‘ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলাধীন শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা’ প্রকল্পের আওতায় উদ্যোগটি আসছে। যার আওতায় নির্মিত হবে ওয়াকওয়ে, দৃষ্টিনন্দন সেতু, ভায়াডাক্ট, ওভারপাস, ফুটওভার ব্রিজ ও ইউলুপ।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ২৯০ কোটি ৯৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
প্রকল্পটির প্রস্তাবনা নিয়ে কয়েকবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এখন প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে বিশ্লেষণ করছে। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে প্রকল্পটি নিয়ে আরও স্টাডি করতে বলছে পরিকল্পনা কমিশন।
পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার অদূরে হাতিরঝিলের আদলে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। হাতিরঝিলের মতো দৃষ্টিনন্দন সবকিছুই থাকবে। আমরা প্রকল্পটি নিয়ে কয়েকটি সভা করেছি। কোন খাতে কত ব্যয় হবে প্রকল্পের সে বিষয়গুলো আরও দেখা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে শুভাঢ্যা খাল ও এর পাড় সুরক্ষা করা হবে। স্থানীয় জনগণের জন্য খালের পাড়ে বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হবে। খাল খনন, উন্নয়ন, সংরক্ষণের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যেভাবে হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি চলাচল করে সেভাবে।
প্রকল্পের আওতায় আরও থাকছে, ২২ হাজার ৬৭৩ মিটার ভাসমান পায়ে চলার পথ। আর এ খাতে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি টাকা। এছাড়া ৩৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয় করে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে, সেতু লাইটিং ও বিদ্যুতের কাজ করা হবে এখানে। সুয়ারেজ ও সৌর ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও স্লাশ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হবে ৩৮ কোটি টাকা ব্যয় করে।
পাশাপাশি ৬০ কোটি টাকা ব্যয় করে মাঠ, ঘাট, হাট ও সড়ক উন্নয়ন করা হবে। ৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে সেতু, পাইপ ড্রেন ও ভিউয়িং ডেক। সঙ্গে খাল পাড়ে কেনাকাটার জন্য থাকছে ছয়টি প্লাজা। যে খাতে ব্যয় হবে নয় কোটি টাকা। এছাড়াও প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৪৬ জন পরামর্শকের জন্য ব্যয় হবে দুই কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
খাল থেকে ১৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্লাশ অপসারণ করা হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবে ১৩ হাজার ৮৮৪ মিটার খাল থেকে স্লাশ (কাদা বা বর্জ্য) অপসারণের জন্য ২৩৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মিটার স্লাশ অপসারণের জন্য খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৯ হাজার টাকা। এছাড়া ২৬ হাজার মিটার মাটির বাঁধ নির্মাণের জন্য খরচ ধরা হয় ১৭ কোটি ৩১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি মিটার মাটির বাঁধ নির্মাণে খরচ পড়বে ৬৬ হাজার টাকা।
তিন হাজার ৪৫৫.৭৮ বর্গমিটার ঘাট নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছে ২৩ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি বর্গমিটারে খরচ পড়বে ৬৬ হাজার টাকা। পাশাপাশি খাল পুনঃখনন এবং এর উভয় পাড় উন্নয়ন-সুরক্ষার এ প্রকল্পে চেয়ারম্যান বাড়ি মাঠ উন্নয়নে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৩৪ হাজার এবং মোল্লারহাট সংস্কার ও সম্প্রসারণে ১৭ কোটি ৫৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা খরচের প্রস্তাব দিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এছাড়াও দুই কিলোমিটার পাড় সংরক্ষণে ৩৪ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। সঙ্গে থাকছে ৬১ দশমিক ৯৪ একর ভূমি অধিগ্রহণে ৩১৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকার ব্যয়।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান (পরিকল্পনা অনুবিভাগ) মন্টু কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনে সভা হয়েছে। তারা আরও স্টাডি করতে বলেছে। কীভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা যায়, কীভাবে খাল দখলমুক্ত করে বিনোদনকেন্দ্রে রূপ দেওয়া যায়, তা স্টাডি করা হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাল শুভাঢ্যা। এটি বুড়িগঙ্গা নদী থেকে যাত্রা শুরু করে কেরানীগঞ্জের ভেতর দিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে পড়েছে। এ খালে কঠিন ও তরল বর্জ্য নিক্ষেপসহ পাড়ে অবৈধভাবে বাড়িঘর, দোকানপাট, কলকারখানা ও উপাসানালয় গড়ে উঠেছে। ফলে এর প্রস্থ ও গভীরতা কমে গেছে। পাশাপাশি দূষিত হয়ে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২০
এমআইএস/টিএ