ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

স্বীকৃতি প্রাপ্ত ‘জামদানি’ এখন বিলুপ্তের পথে

শাকিল আহমেদ, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৯, ২০২১
স্বীকৃতি প্রাপ্ত ‘জামদানি’ এখন বিলুপ্তের পথে

ঢাকা: বাহারি নকশা ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে এখনও জামদানি শাড়ির কদর রয়েছে বেশ। দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বহু দেশেও রয়েছে এর চাহিদা।

দেশের সবচেয়ে বড় জামদানি পল্লী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের নোয়াপাড়া এলাকা।  

একসময় জামদানি পল্লী বললে রূপগঞ্জের নোয়াপাড়াকেই মানুষ চিনতো। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্পের অনেকটাই নেমেছে ধ্বস। দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে এই ঐতিহ্যবাহী পণ্যটি। আর কারিগররা জীবিকার তাগিদে ছুটছেন অন্য কোনো পেশায়।
.

মুঘল আমলে বাংলাদেশের মসলিন কাপড়ের বেশ কদর ছিল। কিন্তু এখন আর মসলিন কাপড় খুঁজে পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে মুঘল আমলে জামদানির ব্যাপক প্রসার ঘটে। জামদানি তৈরি হয় কার্পাস তুলা দিয়ে। আর এটি প্রস্তুতে ব্যবহার করা হয় সাধারণত ৭০-৮০ কাউন্টের সুতা। জামদানী বয়নের অতুলনীয় পদ্ধতির জন্য ইউনেস্কো এটিকে 'একটি অনন্য সাধারণ নির্বস্তুক সংস্কৃতিক ঐতিহ্য' (ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেইজ) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

সোমবার (৮ মার্চ) সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের জামদানি পল্লীতে ঘুরে দেখা যায়, জামদানির বাংলো অর্থাৎ জামদানি তৈরির ঘরে বাহারি রঙের রঙিন সুতা দিয়ে নানা রকম জামদানি শাড়ি তৈরি করছেন কারিগররা। তবে তারা সংখ্যায় কম। এক সময় এই নোয়াপাড়া জামদানির জন্যই বিখ্যাত ছিল। কিন্তু কালক্রমে এইসব জামদানি শিল্প অনেকটাই এখন বিলুপ্তির পথে বলে জানান কারিগররা। কারিগররা এখানে বুনেন- সুতির জামদানি, হাফ সিল্ক জামদানি, সিল্ক জামদানি যা সম্পূর্ণ হাতের বুননের জামদানি। প্রকৃতপক্ষে এটিই আসল জামদানি।

বর্তমান জামদানি শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত দেশের প্রায় আটষট্টি হাজারের বেশি মানুষ। দেশে জামদানি চাহিদা থাকার পরও ভালো নেই এ শিল্পের কারিগররা। বর্তমানে একজন জামদানি ব্যবসায়ী কারিগর সহজে পাওয়া যায় না, এজন্যই তাকে দাদন দিতে হয়। কমপক্ষে এক বছরের জন্য একজন কারিগর ও একজন সাগরেদ নিতে হলে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে হয়। তাতেও কারিগরের তেমন দেখা মেলে না। তাইতো অনেক জামদানি তৈরির ঘর খালি পড়ে আছে। নুরুল হক নামের এক জামদানি কারিগরের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মেলে। কারিগররা যে টাকা অগ্রিম নিয়ে থাকে সেগুলো সারা বছর কাজ করে পরিশোধ করে দেয়। কেউ কেউ আবার এ টাকা নিয়ে পালিয়েও যায়।

নুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই জামদানি তৈরির কাজ করছি। আমার আগে আমার বাবাও এ শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে জামদানির তেমন আর চাহিদা নেই। প্রতি শুক্রবার হাটবারের দিন আমাদের জামদানির হাট হয় সেখানে দুই তিনটা জামদানি শাড়ি নিয়ে যাই। এখন তেমন বিক্রি হয় না। দুই-একটা বিক্রি হলেও তেমন আর মূল্য পাই না।

নুরুল হক আরো বলেন, একসময় নোয়াপাড়া এলাকায় ঘরে ঘরে জামদানি শাড়ি তৈরি করা হতো বর্তমানে তা আর নাই। এ শিল্পের পাশাপাশি এই এলাকায় গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প কারখানা। বর্তমানে নোয়াপাড়া এলাকা শুধু জামদানি পল্লী বললে হবে না, জামদানির পাশাপাশি গড়ে উঠেছে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ও বিভিন্ন শিল্প কারখানা।

বাংলাদেশ সময়ছ ০৮১৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০২১
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad