বিজয় ছিনিয়ে আনতে যে বীর সন্তানেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়েছেন, সেসব শহীদদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করতে ৪৯তম বছরে পুরোপুরি প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
গত একমাস ধরে গণপূর্ত বিভাগের প্রায় ১শ’ শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে ১০৮ হেক্টর জমির ওপর দাঁড়িয়ে থাকা স্মৃতিসৌধটি নতুন রূপে সেজেছে।
নানা রঙের বাহারি ফুলের চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। চত্বরের সিঁড়ি ও নানা স্থাপনায় পড়েছে রং-তুলির আঁচড়। এসব কাজের সুবিধার্থে ও নিরাপত্তার কারণে ১২ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর শেষ প্রহর পর্যন্ত স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ পুরোপুরি শেষ। সৌধস্তম্ভের উঁচু চূড়া থেকে শুরু করে শহীদবেদি ও পায়ে চলার পথসহ পুরো এলাকা ধুয়ে-মুছে চকচকে করা হয়েছে। সৌধ ফটক থেকে বেদি পর্যন্ত হাঁটাপথের লাল ইটগুলোতে সাদা রঙের ছোঁয়া ছড়াচ্ছে শুভ্রতা। বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ ও সাদাসহ বিভিন্ন বর্ণের ফুল গাছের চারা।
ছেঁটে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলা হয়েছে সৌধ এলাকার শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো গাছ। আর সৌধ চত্বরের কৃত্রিম হ্রদগুলোতে ফুটে থাকা লাল শাপলা যেন জানান দিচ্ছে অকুতোভয় অর্জনের।
মহান বিজয়ের এই দিনে সকালে স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিন বাহিনীর প্রধান, বিরোধীদলীয় নেতা, বিদেশি কূটনীতিক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধের গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারীরা বাংলানিউজকে জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে শতাধিক কর্মচারী সৌধ এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করে সৌধস্তম্ভসহ পুরো এলাকা ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেছে। সৌধ প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হয়েছে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনিসহ বাহারি ফুল গাছের চারা। এছাড়া বিভিন্ন শোভা বর্ধনকারী গাছ ও ঘাস ছেঁটে ফেলাসহ আলোকবাতি স্থাপন করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দিনটিকে সামনে রেখে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সব কাজ শেষ করা হয়েছে। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) উদযাপনের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তত রয়েছে। সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে আগে থেকেই। তবে ১৬ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পর তা সবার জন্য খুলে যাবে।
নিরাপত্তা নিয়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন সরদার বাংলানিউজকে বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও এর আশপাশের এলাকাজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। সাভারের আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এজন্য জেলা পুলিশের পাশাপাশি কাজ করছে অন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
এসআরএস