ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ওরা লাল-সবুজ পতাকার ফেরিওয়ালা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
ওরা লাল-সবুজ পতাকার ফেরিওয়ালা ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন একজন বিক্রেতা। ছবি: আরিফ জাহান

বগুড়া: আল খলিফা ওরফে সুজন, এখনো শিশুকাল পেরোয়নি ছেলেটির। লাল-সবুজের পতাকার পট্টি মাথায় বাঁধা। হাতে রয়েছে একটা লাঠি। লাঠির সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত লাল-সবুজের পতাকা। একটি মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগও রয়েছে তার হাতে।

লাল-সবুজের পতাকাগুলো বিক্রি করতে করতে শহরের অলিগলি ছুটে চলছে এই শিশুটি। তারই ক্রেতা হলেন আশিক মোল্লা নামে এক মোটরসাইকেলচালক।

শিশুটির কাছে গিয়ে দাঁড় করালেন মোটরসাইকেল। পতাকা চাওয়াতেই একগাল হেঁসে দিলো শিশুটি। এরপর ওই মোটরসাইকেলচালকের হাতে একটি পতাকা ধরিয়ে দিলো শিশুটি। পছন্দের পতাকা হাতে পেয়ে একটু নেড়েচেড়ে দেখলেন তিনি। তারপর দরদাম করে শিশুর কাছ থেকে একটি পতাকা কিনলেন। পতাকা কিনছেন একজন ক্রেতা।  ছবি: আরিফ জাহানবয়স্ক আজাহার আলী বেরিয়েছেন লাল-সবুজের পতাকা বিক্রি করতে। পথচারী শরীফ আহাম্মেদ দেখছেন কোনোটি নেবেন। এ সময় একটি রিকশাযোগে শিশু আতিক বাবার সঙ্গে পতাকা কিনতে এসেছে।

শিশুটির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুইটি পতাকা কিনবে সে। নিজে একটি নেবে অন্যটি তার বোনকে দেবে।

ডিসেম্বর মানেই মহান বিজয়ের মাস। মাসটি প্রত্যেক বাঙালির জীবনে নানা কারণে স্মৃতিগাঁথা। মহান বিজয় দিবস পালনে সরকারি-আধাসরকারি, রাজনৈতিক, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ইতোমধ্যেই বিভিন্ন প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছেন একজন বিক্রেতা।  ছবি: আরিফ জাহানগ্রামাঞ্চলের মানুষও থেমে নেই। শহুরে মানুষের পাশাপাশি দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি প্রায় গুটিয়ে এনেছেন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষগুলো। আর এসব মানুষদের সঙ্গে অনেকটা পাল্লা দিয়ে ছুটছেন লাল-সবুজের পতাকা বিক্রেতারা।

শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাসহ আশ-পাশে বিভিন্ন এলাকার বিপণিবিতানে ঘুরে জাতীয় পতাকা বিকিকিনির এমনই দৃশ্য বাংলানিউজের ক্যামেরায় উঠে আসে।

হাটবাজার ও পাড়া-মহল্লা ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন লাল-সবুজের সেই ফেরিওয়ালারা।

জাতীয় পতাকা নিয়ে শহরের সাতমাথায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. সোহান। তিনি ফরিদপুর থেকে পতাকা বিক্রি করতে এই শহরে এসেছেন। পাইপের খুঁটির ফাঁকে ফাঁকে লাগিয়ে আকর্ষণীয়ভাবে সাজিয়ে রেখেছেন অসংখ্য পতাকা। ক্রেতা আসছেন পছন্দ করছেন আর পতাকা কিনছেন।

মো. সোহান বাংলানিউজকে জানান, ডিসেম্বর মাস শুরুর দিকে তিনি পতাকা বিক্রির উদ্দেশ্যে বগুড়া শহরে আসেন। তারা মোট আটজন বগুড়ায় এসেছে পতাকা বিক্রি করতে। এখানে একটি সস্তা আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। সারাদিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পতাকা বিক্রি করেন। বিকেল থেকে সাতমাথায় এসে ভ্রাম্যমাণ দোকান গড়েন।

পতাকা বিক্রেতা আনোয়ার, রফিক, ইসমাইল বাংলানিউজকে জানান, তুলনামূলক স্বল্প আয়ের মানুষগুলো তাদের কাছ থেকে পতাকা কিনে থাকেন। প্রত্যেক বছর বিজয়ের মাসে এই ব্যবসা করেন তারা। ৩০ থেকে ১৫০ টাকা দামের জাতীয় পতাকা পাওয়া যায় তাদের কাছে। ছোট আকারের পতাকাগুলো ১০ থেকে ২০ টাকা বিক্রি করেন তারা। বিজয় দিবসের আগের ও বিজয় দিবসের দিন তাদের মূল বেচা-বিক্রিটা হয় বলেও যোগ করেন এসব পতাকা বিক্রেতা।  

শহরের দোকানগুলোয় স্থায়ী ও মৌসুমী দর্জিরা জাতীয় পতাকা তৈরিতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।

দর্জি মালেক মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হাতে খুব কম সময় রয়েছে। তাই নতুন করে কোনো অর্ডার নেওয়ার সুযোগ নেই। আগের নেওয়া অর্ডারের জাতীয় পতাকাগুলো তৈরিতে দিনরাত এক করে কাজ করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৯
কেইউএ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।