দেশের মানুষের জন্যও সেই দায়িত্ববোধ থাকতে হবে। সে চিন্তা নিয়েই স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করবেন।
মাদক, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার যে অভিযান শুরু করেছে, সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, যেকোন কাজে সততাটা কিন্তু সবচেয়ে বড় শক্তি। সততার শক্তি অনেক বড়।
আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার সঙ্গে আত্মশুদ্ধ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে নবীন কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবসময় একটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে হবে। জাতির পিতা বলেছেন, প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে যেমন আত্মমর্যাদাবোধ থাকবে, তেমনি আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে এবং আত্মশুদ্ধিও করতে হবে।
ক্ষমতা ভোগের জন্য নয়, এটা দায়িত্ব, সে কথা সবাইকে স্মরণ করিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতাটা আমার দৃষ্টিতে ভোগের বিষয় না, এটা হচ্ছে একটা দায়িত্ব পালন করার বিষয়। দেশের মানুষের সেবা করার বিষয়। প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়ে এটাই ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমি সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না। কারণ জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমি মনে করি এটা আমার দায়িত্ব।
তিনি এও বলেন, আমি আজকে প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছি। আমি নিজেকে ঠিক ওই প্রধানমন্ত্রী মনে করি না। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করি। মন্ত্রিত্ব পাওয়া, প্রধানমন্ত্রিত্ব পাওয়ার অনেক সহজ পথও থাকে, কিন্তু সে পথ আমি কখনও অনুসরণ করি না। যেটা আমার বাবাও করেননি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর কাজী রওশন আক্তার।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রশিক্ষণ গ্রহণকারীদের হাতে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে ১১৩, ১১৪ ও ১১৫তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সনদ তুলে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯
এমইউএম/টিএ