ঢাকা: পড়াশোনা করলে আর কাজ করা যাবে না, এমন ধরনের মানসিকতা দূর করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো কাজই ছোট নয়, কাজকে সম্মান করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) ভিডিও কনফারেন্সে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘একজন কৃষকের ছেলে যখন বড় অফিসার হয়ে যায় তখন বাবার নামের পরিচয় দিতে তার লজ্জা হয়, এটা সত্যি খুব দুঃখজনক। খুব লজ্জাস্কর ব্যাপার। বরং সেই বাবাকে আরও বেশি সম্মান দেওয়া উচিত। যে বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানকে শিক্ষা দিয়ে বড় করেছে। তাকেই সব থেকে সম্মান দেওয়া উচিত। বরং তার সঙ্গে মাঠে নেমে মাঠে কাজ করা উচিত এবং তার শিক্ষা থেকেই কিন্তু আমাদের আরও অধিক ফসল ফলানো বা আরও কীভাবে কাজ করা যায়, সেটা দেখা উচিত। তাহলে সেটা প্রকৃত শিক্ষা হবে। ’
‘নিজে দুই পাতা পড়ে একটা ফুল প্যান্ট পরার পর আর মাঠে নামতে পারব না, এই মানসিক দৈন্য বাংলাদেশের মানুষের মাঝে থাকুক সেটা আমরা চাই না। সেটা আমরা দেখতে চাই না। এটা একটা মানসিক দীনতা, মানসিক দারিদ্র্য, অন্তত আমার দৃষ্টিতে। এটা যেন না থাকে। সমস্ত কাজকেই সম্মান দিতে হবে। ’
প্রতিটি ভালো কাজের একটা মর্যাদা আছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি ধন্যবাদ জানাই আমাদের শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেলকে। খুব চমৎকারভাবে সে বলেছে যে, কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা উচিত না। সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটা কাজের একটা মর্যাদা আছে। কাজকে সম্মান দিয়ে দেখা, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। ’
‘সেই শিক্ষাটাও আমাদের ছেলেমেয়েদের ছোটবেলা থেকেই দেখাতে হবে, নিজের কাজ নিজে করা বা নিজের কোনো কাজকে ছোট করে না দেখা। এই বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া দরকার। আমি মনে করি আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো আরও নজর দেওয়া দরকার। ’
ভবিষ্যতে নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে মন্তব্য করে তরুণ প্রজন্মকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো কাজ কেউ যদি না করে আমরা অচল হয়ে যাই। তবে ভবিষ্যতে এই দেশে এই অবস্থা থাকবে না। একজন বসে হুকুম দেবে, এই এক গ্লাস পানি দে তো, সেটা বলতে পারবে না। সে কাজের লোক পাবে না বাড়িতে। নিজের কাজ নিজে করে খেতে হবে। ’
‘এটা আমার ছোটবেলা থেকেই একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, বাংলাদেশে সমাজটাকে এমনভাবে গড়ে তোলা কেউ যেন আর কাউকে হুকুম দিতে না পারে, নিজের কাজ যেন নিজেরা করতে পারে। তবে করোনা অবশ্যই সেই শিক্ষাটা কিছুটা হলেও মানুষকে দিয়েছে। এটা হলো বাস্তবতা। কারণ তখন আর কাজের বুয়াও আসতে পারে নাই। নিজের কাজ নিজেই করতে হয়েছে। ’
নারী ও পুরুষ উভয়ের কাজকে সমানভাবে দেখতে হবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজটা করার সময় নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে করতে হবে। মহিলারা শুধু সংসারের কাজ করবে আর পুরুষরা সাহায্য করবে না, সেটা যেন না হয়। সবাইকে সব কাজ করতে হবে, পাশে থাকতে হবে। ছেলেমেয়েদেরও বাবা-মায়ের পাশে থাকতে হবে। সংসারের কাজে হাত দিতে হবে। মাকে সাহায্য করতে হবে। সেটাই প্রকৃত শিক্ষা। ’
এ সময় রসিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অনেক কথা বললাম, বুড়া মানুষ তো একটু বেশি কথা বলি। ’
করোনা সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি মাথায় রেখে অনলাইন শিক্ষা চালু রাখার নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের অনলাইনে শিক্ষাটা এটা চালু রাখতেই হবে। কারণ করোনা কখনো কমছে, কখনো বাড়ছে। আর আমরা সবসময় যেটা লক্ষ্য করেছি যে, শীতের পরপর এর প্রাদুর্ভাবটা আবার বেড়ে যায়। কাজেই এখন থেকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। যদি প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দেয়, স্কুলগুলি চালু রাখা সম্ভব হবে না। যে কারণে অনলাইনে শিক্ষাটা যাতে প্রত্যেক ঘরে ঘরে পৌঁছায়, সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। ’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল)।
আরও পড়ুন: একগাদা পাঠ্যবই পড়াই শিক্ষা নয়: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২১
এমইউএম/এমজেএফ