ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাকরি হারানো সেই মঈনুলই হতে চান প্রধান প্রকৌশলী!

শাহেদ ইরশাদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
চাকরি হারানো সেই মঈনুলই হতে চান প্রধান প্রকৌশলী!

ঢাকা: কর্মস্থলে প্রায় ১০ বছর অনুপস্থিত ও পদায়নকৃত স্থানে যোগদান না করায় চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হয়েছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেট্রোপলিটন জোন) ড. মঈনুল ইসলাম। পরবর্তী সময়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে আপিলের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পান তিনি। বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার দৌড়ে আছেন এ কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত অধিপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেনের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর।

সরকারের গ্রেড-১ পদে গণপূর্ত অধিপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসার সম্ভাব্য তালিকায় আছেন- গণপূর্ত ক্যাডারের ১৫তম ব্যাচের প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম, ড. মঈনুল ইসলাম, মোসলেহ উদ্দিন আহম্মেদ ও উৎপল কুমার দে।

জ্যেষ্ঠতার বিধান মোতাবেক কর্মজীবনে নিজ দপ্তর অথবা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলে আশরাফুল আলমকে পরবর্তী প্রধান প্রকৌশলী পদে পদায়নের কথা থাকলেও আলোচনায় উঠে এসেছে বরিশালের বাসিন্দা মইনুল ইসলামের প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার বিষয়টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যোগদানের সময়ই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন মঈনুল ইসলাম। ১৫তম ব্যাচের সহকারী প্রকৌশলীরা ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর যোগদান করলেও মঈনুল ইসলাম ৯ মাসে পর ১৯৯৬ সালের ১২ আগস্ট যোগদান করেন।

দেশের বিভিন্ন জেলায় উপবিভাগীয় এবং নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মঈনুল। সবশেষ গণপূর্ত অধিদপ্তর ঢাকা থেকে ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হলে সেখানেও যোগদান করেননি এ কর্মকর্তা।

এছাড়া ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। ৯ বছর ৮ মাস ২২ দিন অনুপস্থিত থাকায় এ প্রকৌশলীকে চাকরি থেকে চূড়ান্ত অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ে আপিলের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পান।

এছাড়া বিতর্কিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া ওরফে জিকে শামীমের কোম্পানি জিকে বির্ল্ডাসকে র‍্যাব সদর দপ্তর নির্মাণের পাইয়ে দেওয়া দরপত্র আহ্বানেও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে মঈনুলের বিরুদ্ধে।

চলতি বছরের নভেম্বর মাসে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে ২০১৮ সালের ৫ জুন র‍্যাব সদর দফতর নির্মাণ কাজের টেন্ডার নিষ্পত্তির চেয়ারম্যান ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্প ও বিশেষ প্রকল্পের (পিএনএসপি) বর্তমান কর্মকর্তা ড. মঈনুল ইসলাম।

প্রচলিত বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের দরপত্র গণপূর্তের ঢাকা সার্কেল-৩ থেকে আহ্বান ও তৎকালীন ঢাকা গণপূর্ত জোন থেকে মূল্যায়ন দেওয়ার কথা থাকলেও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মঈনুল ইসলাম অতিরিক্ত কমিশন আদায়ের জন্য গণপূর্তের সদর দফতর থেকে টেন্ডার আহ্বান করেন।

উত্তরায় র‍্যাবের হেডকোয়ার্টার নির্মাণে ৫৫০ কোটি টাকার কাজে সমান সমান অথবা কিছু কমে নেওয়ার কথা, সেখানে ১০ শতাংশ বেশিতে কাজ দিয়েছেন জি কে শামীমের প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সকে। এমনিভাবে সরকারের বড় অঙ্কের ক্ষতি করে নিজের পকেট ভারী করেছেন ড. মঈনুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ ভবন নির্মাণে ১৫০ কোটি টাকার প্রকল্প ৫ শতাংশ বেশিতে এক ঠিকাদারকে দিয়ে তার কাছ থেকে ১৩.৫ শতাংশ হারে ঘুষ নেন ড. মঈনুল ও তার সহযোগীরা।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আসবাবপত্র ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনায় লুটপাটের ঘটনায় জিকে বিল্ডার্স, সাজিন কন্সট্রাকশন ও মজিদ সন্স কন্সট্রাকশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও মঈনুল ইসলাম তদন্ত কমিটির প্রধান হওয়ায় অভিযোগ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে জিকে শামীমের জিকে বির্ল্ডাসকে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (মেট্রোপলিটন জোন) ড. মইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলাম উচ্চ শিক্ষা নিতে।

পদায়নকৃত স্থানে যোগদান না করার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বিষয়টি নিয়ে সাক্ষাতে কথা বলতে চান মঈনুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
এসই/এইচজে /এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।