বাবা সম্পর্কে এসএম আলমগীর বলেন, আমার বাবা এমএ সাঈদ কৃষি বিভাগে চাকরি করতেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
কান্না জড়িত কন্ঠে আলমগীর বলেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। তখন নগরীর ষষ্ঠীতলা এলাকার একটি বাড়িতে থাকতাম আমরা। একদিন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী আমাদের বাড়িতে এসে আমার চোখের সামনেই বাবাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। তখন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও ওনার কোনো হদিস পেলাম না। কিছু দিন পর রাজশাহীর শাহ মখদুম ইনস্টিটিউটের পিয়ন কাদের মিয়া এসে আমাদের জানালেন- আমার বাবাসহ ১৩ জনকে জোহা হলে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে কাদের মিয়াও ছিলেন। গুলি লাগার আগেই তিনি মাটিতে পড়ে যান। মরার ভান করেছিলেন। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ভেবেছে তিনি মারা গেছেন। তারপর সবাইকে গর্তে ফেলে দেয়। খান সেনারা চলে গেলে তিনি মরদেহভর্তি গর্ত থেকে পালিয়ে আসেন। জোহা হলের বধ্যভূমির শহীদদের নামের তালিকায় বাবার নাম রয়েছে।
বড়ই অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন এখন এসএম আলমগীর বাবলু। সংসার আর চলে না। চার ছেলে ও চার মেয়েকে নিয়ে চরম অভাব-অনটনে বাস তার। আগে রিকশা চালাতেন। শিরোইল বাস টার্মিনালের সামনের ফুটপাতে চা বিক্রি করেন এখন। মাঝে মাঝেই ফুটপাত উচ্ছেদ হয়। বেকার হয়ে পড়েন তখন।
নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে আলমগীর বলেন, ‘আমার নিজের ঘরবাড়ি নেই। মালদা কলোনিতে দুটি রুম ভাড়া নিয়ে বসবাস করি। প্রতিমাসে ভাড়া লাগে চার হাজার টাকা। স্টল চালিয়ে সংসারের খরচ জোগাড় হয় না। টাকার অভাবে সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। তারাও এখন আমার সঙ্গে ফুটপাতে চা বিক্রি করে। ’
অসহায় এ শহীদ পরিবার নিয়ে দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের নজরে আসলে তিনি শহীদ পরিবারটির বিষয়ে খোঁজ নেন। তিনি পরিবারটিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এছাড়া তাদের সাহায্যের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রতিমন্ত্রী তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ নিয়ে একটি স্ট্যাটাস লেখেন।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম লেখেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী এম এ সাঈদের পরিবারের অন্য সদস্যরা মোটামুটি ভালোই আছেন, সরকারি চাকরিও করেন। একজন সন্তানই বিভিন্ন কারণে তার সন্তানদের সেভাবে লালনপালন করতে পারেননি। ধন্যবাদ সেই সাংবাদিককে যিনি এটা আমাদের সামনে এনেছেন। হাসিনুর ইসলাম সজলকে (স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা) পাঠিয়েছিলাম, তার মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে।
‘স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে পরিবারের জন্য সঠিক কী কী করণীয় তা নির্ধারণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। লিটন ভাইকে (রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন) অনুরোধ করবো প্রাথমিকভাবে অস্থায়ী হলেও পরিবারের একজন সদস্যকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য। ইনশাআল্লাহ বাকিটা আমি দেখবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
এসএস/এইচএডি/